০৯:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

চীনের কাছে সামরিক-অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া

ফিনান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের কাছ থেকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া। এফটির খবরে বলা হয়, ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য বেইজিংয়ের কাছে সামরিক রসদ চেয়েছে মস্কো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এফটি জানিয়েছে, আক্রমণ শুরুর পর থেকেই চীনের কাছে সরঞ্জাম চেয়ে অনুরোধ করে আসছে রাশিয়া। কর্মকর্তারা রাশিয়া কী ধরনের সরঞ্জাম চাইছে, তা উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীন সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে- এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের একটি আলাদা প্রতিবেদনেও মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, রাশিয়া নিজের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তাও চাইছে।

এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ হিসাবে তুলে ধরেছে এবং দেশটিতে রুশ আক্রমণের নিন্দা করেনি। সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান রোমে চীনা পররাষ্ট্র নীতির শীর্ষ কর্মকর্তা ইয়াং জিচির সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রোববার এনবিসির সঙ্গে আলাপের সময়, সুলিভান বলেছিলেন, চীন বা অন্য কোনো দেশ যাতে রাশিয়াকে তার অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে না পারে তা নিশ্চিত করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের লক্ষ্য যুদ্ধ ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে’ না দেওয়া: দূতাবাস

রাশিয়া চীনের কাছে সামরিক সাহায্য চেয়েছে- সংবাদমাধ্যমের এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ যাতে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়’ তা নিশ্চিত করতে চায় বেইজিং।

দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গ্যুকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক।’ তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সংঘাতময় পরিস্থিতি যাতে না বাড়ে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তা নিশ্চিত করা।’

এর আগে রোববার ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এবং অন্যান্য কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধে সহায়তার জন্য চীনের সামরিক সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহায়তাও চেয়ে পাঠিয়েছে।

এসব প্রতিবেদন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, মুখপাত্র বলেন, তিনি ‘এরকম কিছু তিনি শোনেননি।’

মার্কিন কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, চীন যদি রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করার পদক্ষেপ নেয় তবে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।

যুদ্ধের ১৮তম দিনে যা যা ঘটেছে

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১৮তম দিন রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইয়াভোরিভের একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।

প্রাণঘাতী এই হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে এবং আরো ১৩৪ জন আহত হয়েছে। হামলাটি ন্যাটো সদস্য দেশ পোল্যান্ডের কাছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং পয়েন্টের ঘটেছিল।

হামলার পরের ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছে এবং বিবিসি তা যাচাই করেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে একটি বিশাল গর্ত এবং কাছাকাছি একটি ভবনে আগুন থেকে ধোঁয়া উড়ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন, কীভাবে ‘রাতের আকাশ লাল হয়ে গেছে।’ এ হামলার কারণে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে যে এখনো পর্যন্ত পশ্চিমের শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে এই সংঘাত শীঘ্রই ছড়িয়ে পড়বে।

মার্কিন সাংবাদিক নিহত

রাজধানী কিয়েভের বাইরের লড়াই চলছে এবং ইরপিন শহরে একজন মার্কিন সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহত ব্রেন্ট রেনৌড ৫০ বছর বয়সী একজন সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। তিনি এর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য কাজ করেছেন, যদিও তিনি ইউক্রেনে পেশাগত কাজে দায়িত্ব পালন করছিলেন না।

কিয়েভের পুলিশপ্রধান আন্দ্রি নেবিতোভ বলেছেন, রাশিয়ান সৈন্যরা তাকে টার্গেট করেছিল। আহত আরও দুই সাংবাদিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটি ইউক্রেনের যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করছিলেন এমন একজন বিদেশি সাংবাদিকের প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।

সামরিক বাহিনীতে কিশোর যোদ্ধা

বিবিসির জেরেমি বোয়েন রাজধানীর ভেতরে কিশোরদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করার জন্য কিয়েভের একটি কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

তাদের বেশিরভাগই কৈশোরের পার হওয়ার মুখে। স্কুল পেরিয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। তারা আমাদের প্রতিবেদককে বলেছিল যে, তিন দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরে তারা সম্মুখ যুদ্ধে বা এটির খুব কাছাকাছি যাবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাঁটুতে প্যাড পরা ছিল, যা দেখতে খুব ছোট ছিল। কয়েকজনের কাছে স্লিপিং ব্যাগ ছিল। একজনের কাছে যোগ ব্যায়ামের মাদুর ছিল।

১৮ বছর বয়সী দিমিত্রো তাকে বলেছিলেন, ‘আমি কিছুটা ভয় পাচ্ছি, কারণ কেউ মরতে চায় না, এমনকি তা আপনার দেশের জন্য হলেও। সুতরাং, মৃত্যু আমাদের জন্য কোনো বিকল্প নয়।’

যুক্তরাজ্যের শরণার্থী প্রকল্প

যুক্তরাজ্যের গৃহায়নমন্ত্রী ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের থাকার জন্য নকশা করা একটি প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন।

হোমস ফর ইউক্রেন প্ল্যানের অধীনে, যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা ইউক্রেনের একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারকে ভাড়া না নিয়ে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য তাদের সাথে, বা তাদের অন্য সম্পত্তিতে থাকার জন্য মনোনীত করতে পারবে। স্পন্সর হতে আগ্রহীদের জন্য একটি ওয়েবসাইট সোমবার থেকে চালু হবে। এই প্রকল্পের অধীনে ইউক্রেনীয়দের কাজ করার এবং পাবলিক পরিষেবা পাওয়ার অনুমোদনসহ তিন বছরের জন্য থাকার অনুমোদন দেওয়া হবে। স্পন্সররা প্রতি মাসে ধন্যবাদ হিসেবে ৩৫০ পাউন্ডের এর একটি কুপন পাবেন।

পরিকল্পনার সমালোচকরা বলছেন যে, এটি যথেষ্ট নয়। রেড কার্পেটে, অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি একজন শরণার্থী নেবেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে যা করতে হবে তা হল শরণার্থী সঙ্কট যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা, পুতিন শাসনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা, আমরা যে কোনো উপায়ে সাহায্য করা চালিয়ে যেতে পারি। হোক তা অনুদান বা শরণার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে, এটাই আমি করতে চাইছি- এবং করেছি।’

রাশিয়ার জনগণের দেশত্যাগ

একজন রাশিয়ান অর্থনীতিবিদের অনুমান অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই লাখ রাশিয়ান তাদের দেশ ছেড়েছে।

ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা রাশিয়ান ফ্লাইটের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই তারা সেসব দেশে যাচ্ছে যেখানে ফ্লাইট এখনও অনুমোদিত এবং যেখানে ভিসার প্রয়োজন নেই, যেমন তুরস্ক, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ ককেশাস। অনেকেই আর্মেনিয়ায় পালিয়ে গেছে।

বিবিসির রায়হান ডেমিট্রি প্রতিবেশী জর্জিয়ায় আসা রাশিয়ানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেককে তাদের সুটকেস এবং প্রায়শই তাদের পোষা প্রাণী নিয়ে রাজধানী তিব্লিসির চারপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

২৩ বছর বয়সী রাজনীতির স্নাতক ইয়েভজেনি তাকে বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে কাজ করার সর্বোত্তম উপায় হবে রাশিয়া থেকে আমার দেশত্যাগ।’

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনীয়দের সাহায্য করার জন্য আমার সাধ্যের সব টুকু করাটা আমার দায়িত্ব।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

স্বামীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আপসহীন নেত্রী

চীনের কাছে সামরিক-অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া

প্রকাশিত : ০১:০৩:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০২২

ফিনান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের কাছ থেকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া। এফটির খবরে বলা হয়, ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য বেইজিংয়ের কাছে সামরিক রসদ চেয়েছে মস্কো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এফটি জানিয়েছে, আক্রমণ শুরুর পর থেকেই চীনের কাছে সরঞ্জাম চেয়ে অনুরোধ করে আসছে রাশিয়া। কর্মকর্তারা রাশিয়া কী ধরনের সরঞ্জাম চাইছে, তা উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীন সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে- এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের একটি আলাদা প্রতিবেদনেও মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, রাশিয়া নিজের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তাও চাইছে।

এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ হিসাবে তুলে ধরেছে এবং দেশটিতে রুশ আক্রমণের নিন্দা করেনি। সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান রোমে চীনা পররাষ্ট্র নীতির শীর্ষ কর্মকর্তা ইয়াং জিচির সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রোববার এনবিসির সঙ্গে আলাপের সময়, সুলিভান বলেছিলেন, চীন বা অন্য কোনো দেশ যাতে রাশিয়াকে তার অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে না পারে তা নিশ্চিত করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের লক্ষ্য যুদ্ধ ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে’ না দেওয়া: দূতাবাস

রাশিয়া চীনের কাছে সামরিক সাহায্য চেয়েছে- সংবাদমাধ্যমের এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ যাতে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়’ তা নিশ্চিত করতে চায় বেইজিং।

দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গ্যুকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক।’ তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সংঘাতময় পরিস্থিতি যাতে না বাড়ে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তা নিশ্চিত করা।’

এর আগে রোববার ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এবং অন্যান্য কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধে সহায়তার জন্য চীনের সামরিক সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহায়তাও চেয়ে পাঠিয়েছে।

এসব প্রতিবেদন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, মুখপাত্র বলেন, তিনি ‘এরকম কিছু তিনি শোনেননি।’

মার্কিন কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, চীন যদি রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করার পদক্ষেপ নেয় তবে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।

যুদ্ধের ১৮তম দিনে যা যা ঘটেছে

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১৮তম দিন রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইয়াভোরিভের একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।

প্রাণঘাতী এই হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে এবং আরো ১৩৪ জন আহত হয়েছে। হামলাটি ন্যাটো সদস্য দেশ পোল্যান্ডের কাছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং পয়েন্টের ঘটেছিল।

হামলার পরের ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছে এবং বিবিসি তা যাচাই করেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে একটি বিশাল গর্ত এবং কাছাকাছি একটি ভবনে আগুন থেকে ধোঁয়া উড়ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন, কীভাবে ‘রাতের আকাশ লাল হয়ে গেছে।’ এ হামলার কারণে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে যে এখনো পর্যন্ত পশ্চিমের শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে এই সংঘাত শীঘ্রই ছড়িয়ে পড়বে।

মার্কিন সাংবাদিক নিহত

রাজধানী কিয়েভের বাইরের লড়াই চলছে এবং ইরপিন শহরে একজন মার্কিন সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহত ব্রেন্ট রেনৌড ৫০ বছর বয়সী একজন সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। তিনি এর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য কাজ করেছেন, যদিও তিনি ইউক্রেনে পেশাগত কাজে দায়িত্ব পালন করছিলেন না।

কিয়েভের পুলিশপ্রধান আন্দ্রি নেবিতোভ বলেছেন, রাশিয়ান সৈন্যরা তাকে টার্গেট করেছিল। আহত আরও দুই সাংবাদিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটি ইউক্রেনের যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করছিলেন এমন একজন বিদেশি সাংবাদিকের প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।

সামরিক বাহিনীতে কিশোর যোদ্ধা

বিবিসির জেরেমি বোয়েন রাজধানীর ভেতরে কিশোরদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করার জন্য কিয়েভের একটি কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

তাদের বেশিরভাগই কৈশোরের পার হওয়ার মুখে। স্কুল পেরিয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। তারা আমাদের প্রতিবেদককে বলেছিল যে, তিন দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরে তারা সম্মুখ যুদ্ধে বা এটির খুব কাছাকাছি যাবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাঁটুতে প্যাড পরা ছিল, যা দেখতে খুব ছোট ছিল। কয়েকজনের কাছে স্লিপিং ব্যাগ ছিল। একজনের কাছে যোগ ব্যায়ামের মাদুর ছিল।

১৮ বছর বয়সী দিমিত্রো তাকে বলেছিলেন, ‘আমি কিছুটা ভয় পাচ্ছি, কারণ কেউ মরতে চায় না, এমনকি তা আপনার দেশের জন্য হলেও। সুতরাং, মৃত্যু আমাদের জন্য কোনো বিকল্প নয়।’

যুক্তরাজ্যের শরণার্থী প্রকল্প

যুক্তরাজ্যের গৃহায়নমন্ত্রী ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের থাকার জন্য নকশা করা একটি প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন।

হোমস ফর ইউক্রেন প্ল্যানের অধীনে, যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা ইউক্রেনের একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারকে ভাড়া না নিয়ে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য তাদের সাথে, বা তাদের অন্য সম্পত্তিতে থাকার জন্য মনোনীত করতে পারবে। স্পন্সর হতে আগ্রহীদের জন্য একটি ওয়েবসাইট সোমবার থেকে চালু হবে। এই প্রকল্পের অধীনে ইউক্রেনীয়দের কাজ করার এবং পাবলিক পরিষেবা পাওয়ার অনুমোদনসহ তিন বছরের জন্য থাকার অনুমোদন দেওয়া হবে। স্পন্সররা প্রতি মাসে ধন্যবাদ হিসেবে ৩৫০ পাউন্ডের এর একটি কুপন পাবেন।

পরিকল্পনার সমালোচকরা বলছেন যে, এটি যথেষ্ট নয়। রেড কার্পেটে, অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি একজন শরণার্থী নেবেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে যা করতে হবে তা হল শরণার্থী সঙ্কট যতদিন থাকবে ততদিন আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা, পুতিন শাসনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা, আমরা যে কোনো উপায়ে সাহায্য করা চালিয়ে যেতে পারি। হোক তা অনুদান বা শরণার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে, এটাই আমি করতে চাইছি- এবং করেছি।’

রাশিয়ার জনগণের দেশত্যাগ

একজন রাশিয়ান অর্থনীতিবিদের অনুমান অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই লাখ রাশিয়ান তাদের দেশ ছেড়েছে।

ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা রাশিয়ান ফ্লাইটের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই তারা সেসব দেশে যাচ্ছে যেখানে ফ্লাইট এখনও অনুমোদিত এবং যেখানে ভিসার প্রয়োজন নেই, যেমন তুরস্ক, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ ককেশাস। অনেকেই আর্মেনিয়ায় পালিয়ে গেছে।

বিবিসির রায়হান ডেমিট্রি প্রতিবেশী জর্জিয়ায় আসা রাশিয়ানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেককে তাদের সুটকেস এবং প্রায়শই তাদের পোষা প্রাণী নিয়ে রাজধানী তিব্লিসির চারপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

২৩ বছর বয়সী রাজনীতির স্নাতক ইয়েভজেনি তাকে বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে কাজ করার সর্বোত্তম উপায় হবে রাশিয়া থেকে আমার দেশত্যাগ।’

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনীয়দের সাহায্য করার জন্য আমার সাধ্যের সব টুকু করাটা আমার দায়িত্ব।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ