দু’পারে দু’উপজেলা, একপারে খুলনার পাইকগাছা অন্যপারে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা মাঝখানে বহমান কপোতাক্ষ নদ। দুই জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সেতু নির্মাণ শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের পাশাপাশি পাউবোর খামখেয়ালিপনায় মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। সেতু নির্মাণ বন্ধ হলেও নদের বুকে থেকে যায় ১৮টি পরিত্যক্ত পিলার।
কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত কপিলমুনি-কানাইদিয়া অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পরিত্যক্ত পিলারের কারণে খননকৃত নদে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ব্রিটিশ শাষনামল থেকে পোষণ করছিল আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু সাতক্ষীরা জেলাসদর হয়ে কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
সে সময় সেতু নির্মাণের জন্য কলকাতা স্ট্রেট ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকাও জমা রাখা হয়। কিন্তু সে সময় কিছু লোকের বিরোধিতা ও দেশ স্বাধীনের আগে তার ভারতে চলে যাওয়ায় কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় দুই জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের একপর্যায়ে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ওই সময় সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন হক অ্যাসোসিয়েট। কার্যাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল এর কার্যক্রম শুরু করে ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা হতে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা উত্তোলণ করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। ওই সময় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
একপর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে সেতু নির্মাণ বন্ধ হলে নদের বুক থেকে যায় ১৮টি পিলার। আর এই আংশিক কাজ শেষ হওয়া পিলারে পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে পলি জমে কপোতাক্ষের নাব্যতা হ্রাস পায়। মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ নদকে পুর্নজীবিত করতে কপোতাক্ষ পাড়ের দুই জনপদের লাখ লাখ মানুষ নদ খননের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কপোতাক্ষ খননের সময় অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পরিত্যক্ত পিলার অপসারণ না করেই খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফলে পিলারগুলোর কারণে একদিকে যেমন জোয়ার-ভাটায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে অন্যদিকে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। সর্বশেষ এবছর পলি মৌসুমের অনেক আগেই নদে পলির আগমন ঘটেছে এবং পিলারের কারণে নদের তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কপোতাক্ষ হারাবে তার নাব্যতা এবং আবারও জলাবদ্ধতার স্বীকার হবে ৫০ লাখের উর্ধ্বে কপোতাক্ষ পারের দুই জনপদের মানুষ। সবমিলিয়ে অবশেষে বহু প্রতিক্ষার কপোতাক্ষ নদে সেতু নির্মাণ শুরু হয়েও ২২ বছরে শেষ হলো না।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব