০২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

কাঠমিস্ত্রি থেকে অস্ত্রের কারিগর, পাহাড়ে কারখানা

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। সেখানে অভিযান চালিয়ে আটটি ওয়ান শুটার গান, দুটি টু-টু পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ কারিগর জাকের উল্লাহকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকালে বাঁশখালীর জঙ্গল চাম্বল এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাকের উল্লাহ চাম্বল এলাকার বাসিন্দা। বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকের উল্লাহ জানান, কৃষক সেজে সাত থেকে আট বছর ধরে দুর্গম পাহাড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে অস্ত্র তৈরির কাজ করছিলো। তার সঙ্গে আরও ২-৩ জন অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করতো। তারা র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। প্রতি মাসে ২০-২৫টি অস্ত্র তৈরি করতো জাকের। একটি অস্ত্র তৈরির জন্য তারা অস্ত্রের ক্যাটাগরিভেদে ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। একটি অস্ত্র বিক্রি করে জাকেরুল পেতো সাত হাজার থেকে এক হাজার টাকা।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, অস্ত্র তৈরি থেকে বিক্রি পর্যন্ত তিনটি গ্রুপ কাজ করে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ ‘কারিগর’, যারা অস্ত্রগুলো তৈরি করে। তাদের কাজ দিতো এক শ্রেণির দালাল। এর বাইরে আরও একটি গ্রুপ আছে, যারা চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতা নিয়ে আসে। এর মধ্যে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচে কারিগররা অস্ত্র তৈরি করতো। পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে এসব অস্ত্র দালাল গ্রুপের কাছে সাত থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। এরপর দালাল গ্রুপ ক্রেতাদের কাছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে করতো।

 

এসব অস্ত্রের বড় ক্রেতা ছিল জলদস্যু বাহিনী। সাগরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে অস্ত্র ব্যবহার করছে জলদস্যুরা। ইয়াবা কারবারীরা ও ডাকাত দলের সদস্যরাও এসব অস্ত্র কেনে। মহাসড়ক ও বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িতরা এসব অস্ত্রের মূল ক্রেতা। তারা একটি নয়, একসঙ্গে লটে অর্ডার দিতো। একেকটি লটে পাঁচ থেকে ১০টি অস্ত্রের অর্ডার থাকে। কখনও আরও বেশি অর্ডার থাকে। ক্রেতারা যেসব অস্ত্রের চাহিদা দিতো সেভাবেই কারিগররা অস্ত্র তৈরি করে দিতো। একেকটি লটের অস্ত্র তৈরি করে দিতে পাঁচ থেকে ১৫ দিন সময় নিতো তারা।

র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, ‘গত মার্চে কক্সবাজারের পেকুয়া এলাকায় দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর আমরা গোয়েন্দা নজরদাড়ি বৃদ্ধি করি। গোয়েন্দা তথ্যে খবর পিই, বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়েও একটি অস্ত্রের কারখানা আছে। মঙ্গলবার র‍্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসেহ জাকের উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করতো। পরে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল ‘

গ্রেফতারের পর জাকের উল্লাহ জানান, তিনি এক সময় কৃষিকাজ করতেন। এরপর কাঠমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। কিন্তু এভাবে সংসার চলছিল না। এ কারণে অস্ত্র তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়েন। এতে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আরও একটি ঘটনা আছে বলে র‍্যাবকে জানিয়েছেন জাকের উল্লাহ। তিনি জানান, ৭-৮ বছর আগে তার বাবা ডাকাতদের হাতে খুন হয়েছিলেন। ডাকাতরা তার বাবার চোখে গুলি করে। সেখান থেকে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অস্ত্র তৈরির কাজে এসেছেন। 

অস্ত্র তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত আরও কয়েক জনের নাম বলেছেন জাকের। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, চট্টগ্রামে আর কোনও অস্ত্রের কারখানা আছে কি-না তা খুঁজে রেব করতে কাজ চলছে বলে জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক।

ট্যাগ :

কাঠমিস্ত্রি থেকে অস্ত্রের কারিগর, পাহাড়ে কারখানা

প্রকাশিত : ০৫:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। সেখানে অভিযান চালিয়ে আটটি ওয়ান শুটার গান, দুটি টু-টু পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ কারিগর জাকের উল্লাহকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকালে বাঁশখালীর জঙ্গল চাম্বল এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাকের উল্লাহ চাম্বল এলাকার বাসিন্দা। বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকের উল্লাহ জানান, কৃষক সেজে সাত থেকে আট বছর ধরে দুর্গম পাহাড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে অস্ত্র তৈরির কাজ করছিলো। তার সঙ্গে আরও ২-৩ জন অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করতো। তারা র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। প্রতি মাসে ২০-২৫টি অস্ত্র তৈরি করতো জাকের। একটি অস্ত্র তৈরির জন্য তারা অস্ত্রের ক্যাটাগরিভেদে ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। একটি অস্ত্র বিক্রি করে জাকেরুল পেতো সাত হাজার থেকে এক হাজার টাকা।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, অস্ত্র তৈরি থেকে বিক্রি পর্যন্ত তিনটি গ্রুপ কাজ করে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ ‘কারিগর’, যারা অস্ত্রগুলো তৈরি করে। তাদের কাজ দিতো এক শ্রেণির দালাল। এর বাইরে আরও একটি গ্রুপ আছে, যারা চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতা নিয়ে আসে। এর মধ্যে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচে কারিগররা অস্ত্র তৈরি করতো। পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে এসব অস্ত্র দালাল গ্রুপের কাছে সাত থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। এরপর দালাল গ্রুপ ক্রেতাদের কাছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে করতো।

 

এসব অস্ত্রের বড় ক্রেতা ছিল জলদস্যু বাহিনী। সাগরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে অস্ত্র ব্যবহার করছে জলদস্যুরা। ইয়াবা কারবারীরা ও ডাকাত দলের সদস্যরাও এসব অস্ত্র কেনে। মহাসড়ক ও বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িতরা এসব অস্ত্রের মূল ক্রেতা। তারা একটি নয়, একসঙ্গে লটে অর্ডার দিতো। একেকটি লটে পাঁচ থেকে ১০টি অস্ত্রের অর্ডার থাকে। কখনও আরও বেশি অর্ডার থাকে। ক্রেতারা যেসব অস্ত্রের চাহিদা দিতো সেভাবেই কারিগররা অস্ত্র তৈরি করে দিতো। একেকটি লটের অস্ত্র তৈরি করে দিতে পাঁচ থেকে ১৫ দিন সময় নিতো তারা।

র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, ‘গত মার্চে কক্সবাজারের পেকুয়া এলাকায় দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর আমরা গোয়েন্দা নজরদাড়ি বৃদ্ধি করি। গোয়েন্দা তথ্যে খবর পিই, বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়েও একটি অস্ত্রের কারখানা আছে। মঙ্গলবার র‍্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসেহ জাকের উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করতো। পরে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল ‘

গ্রেফতারের পর জাকের উল্লাহ জানান, তিনি এক সময় কৃষিকাজ করতেন। এরপর কাঠমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। কিন্তু এভাবে সংসার চলছিল না। এ কারণে অস্ত্র তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়েন। এতে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আরও একটি ঘটনা আছে বলে র‍্যাবকে জানিয়েছেন জাকের উল্লাহ। তিনি জানান, ৭-৮ বছর আগে তার বাবা ডাকাতদের হাতে খুন হয়েছিলেন। ডাকাতরা তার বাবার চোখে গুলি করে। সেখান থেকে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অস্ত্র তৈরির কাজে এসেছেন। 

অস্ত্র তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত আরও কয়েক জনের নাম বলেছেন জাকের। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, চট্টগ্রামে আর কোনও অস্ত্রের কারখানা আছে কি-না তা খুঁজে রেব করতে কাজ চলছে বলে জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক।