০৬:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

জেলেদের নৌকায় ডাকাতি,লুণ্ঠন ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত ০৫ জলদস্যু গ্রেফতার

  • মাসুদ রানাঃ
  • প্রকাশিত : ০৯:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
  • 50

সাম্প্রতিক সময়ে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে দূরবর্তী বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি দস্যুতার ঘটনা ঘটে। যেখানে দস্যুরা মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করে জেলেদের অপহরণ, লুণ্ঠন ও মুক্তিপণ দাবী করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া সুন্দরবনে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলিতে একজনের নিহতের ঘটনা ঘটে।

গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা হতে ভিকটিমরা তাদের সহকর্মীসহ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে গমণ করে।২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল ০৭ ঘটিকা হতে রাত ১০ ঘটিকার মধ্যে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী (বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) বঙ্গোপসাগরের তৎসংলগ্ন ৩০-৫০ কিঃ মিঃ অভ্যন্তরে অপহরণের স্বীকার হয়। ভিকটিমরা স্ব স্ব নৌকা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছিল। জলদস্যুরা ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি নৌকায় ডাকাতি করে। অতঃপর জলদস্যুরা ভিকটিমদের সহকর্মীদের মুক্তিপণের অর্থ জানিয়ে দিয়ে ভিকটিমদের নৌকাযোগে ফেরত পাঠায়। কিন্তু দস্যুরা ভিকটিমদের একটি নৌকা রেখে দেয়, যা ডাকাতির কাজে ব্যবহার করে। এছাড়া ভিকটিমদের নিকট হতে লুন্ঠনকৃত মাছ, জাল এবং তৈল ডাকাতদের নৌকার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইলসহ মূল মাঝি ও কয়েকজন সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিদের মোবাইল নম্বর হতে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ দিতে চাপ প্রয়োগ করে জলদস্যুরা।
বর্ণিত ঘটনাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক র‍্যাবের চতুর্মুখী উদ্যোগ নেয়। আভিযানিক ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।র‍্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ও সমুদ্রের নিকটবর্তী চরাঞ্চল যেমন; ডালচর, সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করে র‌্যাব। একপর্যায়ে র‍্যাবের গতিবিধি ও তৎপরতা আঁচ করতে পেরে গত ২৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখ অপহৃতদের নৌকায় রেখে ডাকাতরা চলে যায়। অতঃপর কিছুক্ষণ পরে ভিকটিমদেরকে ডাকাত সন্দেহে ঘিরে ফেলে হামলা চালানো হয়। মূলত উক্ত ডাকাতরা অন্যান্যদের নৌকাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে এসে এ হামলা চালিয়ে কৌশলে স্থান ত্যাগ করে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাবের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৮ এর আভিযানে গত ভোর রাতে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা এলাকা হতে উক্ত জলদস্যু দলের মূল সমন্বয়কারী মোঃ খলিল জমাদ্দার,মোঃ মাহাতাব পেদা,মোঃ জামাল আকন্দ,মোঃ মাছুম মানছুর খলিফা,মোঃ মিনাজ খাঁ’কে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃতরা জানায় ঘটনার প্রায় ১০/১২ দিন পূর্বে গলাচিপা খেয়াঘাটে সর্দারসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন ডাকাত সদস্য বর্ণিত ডাকাতির বিষয়টি চুড়ান্ত পরিকল্পনা করে। গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল ১১ঘটিকা গলাচিপার একটি রাইস মিলের পাশে গ্রেফতারকৃত ও অন্যান্য সাগরে গমনকারী জলদস্যু সদস্যরা মিলিত হয়। অতপর পরিকল্পনামাফিক গলাচিপা খেয়াঘাট হতে একটি ভাড়াকৃত নৌকা যোগে গভীর সমুদ্রে বলেশ্বর-পায়রা মোহনা হতে ৩০ কি.মি. দক্ষিণে যেয়ে এক এক করে সর্বমোট ০৭ টি নৌকায় ডাকাতি করে এবং ০৭ জনকে অপহরণ করে জীম্মি করে। লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে ভাড়াকৃত নৌকাযোগে প্রত্যাবর্তন করে গ্রেফতারকৃত খলিলের নিকট হস্তান্তর করে। গ্রেফতারকৃত খলিল উক্ত লুন্ঠিত মাছ মৎস ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত খলিল উক্ত দলের মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে থাকে। সে তালতলী, আমতলী, পটুয়াখালীতে দোকান পরিচালনার ছদ্মবেশে ডাকাতি কার্যক্রমের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকে।গ্রেফতাকৃত ডাকাত মাহাতাব পেদা, খলিল জমাদ্দার, জামাল আকন্দ, মাছুম মানছুর খলিফা, মিনাজ খাঁ স্ব-শরীরে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে ও ভিকটিমদের নির্যাতন করে । অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়ার পরেও র‌্যাব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে চলেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান,র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন ।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

বরিশালে পেশাদার সাংবাদিকদের ৩৫ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

জেলেদের নৌকায় ডাকাতি,লুণ্ঠন ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত ০৫ জলদস্যু গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৯:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে দূরবর্তী বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি দস্যুতার ঘটনা ঘটে। যেখানে দস্যুরা মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করে জেলেদের অপহরণ, লুণ্ঠন ও মুক্তিপণ দাবী করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া সুন্দরবনে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলিতে একজনের নিহতের ঘটনা ঘটে।

গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা হতে ভিকটিমরা তাদের সহকর্মীসহ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে গমণ করে।২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল ০৭ ঘটিকা হতে রাত ১০ ঘটিকার মধ্যে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী (বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) বঙ্গোপসাগরের তৎসংলগ্ন ৩০-৫০ কিঃ মিঃ অভ্যন্তরে অপহরণের স্বীকার হয়। ভিকটিমরা স্ব স্ব নৌকা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছিল। জলদস্যুরা ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি নৌকায় ডাকাতি করে। অতঃপর জলদস্যুরা ভিকটিমদের সহকর্মীদের মুক্তিপণের অর্থ জানিয়ে দিয়ে ভিকটিমদের নৌকাযোগে ফেরত পাঠায়। কিন্তু দস্যুরা ভিকটিমদের একটি নৌকা রেখে দেয়, যা ডাকাতির কাজে ব্যবহার করে। এছাড়া ভিকটিমদের নিকট হতে লুন্ঠনকৃত মাছ, জাল এবং তৈল ডাকাতদের নৌকার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইলসহ মূল মাঝি ও কয়েকজন সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিদের মোবাইল নম্বর হতে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ দিতে চাপ প্রয়োগ করে জলদস্যুরা।
বর্ণিত ঘটনাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক র‍্যাবের চতুর্মুখী উদ্যোগ নেয়। আভিযানিক ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।র‍্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ও সমুদ্রের নিকটবর্তী চরাঞ্চল যেমন; ডালচর, সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করে র‌্যাব। একপর্যায়ে র‍্যাবের গতিবিধি ও তৎপরতা আঁচ করতে পেরে গত ২৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখ অপহৃতদের নৌকায় রেখে ডাকাতরা চলে যায়। অতঃপর কিছুক্ষণ পরে ভিকটিমদেরকে ডাকাত সন্দেহে ঘিরে ফেলে হামলা চালানো হয়। মূলত উক্ত ডাকাতরা অন্যান্যদের নৌকাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে এসে এ হামলা চালিয়ে কৌশলে স্থান ত্যাগ করে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাবের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৮ এর আভিযানে গত ভোর রাতে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা এলাকা হতে উক্ত জলদস্যু দলের মূল সমন্বয়কারী মোঃ খলিল জমাদ্দার,মোঃ মাহাতাব পেদা,মোঃ জামাল আকন্দ,মোঃ মাছুম মানছুর খলিফা,মোঃ মিনাজ খাঁ’কে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃতরা জানায় ঘটনার প্রায় ১০/১২ দিন পূর্বে গলাচিপা খেয়াঘাটে সর্দারসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন ডাকাত সদস্য বর্ণিত ডাকাতির বিষয়টি চুড়ান্ত পরিকল্পনা করে। গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল ১১ঘটিকা গলাচিপার একটি রাইস মিলের পাশে গ্রেফতারকৃত ও অন্যান্য সাগরে গমনকারী জলদস্যু সদস্যরা মিলিত হয়। অতপর পরিকল্পনামাফিক গলাচিপা খেয়াঘাট হতে একটি ভাড়াকৃত নৌকা যোগে গভীর সমুদ্রে বলেশ্বর-পায়রা মোহনা হতে ৩০ কি.মি. দক্ষিণে যেয়ে এক এক করে সর্বমোট ০৭ টি নৌকায় ডাকাতি করে এবং ০৭ জনকে অপহরণ করে জীম্মি করে। লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে ভাড়াকৃত নৌকাযোগে প্রত্যাবর্তন করে গ্রেফতারকৃত খলিলের নিকট হস্তান্তর করে। গ্রেফতারকৃত খলিল উক্ত লুন্ঠিত মাছ মৎস ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত খলিল উক্ত দলের মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে থাকে। সে তালতলী, আমতলী, পটুয়াখালীতে দোকান পরিচালনার ছদ্মবেশে ডাকাতি কার্যক্রমের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকে।গ্রেফতাকৃত ডাকাত মাহাতাব পেদা, খলিল জমাদ্দার, জামাল আকন্দ, মাছুম মানছুর খলিফা, মিনাজ খাঁ স্ব-শরীরে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে ও ভিকটিমদের নির্যাতন করে । অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়ার পরেও র‌্যাব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে চলেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান,র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন ।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ