০৭:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

অর্থের অভাবে শেষ দিনে আবেদন করে প্রথম বিসিএসেই এএসপি হলেন বিপ্লব

ইচ্ছে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কিন্তু সিজিপিএ খারাপ হওয়ায় বিসিএস পরীক্ষার আগ্রহ তৈরি। আর সেই আগ্রহ ও এক সময় অর্থের অভাবে নষ্ট হতে চলেছিলো। কারণ গ্রাজুয়েশন শেষ করে প্রথম বিসিএসের আবেদন করার টাকাটাও জোগাড় হচ্ছিলো না। অবশেষে আবেদনের শেষ দিন মায়ের কষ্টে জোগাড় হয় ৭০০ টাকা। এই ৭০০ টাকায় মা যে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এই অনুপ্রেরণাই আমার বিসিএস সাফল্যের বড় অনুপ্রেরণা বলতে পারেন। এভাবে নিজের স্বপ্ন জয়ের গল্প বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি)লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ৪০ তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত বিপ্লব কুমার দাশ। তার সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিক সাগর দে।

শুরুতেই আপনার শৈশব নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

ছোটবেলা থেকে মামা বাড়ি তে বেড়ে ওঠা। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ছোটবেলায় মামার বাড়িতে ছিলাম।পরবর্তীতে ৩য় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাড়িতে আসছিলাম। তারপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার করেছি। তবে শুরুটা অনেক সংগ্রামের ছিলো।

আপনার সংগ্রামের গল্প নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

সংগ্রামের পেছেন প্রধান সংকটের জায়গাটি ছিল আর্থিক সংকট।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আমি এবং বাবা মা দুজনই বেঁচে আছেন।

এটি কী আপনার প্রথম বিসিএস ছিল?

হ্যা প্রথম বিসিএস। তবে বিসিএসে এপ্লাই করতে পারবো কিনা সংশয় ছিলো কারণ এপ্লাইয়ের টাকাটা পর্যন্ত ছিলো না । শেষ দিনে এই টাকাটা আমার মা আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছিল।

বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রথম বিসিএসে অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এ বিষয় যদি কিছু বলতেন?

অনুভূতি টা অনেক গর্বের ও আনন্দের। আমার তো বিসিএস দেয়ার ইচ্ছা ছিল না আমার ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া কিন্তু রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে হতে পারি নি।

আমার বিভাগের পাশাপাশি অনেক বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তারপর সু্যােগ পাইলাম এপ্লাই করার এবং এপ্লাই করলাম।

আপনার বিসিএস এর স্বপ্ন কী এখান থেকেই শুরু যখন আপনি দেখলেন আপনার রেজাল্ট খারাপ আপনি টিচার হতে পারবেন না!

না তেমনটা না। যখন ২য় বর্ষে ছিলাম তখন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গণিত আর ইংরেজি বিষয় চর্চা করতাম।আমার বিভাগের পিংকি ম্যাম অংক প্র্যাকটিস করার জন্য বলতো আর মিজানুর রহমান স্যার ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং লেখা শিখাতো।আর সোনিয়া ম্যাম পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক গাইডলাইন দিয়েছেন। ডিপার্টমেন্ট এর অনেক শিক্ষকই আমাকে গাইডলাইন দিয়েছেন -নোমান মাহাবুব স্যার, মিজানুর রহমান স্যার, আজাদ স্যার, তানিয়া আফরিন ম্যাম,  হাসেম রেজা স্যার বিতান ম্যাম সহ অনেকে।

আপনার বিসিএস যাত্রার পর্বটা কেমন ছিলো?

আমি এপ্লাই করেছিলাম ২০১৮ র নভেম্বরের শেষের দিকে নির্দিষ্ট করে বললে নভেম্বরের ১৫ তারিখে। পরে প্রীলি হয়েছে ২০১৯ সালের মে মাসের ৩ তারিখ। তারপর ২০১৯ সালের জুলাই এর ২৫ তারিখ প্রীলির রেজাল্ট দিয়েছিল।তারপর যখন প্রীলিতে টিকলাম তখন প্রস্তুতি নিয়েছিলাম রিটেনের জন্য।

২০২০ সালে জানুয়ারির ১ম সপ্তাহে হয়েছিল রিটেন পরীক্ষা। এরপর রিটেনে দেখলাম সেখানেও পাশ করে গেছি। এরপর ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ট্রাই করলাম। পরবর্তীতে আমার ভাইবা ছিল ২০২১ সালের ২৩ শে মার্চ। এরপর একই বছরের ৩০ শে মার্চ রেজাল্ট দেয়। ফাইনালি টিকে গেলাম। ব্যাপার টা ভাবলেই ভালো লাগে এখন। কষ্ট সার্থক হয়েছে।

আপনার সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা কার?

সাফল্যের পিছনে মুলত যা বলা যায় তা হলো যখন দেখলাম ইকোনমিক্স ডিপার্ট্মেন্টের ম্যাম আশফাকুন নাহার ম্যাম ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেল ২৪ তম বিসিএসে। তারপর নিজের ডিপার্টমেন্টের সোনিয়া ম্যাম লেকচারার পদ ছেড়ে ট্যাক্স ক্যাডারে চলে গেল।আস্তে আস্তে উপলব্ধি করতিছিলাম বিসিএস ক্যাডার জিনিসটা আসলে কী!মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার পদ বিসিএস ক্যাডারের জন্য যাচ্ছে। এই জিনিসটা আমার কাছে ভালো লাগছে। এই বিষয়টাই মূলত আমার অনুপ্রেরণা ছিল।

আর যদি বলেন সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে ছিলো তাহলে বলবো মা! কারণ আবেদনের দিন যে ৭০০ টাকা দিয়ে এপ্লাই করা লাগে সেই টাকাটা পর্যন্ত আমার কাছে ছিল না। এই টাকাটা আমার মা আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছিল। সেই থেকে আমার বেশি অনুপ্রেরণা পাওয়া।

এছাড়াও আপনাকে বিসিএস বিষয়ে পরিবার থেকে এবং বন্ধু বান্ধব থেকে কোন অনুপ্রেরণা পেয়েছেন!

বন্ধুবান্ধব থেকে তেমন একটা সাপোর্ট পায় নাই আর পরিবারের দিক থেকে বড় কাকিমা অনেক সাহায্য করেছেন। বড় কাকিমা পাইকগাছা পৌরসভার প্যানেল মেয়র। এছাড়া বড় কাকিমার বড় মেয়ে সম্পর্কে আমার দিদি উনিও সাহায্য করেছেন।এছাড়া আমার দাদাবাবুও অনেক সাহায্য করেছেন।

আপনার যেহেতু আর্থিক সংকট ছিল ভার্সিটি আপনাকে কী ধরণের সহায়তা করেছেন?

পাইছি যথেষ্ট হেল্প পাইছি। প্রথম তনিয়া আফরিন তান্নি ম্যাম, নোমান স্যার, বিতান ম্যাম। এছাড়া সোনিয়া আফরিন ম্যামও অনেক হেল্পফুল ছিল।

আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আপনি যে আর্থিক সমস্যায় ভুগতিছিলেন এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পেছনে বিভাগের ম্যামরা তো তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন?

জী ম্যাডামরা তো অনেক সাহায্য করেছেন। এছাড়া আমি পাঁচ ছয়টা টিউশনি করতাম।

যাদের স্বপ্ন বিসিএস তাদের জন্য কী বলবেন?

আমার মতে যাদের স্বপ্ন বিসিএস তাদের প্রথম বর্ষ থেকেই লেগে পড়া উচিত। আর এখন যে সিলেবাস করেছে সেখানে বেশিরভাগ টপিক বিজ্ঞান ভিত্তিক হয়ে গেছে। সাইন্সের স্টুডেন্ট দের জন্য এটা অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট। আর যারা আর্টস কমার্স এর স্টুডেন্ট তাদের প্রথম বর্ষ থেকেই লেগে পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। তবে সিজিপিএ ভালো রাখতে হবে

বিসিএস এ কী সিজিপিএ ফ্যাক্ট?

অবশ্যই সিজিপিএ একটা বড় ভূমিকা রাখে। আপনার সিজিপিএ পর্যাপ্ত না হলে তো আপনি এপ্লাই ই করতে পারবেন না। থার্ড ক্লাস পেলে তো আপনি এপ্লাই করতে পারবে না। সেকেন্ড ক্লাস থেকে আপনি এপ্লাই করতে পারবেন।

নিজের ক্যাম্পাসের অনুজদের জন্য বিসিএস নিয়ে কী গাইডলাইন দিবেন?

আমার মতে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তাদের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি এবং বিজ্ঞান বিষয়গুলো চর্চা করা উচিত। বিশেষ করে বিজ্ঞানের ৯-১০ এবং উচ্চ মাধ্যমিক এর বইগুলো থেকে প্র্যাকটিস করা উচিত। এরপর অন্যান্য সাবজেক্ট পড়া উচিত।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভবিষ্যত পরিকল্পনা বলতে আমার ফরেন ক্যাডার বা এডমিন ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা আছে। ইতিমধ্যে আমি ৪১ তম বিসিএস এর প্রীলিতে টিকে আছি। আর ৪৩ এর প্রীলিমিনারি তে পাস করেছি।আর ৪৪ তম বিসিএস এ এপ্লাই করেছি।

আপনার কথা শুনে যতদূর বুঝলাম আপনার জীবনযুদ্ধে আর্থিক সংকটের বিষয়টি অনেক বড় বাধা ছিল! আপনি যেহেতু আর্থিক সমস্যায় ভুগেছিলেন এখন যেহেতু আপনি একটি ভালো অবস্থান চলে গেছেন। আপনার অবস্থান থেকে আর্থিক সংকটে পড়া ছেলেমেয়েদের জন্য কী করবেন?

অবশ্যই আমি যদি ব্যক্তিগত ভাবে একটি ভালো পর্যায়ে যেতে পারি অবশ্যই আমি তাদের জন্য কিছু করবো। শুধু তাদের জন্যই না দেশের জন্যও আমি খুব ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তো করবোই পাশাপাশি দেশের জন্য কিছু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :

অর্থের অভাবে শেষ দিনে আবেদন করে প্রথম বিসিএসেই এএসপি হলেন বিপ্লব

প্রকাশিত : ০৫:২২:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২

ইচ্ছে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কিন্তু সিজিপিএ খারাপ হওয়ায় বিসিএস পরীক্ষার আগ্রহ তৈরি। আর সেই আগ্রহ ও এক সময় অর্থের অভাবে নষ্ট হতে চলেছিলো। কারণ গ্রাজুয়েশন শেষ করে প্রথম বিসিএসের আবেদন করার টাকাটাও জোগাড় হচ্ছিলো না। অবশেষে আবেদনের শেষ দিন মায়ের কষ্টে জোগাড় হয় ৭০০ টাকা। এই ৭০০ টাকায় মা যে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এই অনুপ্রেরণাই আমার বিসিএস সাফল্যের বড় অনুপ্রেরণা বলতে পারেন। এভাবে নিজের স্বপ্ন জয়ের গল্প বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি)লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ৪০ তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত বিপ্লব কুমার দাশ। তার সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিক সাগর দে।

শুরুতেই আপনার শৈশব নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

ছোটবেলা থেকে মামা বাড়ি তে বেড়ে ওঠা। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ছোটবেলায় মামার বাড়িতে ছিলাম।পরবর্তীতে ৩য় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাড়িতে আসছিলাম। তারপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার করেছি। তবে শুরুটা অনেক সংগ্রামের ছিলো।

আপনার সংগ্রামের গল্প নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

সংগ্রামের পেছেন প্রধান সংকটের জায়গাটি ছিল আর্থিক সংকট।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আমি এবং বাবা মা দুজনই বেঁচে আছেন।

এটি কী আপনার প্রথম বিসিএস ছিল?

হ্যা প্রথম বিসিএস। তবে বিসিএসে এপ্লাই করতে পারবো কিনা সংশয় ছিলো কারণ এপ্লাইয়ের টাকাটা পর্যন্ত ছিলো না । শেষ দিনে এই টাকাটা আমার মা আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছিল।

বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রথম বিসিএসে অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এ বিষয় যদি কিছু বলতেন?

অনুভূতি টা অনেক গর্বের ও আনন্দের। আমার তো বিসিএস দেয়ার ইচ্ছা ছিল না আমার ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া কিন্তু রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে হতে পারি নি।

আমার বিভাগের পাশাপাশি অনেক বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তারপর সু্যােগ পাইলাম এপ্লাই করার এবং এপ্লাই করলাম।

আপনার বিসিএস এর স্বপ্ন কী এখান থেকেই শুরু যখন আপনি দেখলেন আপনার রেজাল্ট খারাপ আপনি টিচার হতে পারবেন না!

না তেমনটা না। যখন ২য় বর্ষে ছিলাম তখন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গণিত আর ইংরেজি বিষয় চর্চা করতাম।আমার বিভাগের পিংকি ম্যাম অংক প্র্যাকটিস করার জন্য বলতো আর মিজানুর রহমান স্যার ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং লেখা শিখাতো।আর সোনিয়া ম্যাম পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক গাইডলাইন দিয়েছেন। ডিপার্টমেন্ট এর অনেক শিক্ষকই আমাকে গাইডলাইন দিয়েছেন -নোমান মাহাবুব স্যার, মিজানুর রহমান স্যার, আজাদ স্যার, তানিয়া আফরিন ম্যাম,  হাসেম রেজা স্যার বিতান ম্যাম সহ অনেকে।

আপনার বিসিএস যাত্রার পর্বটা কেমন ছিলো?

আমি এপ্লাই করেছিলাম ২০১৮ র নভেম্বরের শেষের দিকে নির্দিষ্ট করে বললে নভেম্বরের ১৫ তারিখে। পরে প্রীলি হয়েছে ২০১৯ সালের মে মাসের ৩ তারিখ। তারপর ২০১৯ সালের জুলাই এর ২৫ তারিখ প্রীলির রেজাল্ট দিয়েছিল।তারপর যখন প্রীলিতে টিকলাম তখন প্রস্তুতি নিয়েছিলাম রিটেনের জন্য।

২০২০ সালে জানুয়ারির ১ম সপ্তাহে হয়েছিল রিটেন পরীক্ষা। এরপর রিটেনে দেখলাম সেখানেও পাশ করে গেছি। এরপর ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ট্রাই করলাম। পরবর্তীতে আমার ভাইবা ছিল ২০২১ সালের ২৩ শে মার্চ। এরপর একই বছরের ৩০ শে মার্চ রেজাল্ট দেয়। ফাইনালি টিকে গেলাম। ব্যাপার টা ভাবলেই ভালো লাগে এখন। কষ্ট সার্থক হয়েছে।

আপনার সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা কার?

সাফল্যের পিছনে মুলত যা বলা যায় তা হলো যখন দেখলাম ইকোনমিক্স ডিপার্ট্মেন্টের ম্যাম আশফাকুন নাহার ম্যাম ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেল ২৪ তম বিসিএসে। তারপর নিজের ডিপার্টমেন্টের সোনিয়া ম্যাম লেকচারার পদ ছেড়ে ট্যাক্স ক্যাডারে চলে গেল।আস্তে আস্তে উপলব্ধি করতিছিলাম বিসিএস ক্যাডার জিনিসটা আসলে কী!মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার পদ বিসিএস ক্যাডারের জন্য যাচ্ছে। এই জিনিসটা আমার কাছে ভালো লাগছে। এই বিষয়টাই মূলত আমার অনুপ্রেরণা ছিল।

আর যদি বলেন সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে ছিলো তাহলে বলবো মা! কারণ আবেদনের দিন যে ৭০০ টাকা দিয়ে এপ্লাই করা লাগে সেই টাকাটা পর্যন্ত আমার কাছে ছিল না। এই টাকাটা আমার মা আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছিল। সেই থেকে আমার বেশি অনুপ্রেরণা পাওয়া।

এছাড়াও আপনাকে বিসিএস বিষয়ে পরিবার থেকে এবং বন্ধু বান্ধব থেকে কোন অনুপ্রেরণা পেয়েছেন!

বন্ধুবান্ধব থেকে তেমন একটা সাপোর্ট পায় নাই আর পরিবারের দিক থেকে বড় কাকিমা অনেক সাহায্য করেছেন। বড় কাকিমা পাইকগাছা পৌরসভার প্যানেল মেয়র। এছাড়া বড় কাকিমার বড় মেয়ে সম্পর্কে আমার দিদি উনিও সাহায্য করেছেন।এছাড়া আমার দাদাবাবুও অনেক সাহায্য করেছেন।

আপনার যেহেতু আর্থিক সংকট ছিল ভার্সিটি আপনাকে কী ধরণের সহায়তা করেছেন?

পাইছি যথেষ্ট হেল্প পাইছি। প্রথম তনিয়া আফরিন তান্নি ম্যাম, নোমান স্যার, বিতান ম্যাম। এছাড়া সোনিয়া আফরিন ম্যামও অনেক হেল্পফুল ছিল।

আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আপনি যে আর্থিক সমস্যায় ভুগতিছিলেন এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পেছনে বিভাগের ম্যামরা তো তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন?

জী ম্যাডামরা তো অনেক সাহায্য করেছেন। এছাড়া আমি পাঁচ ছয়টা টিউশনি করতাম।

যাদের স্বপ্ন বিসিএস তাদের জন্য কী বলবেন?

আমার মতে যাদের স্বপ্ন বিসিএস তাদের প্রথম বর্ষ থেকেই লেগে পড়া উচিত। আর এখন যে সিলেবাস করেছে সেখানে বেশিরভাগ টপিক বিজ্ঞান ভিত্তিক হয়ে গেছে। সাইন্সের স্টুডেন্ট দের জন্য এটা অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট। আর যারা আর্টস কমার্স এর স্টুডেন্ট তাদের প্রথম বর্ষ থেকেই লেগে পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। তবে সিজিপিএ ভালো রাখতে হবে

বিসিএস এ কী সিজিপিএ ফ্যাক্ট?

অবশ্যই সিজিপিএ একটা বড় ভূমিকা রাখে। আপনার সিজিপিএ পর্যাপ্ত না হলে তো আপনি এপ্লাই ই করতে পারবেন না। থার্ড ক্লাস পেলে তো আপনি এপ্লাই করতে পারবে না। সেকেন্ড ক্লাস থেকে আপনি এপ্লাই করতে পারবেন।

নিজের ক্যাম্পাসের অনুজদের জন্য বিসিএস নিয়ে কী গাইডলাইন দিবেন?

আমার মতে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তাদের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি এবং বিজ্ঞান বিষয়গুলো চর্চা করা উচিত। বিশেষ করে বিজ্ঞানের ৯-১০ এবং উচ্চ মাধ্যমিক এর বইগুলো থেকে প্র্যাকটিস করা উচিত। এরপর অন্যান্য সাবজেক্ট পড়া উচিত।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভবিষ্যত পরিকল্পনা বলতে আমার ফরেন ক্যাডার বা এডমিন ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা আছে। ইতিমধ্যে আমি ৪১ তম বিসিএস এর প্রীলিতে টিকে আছি। আর ৪৩ এর প্রীলিমিনারি তে পাস করেছি।আর ৪৪ তম বিসিএস এ এপ্লাই করেছি।

আপনার কথা শুনে যতদূর বুঝলাম আপনার জীবনযুদ্ধে আর্থিক সংকটের বিষয়টি অনেক বড় বাধা ছিল! আপনি যেহেতু আর্থিক সমস্যায় ভুগেছিলেন এখন যেহেতু আপনি একটি ভালো অবস্থান চলে গেছেন। আপনার অবস্থান থেকে আর্থিক সংকটে পড়া ছেলেমেয়েদের জন্য কী করবেন?

অবশ্যই আমি যদি ব্যক্তিগত ভাবে একটি ভালো পর্যায়ে যেতে পারি অবশ্যই আমি তাদের জন্য কিছু করবো। শুধু তাদের জন্যই না দেশের জন্যও আমি খুব ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তো করবোই পাশাপাশি দেশের জন্য কিছু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর