প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকুরীর শর্তাবলী) আইন-২০২২’ সাংবাদিকদের জন্য ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’। প্রস্তাবিত আইনের সংশোধনের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল ১১ টায়। আয়োজনে Justice for journalist. প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যম আইন সাংবাদিকদের জন্য কতটুকু ইতিবাচক জানার চেষ্টা করি। নাকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত সাংবাদিকদের জন্য আরেকটি সর্বনাশ উকি দিচ্ছে।
ইতিমধ্যে আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে,বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন ২০২২’ জাতীয় সংসদের উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা শংকা করছি প্রস্তাবিত আইনটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন পরবর্তী বিল আকারে পাস হলে সাংবাদিক সমাজে মহাসঙ্কটের সৃষ্টি হবে।প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইনে সবমিলিয়ে নতুন ৫৭টি ধারা সংযুক্ত হয়েছে তার মধ্যে ৩৭ টি ধারা সাংবাদিকদের পেশাগত মান মর্যাদা ক্ষুন্ন স্বার্থ পরিপন্থি করা হয়েছে। আইনের খসড়াটির উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
(১) প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইনে সাংবাদিকদের বিদ্যমান বা চলমান শ্রম আইনের সকল ধারা বাতিল করায় সুবিধা বঞ্চিত সাংবাদিকরা ন্যায় বিচার পাইতে শ্রম আদালতের শরনাপন্ন হতে পারবেন না।
(২) যেহেতু ফৌজদারি বা দেওয়ানী আদালতে সাংবাদিকদের চাকুরি,পাওনা সংক্রান্ত কোন আইন নাই হেতু ফৌজদারি ও দেওয়ানী আদালতেও সাংবাদিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো পথ খোলা থাকবে না।
(৩) প্রস্তাবিত আইনে সাংবাদিকদের বিচারিক কোন আদালত থাকছে না তার উপর বেতন, েগ্রচুয়াইটি বা যে কোন বিরোধ বিষয়ে ন্যায় বিচার পাইতে আদালতে যেতে হলে সরকার কতৃক বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে।
(৪) প্রস্তাবিত আইনে সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান শ্রম আইনের বিধিগুলো বাতিল করে সাংবাদিকদের সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি করতে বলা হয়েছে সেহেতু খসড়া আইনটি জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকদের জন্য বার্গেনিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করা ইউনিয়নগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
(৫) সম্প্রচার মাধ্যম সংবাদ বিভাগে কর্মরত ক্যামেরাপারসন বা ফটোসাংবাদিক বা চিত্র সাংবাদিকদের পদে সাংবাদিক হতে পরিবর্তন করে কলাকুশলী করা হয়েছে।
(৬) সাংবাদিকদের বিদ্যমান শ্রম আইনে ৬০ বছরে অবসরে যাওয়ার বিধি থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ৫৯ বছরে সাংবাদিকতা পেশায় অবসরে যাওয়ার বিধান করা হয়েছে।
(৭) সাংবাদিকদের বিদ্যমান শ্রম আইনে সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্টদের সপ্তাহে ৩৬ ঘন্টা কর্মকালীন সময় থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ৪২ ঘন্টা প্রস্তাব করা হয়েছে।
(৮) সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন থাকলেও এবং সাংবাদিকদের ২ দিন ছুটি দাবী থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ১ দিন করা হয়েছে এবং সাংবাদিকদের বিদ্যমান শ্রম আইনে সাংবাদিকদের সকল সুযোগ সুবিধা কাটসাট করে প্রস্তাবিত আইন তৈরী করা হয়েছে। কর্মরত সাংবাদিকদের সর্বস্তরে পেনশন, ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ মহার্ঘ ভাতাসহ মৌলিক দাবি থাকলেও বা দেশের চলমান ও বিদ্যমান আইনে সংস্করণে, পরিবর্তন /পরিমার্জন করে সাংবাদিক সমাজের জন্য আরও উন্নত টেকসই আইন প্রণয়নের দরকার থাকলেও সাংবাদিকদের বিদ্যমান আইনের সাথে মিল রেখে টিভি ও আনলাইনে কর্মরত সাংবাদিদের জন্য ব্রডকাষ্ট আইন করাসহ সাংবাদিকদের পেশা,সম্মান,স্টাটাস উন্নয়নে প্রেসকাউন্সিল আইন সংশোধন জরুরি থাকলেও সেটা না করে সাংবাদিকদের অনিশ্চিত ভবিঘ্যতের দিকে ঠেলে দিতে গণমাধ্যমকর্মী আইন (চাকুরীর শর্তাবলী-২০২২) করার উদ্যোগ আমাদের শংকিত করে তুলেছে। চলমান এ সংকটে সাংবাদিক সমাজ কিভাবে পরিত্রান পাইতে পারে বা এই সংকট দূর করা যায় সেজন্য সকলের অংশগ্রহনে পরামর্শমূলক একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী।
সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের এই বার্তাটি পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সকল সাংবাদিক সংগঠনকে যারযার অবস্থান থেকে কর্মসূচির ডাক দেয়ার সুপারিশ করছি।
লেখক:
মিজানুর রহমান মাসুদ: যুগ্ন সম্পাদক, আজকের বিজনেস বাংলাদেশ