স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম আইন প্রণেতা ফয়ছল হোসেন চৌধুরী এম.বি.ই। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাজধানী এডিনবড়ার লোথিয়ান অঞ্চলের একটি আসনে জয় লাভ করেন। এই নির্বাচনে ক্ষমতাশীন এসএনপি ৬৪টি আসনে জয় লাভ করে, ৩১টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন লাভ করে কনজারভেটিভ পার্টি এবং ২২টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করে স্কটিশ লেবার পার্টি।
ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর এই জয় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে বৃটেনের মূলধারার রাজনীতিতে আরও দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে মনে করা হচ্ছে। স্কটল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশীরাও তাঁর বিজয়ে আনন্দিত ও গর্বিত। তাঁরা মনে করেন ছাত্র জীবনে মেধাবী ও তূখোর ক্রীড়াবীদ, পরবর্তীতে সফল ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক চৌধুরী সুষ্ঠু ও সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন।
স্কটিশ পার্লামেন্ট ও মাতৃভূমির প্রতি দ্বয়িত্ব ও ভালবাসাঃ
একজন বৃটিশ-বাংলাদেশী, স্কটিশ পার্লামেন্টে মেম্বর ফয়ছল হোসেন চৌধুরী, এমবিই মনে প্রাণে একজ খাঁটি বাংলাদেশপ্রেমি। মাতৃভূমির প্রতি রয়েছে তাঁর প্রাণের টান। স্কটিশ মূলধারায় বাংলাদেশী কমিউনিটির ভাবমূর্তি তুল ধরতে জনাব চৌধুরী সদা তৎপর। বাংলাদেশের বিশেষ দিনগুলিকে স্কটিশ পার্লামেন্টে পরিচিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব চৌধুরীর বিশেষ ভূমিকায় ২০০৯ সালে এডিনবড়া কাউন্সিলের অধিনে, স্কটল্যান্ডে প্রথমবারের মতো আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত হয়। এছাড়াও জনাব চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১২ সালে বাংলাদেশ সমিতি স্কটল্যান্ডের উদ্যোগে সর্বপ্রথম স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করা হয়।
জন্ম পরিচয়ঃ
ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর জন্ম বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ থানার বদরদি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম গোলাম রব্বানী ও মাতার নাম রোকেয়া চৌধুরী। মা বাবার সাথে তরুন বয়সে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন তিনি। প্রথমে ম্যানচেষ্টার ও পরবর্তিতে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবড়ায় বসবাস শুরু করেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে একজন ক্রীড়াবীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
বিশেষ করে ব্যাডমিন্ট খেলায় ছিল তাঁর তুখোর পারদর্শিতা। একই সাথে মামা ড. ওয়ালী তসরউদ্দিনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডে যুক্ত হন। বাবা গোলাম রব্বানী শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের বড় ছেলে হিসেবে তরুন বয়সেই বাবার ক্যাটারিং ব্যবসা ও সংসারের হাল ধরেন। এ সময়ে তিনি বৃটেনের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এডিনবড়ার সাউথ ইষ্ট আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত রেফারেন্ডাম অর্থাৎ বৃটেন থেকে আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার প্রক্রিয়ার বিরোধীতা করে একইভূত যুক্তরাজ্য (UNITED KINGDOM) এর পক্ষে ক্যাম্পেইন করেন এবং বাংলাদেশীজ ফর বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইনের সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেন।
করোনা মহামারিতে বিশেভ ভূমিকা পালন করেন ফয়সল হোসেন চৌধুরী। অভাবগ্রস্থ মাইনোরিটি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণে এক ব্যাতিক্রমি উদ্যোগ হাতে নেন। তাঁর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে এলরেক এর উদ্যোগে ‘ফুড সাপোর্ট‘ প্রকল্পের আওতায় প্রতি সপ্তাহে ৩০টি অসহায় পরিবারকে জরুরী খাবার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। স্থানীয় কমিউনিটিতে এ উদ্যোগ প্রশংশিত হয়।
সম্মামনা ও পুরস্কারঃ
বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৪ সালে বৃটেনের রাণী কর্তৃক সম্মানসূচক ‘মেম্বর অব বৃটিশ এম্পায়র‘ (এম.বি.ই) খেতাবে ভূষিত হন।
২০০৬ সালে বৃটেনের বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেল এস কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ডসহ নানা সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেন জনাব ফয়ছল হোসেন চৌধুরী।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ