বিদ্যালয়ের একটিই মাত্র ভবন। জরাজীর্ণ ভবনটির ৩টি রুমের মধ্যে একটি ইতোমধ্যেই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। বাকি দুই রুমের অনেক জায়গায় ধরেছে ফাটল। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের রড-ইট। ফলে যেকোনও মুহূর্তে বাকি দুটি রুমটিও ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিকল্প হিসেবে রয়েছে একটি টিনশেড ঘর। যেটিতে ক্লাস করার সময় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে রুম কাঁদায় পরিণত হয়। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন করুণ দশা চিত্রের মাঝেও চলছে নিয়মিত পাঠদান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় ১৯৪৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় এবং ১৯৯২ সালে বিদ্যালয় ভবনটি তৈরি হয়। স্থানীয় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত পড়াশোনা করছে। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করেও কোনোও ব্যবস্থা না নেয়ায় ঝুঁকির মধ্যেই মূলভবনে পরিচালিত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। পিলার ও গ্রেটবিম গুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের একটি রুম ভেঙ্গে গেছে, বাকি দুইটি রুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের রড-ইট। পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ভবনের শ্রেণিকক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষা কর্মকর্তারা টিনশেড ঘরে পাঠদানের কথা বললেও সেখানের অবস্থাও খারাপ। এখানেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট অপর দুটি টিনশেড ঘর থাকলেও সেগুলোও বয়সের ভারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুলকার নাইম ও তাহিয়া খাতুন জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তাদের ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। ফলে পাঠদানের সময় শিক্ষকদের আলোচনায় তারা মনোযোগ দিতে পারছে না। শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে প্রায়ই নিচে পড়ে। ক্লাস শেষ করে স্যার চলে গেলেই আমরা ক্লাস থেকে বের হয়ে যাই। কেননা আমরা সব সময় ভয়ে থাকি যে কখন যেন ছাদের পলেস্তারা ভেঙে মাথায় পড়ে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বারবার তারা শিক্ষকদের অনুরোধ করেও কোন সমাধান পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে ক্লাস নেওয়া উচিত নয়। তারপরও ৮ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে পড়াতে হচ্ছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বিদ্যালয়ে ভয়ে আসে না। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোজাহীদ আলম সৈয়দ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আমাদের বিদ্যালয়টির অবস্থা জরাজীর্ণ। শ্রেণিকক্ষ পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একটি রুমতো আগেই ভেঙে গেছে। আর দুটি রুমের পলেস্তরা প্রায়ই ভেঙে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাথার উপর পড়ে। শিক্ষকদের বসার রুম ও ভবনটির বাইরের প্রায় সব স্থানের অবস্থা একই। ২০১৭ সালের দিকে আমার আগের প্রধান শিক্ষক থাকাকালিন সময়ে বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনেও সাড়া মেলেনি। তারপর ২০২০ সালের প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের প্রাচীর ভেঙে পুকুরে পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সেটি নির্মাণ করা করা হয়। সেই প্রাচীর আবার পুকুরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে কোনো সময় বড় কোনো দুঘর্টনা ঘটতে পারে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম জানান, বিদ্যালয় ভবনের সব কক্ষ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। শিক্ষার্থীরা সব সময় আতঙ্কিত থাকে। উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি হয়তো শিগগিরই নতুন ভবন বরাদ্দ পাবো। নতুন ভবন না পেলেও ভবনের ধ্বসে পড়া অংশ মেরামত করা হবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে বিয়য়টি আলোচনা করেছি। তারপর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যাবো। খুব দ্রুতই আপাতত ভবনটি ঠিক করে দেওয়ার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব