০১:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

সাত মাস পর বশেমুরবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে দীর্ঘ ৭ মাস পর অসদুপায় অবলম্বনের কারণ দেখিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও আইন অনুষদের ডীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রাজিউর রহমান ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে তিনি ইচ্ছে কৃতভাবে সকল সাবজেক্টে ফেইল দেখিয়ে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন। কিন্তু বিভাগীয় সভাপতি মানসুররা খানমের বক্তব্যে মাত্র তিন সাবজেক্টে হুবহু কপি করে লেখার কথা উঠে এসেছে।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন আইন বিভাগের মাস্টার্সে (স্নাতকোত্তর) অধ্যয়নরত এম সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লা। তারা বিভিন্ন সময় তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এমন ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ পত্রে তারা জানান, গত ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী আমাদের মাস্টার্স ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং গত ১ সেপ্টেম্বর তারিখে এর ফলাফল প্রকাশিত হলে আমার ফলাফল অকৃতকার্য দেখানো হয়। এইবিষয়ে বিভাগে যোগাযোগ করা হলে অফিসিয়াল কোনো উত্তর দেয়নি।

পরবর্তীতে তাদের ২৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে চলমান সেমিস্টারের বহিষ্কার আদেশের চিঠি দেওয়া। এসময় এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ন আইন বহির্ভূত এবং তাদের বিরুদ্ধে অবিচার করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবচনার জন্য আবেদন জানিয়ে তারা আরও বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার রুমে বহিষ্কারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমারা সকলে নির্ধারিত আসনে বসে পরীক্ষা সম্পন্ন করি এবং পরীক্ষক উপস্থিত থাকা অবস্থায় কারো খাতা দেখে লেখা সম্ভব নয়। পরীক্ষক কখনো এইরকম অপ্রীতিকর অবস্থা দেখেননি। দীর্ঘ ৭ মাস পর প্রকাশিত ফলাফলে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার আইনসিদ্ধ নয় এবং এটা সম্পূর্ন ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। এসময় তারা যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কার আদেশ বাতিল করে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।

অভিযোগকারী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এম সাদিদ জানান, আমার অভিযোগ মূলত আমাদের ডীন মহোদয় ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে। শৃঙ্খলা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলছে তারা কিছু জানত না। একদিন আগেই বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। ড. রাজিউর রহমান স্যার যেহেতু শৃঙ্খলা বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি ৭ মাস পর গঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডে আমাদের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য দপ্তরসহ, উপ-রেজিস্ট্রার দপ্তর, শিক্ষক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে আমি আমি কোন প্রকারের অগ্রগতি দেখি নাই। তিনি আরও বলেন, ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয় তুমি দোষ স্বীকার করে নাও, তোমাকে আমরা ক্ষমা করব। কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল আমি কি দোষ করেছি যে, আমি দোষ স্বীকার করব? পরীক্ষা হলে আমি কোন অসাধুপায় গ্রহণ করিনি তাহলে যোগসাজশ বিষয়টা কি আমি বুঝিনা।আমার উপর শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার পরীক্ষা শেষ হবার ৭ মাস পরে মিথ্যা অভিযোগে আইন বহির্ভূতভাবে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি বিচার চাই এবং আমি চাই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার যেন আর কোনো শিক্ষার্থী না হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক মানসুরা খানম বলেন, পরীক্ষার সময় তাদের বহিষ্কার করা হয় নাই। কারণ ঐ সময় আমরা অপরাধটি দেখি নাই। কিন্তু যখন তাদের খাতা এক্সামিন করা হয় তখন ১ টি খাতাতে শতভাগ মিল পাওয়া যায়। তারপর তাদের অন্যান্য খাতাগুলো দেখি। মোটামুটি ৩ টি খাতাতে শতভাগ মিল। স্বাভাবিকভাবে এরকম তো কখনো হয় না শিক্ষক-ছাত্র আমরা সবাই জানি।

তিনি আরও জানান, বিভাগের কাছে মনে হয়েছে জিনিসটি নৈতিকতা বিরোধী বা জিনিসটি ঠিক হয় নাই। আমরা সেই মোতাবেক শৃঙ্খলা বোর্ডে তা পাঠিয়েছি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডের ক্ষমতা আছে বহিষ্কার করার।

এদিকে পরীক্ষা হলে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নিয়ে ধরা পড়েও আইন বিভাগের ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী শামস জেবিনকে কেন সেমিস্টার ধরে বহিষ্কার করা হয়নি জানতে চাইলে এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি বলেন, আমরা পরীক্ষার হলে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস এর অনুমতি দেই না। মানে ইলেকট্রনিক ওয়াচ থাকলে তা খুলে রাখতে বলি। উক্ত পরীক্ষার্থীর হাতে স্মার্ট ওয়াচ ছিল কিন্তু পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন ডকুমেন্টসই আমরা পাই নাই বা লেখা পাই নাই। তারপর তার কাছে ইলেকট্রনিক ওয়াচ ছিল কিন্তু ডকুমেন্টস না থাকায় এক সাবজেক্টে বহিষ্কার করা হয় কিন্তু পুরো সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয় নি। এদিকে পরীক্ষার হলের ইনভিজিলেটর ও আইন বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন কবির শামস জেবিনের বিষয়ে বলছেন ভিন্ন কথা।

শামস জেবিনের বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, পরীক্ষার সময় পায়ের উপর ইলেকট্রনিক ওয়াচ নিয়ে দেখে লেখছিলেন আইন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী শামস জেবিন। পরবর্তীতে আমি তাকে চার্জ করে তার থেকে ওয়াচ নেওয়ার সময় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে চেয়ারম্যানের সামনে তিনি ডকুমেন্টস সমূহ ডিলেট করে দেন। সাথে সাথে তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মানসুরা খানমের সাইনেই তাকে ওই সাবজেক্টে বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম জানান, ৭ মাস আগে (ফেব্রুয়ারি) শেষ হওয়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ২ জন শিক্ষার্থীর ১০টি খাতা এবং বহিষ্কারের সুপারিশ এর রেজুলেশন এর কপি ও চিঠি আইন বিভাগ থেকে দিয়েছে। দায়িত্ব অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডকে বিষয়টি অবগত করেছি মাত্র। এরপর শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিংয়ে আইন বিভাগের ডীন ড. রাজিউর রহমান বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে তিনি দুজনের খাতায় হুবহু মিল পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুই সেমিস্টার বহিষ্কার এর সুপারিশ করেন।

তিনি আরও জানান, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের চিঠি প্রেরণের সময় দেখতে পাই তাদের দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মাত্র এক সেমিস্টার বাকি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ ধরনের বহিষ্কার প্রদানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন নাই। এক্ষেত্রে ড. রাজিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা যেন পরবর্তী ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া সেমিস্টারে যাতে অংশ না নিতে পারে সেজন্য দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানান।

এবিষয়ে অভিযুক্ত আইন অনুষদের ডীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রাজিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি৷

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ওদের সাথে আলাপ হইছে৷ এটা তোমার ব্যাপার না৷ পরে এটা আলোচনা হবে৷ এখন না৷ আমি ক্যাম্পাসে এসে নেই৷

উল্লেখ, ২০১৯ সালে নম্বর টেম্পারিং, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র সরবরাহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আইন বিভাগের ডীন ড. রাজিউর রহমান ও মানসুরা খানমের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির তিন বছর পার হলেও মেলেনি কোন তদন্ত রিপোর্ট।

 

ট্যাগ :

সাত মাস পর বশেমুরবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

প্রকাশিত : ০৩:২৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে দীর্ঘ ৭ মাস পর অসদুপায় অবলম্বনের কারণ দেখিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও আইন অনুষদের ডীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রাজিউর রহমান ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে তিনি ইচ্ছে কৃতভাবে সকল সাবজেক্টে ফেইল দেখিয়ে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন। কিন্তু বিভাগীয় সভাপতি মানসুররা খানমের বক্তব্যে মাত্র তিন সাবজেক্টে হুবহু কপি করে লেখার কথা উঠে এসেছে।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন আইন বিভাগের মাস্টার্সে (স্নাতকোত্তর) অধ্যয়নরত এম সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লা। তারা বিভিন্ন সময় তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এমন ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ পত্রে তারা জানান, গত ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী আমাদের মাস্টার্স ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং গত ১ সেপ্টেম্বর তারিখে এর ফলাফল প্রকাশিত হলে আমার ফলাফল অকৃতকার্য দেখানো হয়। এইবিষয়ে বিভাগে যোগাযোগ করা হলে অফিসিয়াল কোনো উত্তর দেয়নি।

পরবর্তীতে তাদের ২৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে চলমান সেমিস্টারের বহিষ্কার আদেশের চিঠি দেওয়া। এসময় এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ন আইন বহির্ভূত এবং তাদের বিরুদ্ধে অবিচার করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবচনার জন্য আবেদন জানিয়ে তারা আরও বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার রুমে বহিষ্কারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমারা সকলে নির্ধারিত আসনে বসে পরীক্ষা সম্পন্ন করি এবং পরীক্ষক উপস্থিত থাকা অবস্থায় কারো খাতা দেখে লেখা সম্ভব নয়। পরীক্ষক কখনো এইরকম অপ্রীতিকর অবস্থা দেখেননি। দীর্ঘ ৭ মাস পর প্রকাশিত ফলাফলে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার আইনসিদ্ধ নয় এবং এটা সম্পূর্ন ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। এসময় তারা যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কার আদেশ বাতিল করে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।

অভিযোগকারী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এম সাদিদ জানান, আমার অভিযোগ মূলত আমাদের ডীন মহোদয় ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে। শৃঙ্খলা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলছে তারা কিছু জানত না। একদিন আগেই বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। ড. রাজিউর রহমান স্যার যেহেতু শৃঙ্খলা বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি ৭ মাস পর গঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডে আমাদের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য দপ্তরসহ, উপ-রেজিস্ট্রার দপ্তর, শিক্ষক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে আমি আমি কোন প্রকারের অগ্রগতি দেখি নাই। তিনি আরও বলেন, ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয় তুমি দোষ স্বীকার করে নাও, তোমাকে আমরা ক্ষমা করব। কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল আমি কি দোষ করেছি যে, আমি দোষ স্বীকার করব? পরীক্ষা হলে আমি কোন অসাধুপায় গ্রহণ করিনি তাহলে যোগসাজশ বিষয়টা কি আমি বুঝিনা।আমার উপর শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার পরীক্ষা শেষ হবার ৭ মাস পরে মিথ্যা অভিযোগে আইন বহির্ভূতভাবে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি বিচার চাই এবং আমি চাই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার যেন আর কোনো শিক্ষার্থী না হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক মানসুরা খানম বলেন, পরীক্ষার সময় তাদের বহিষ্কার করা হয় নাই। কারণ ঐ সময় আমরা অপরাধটি দেখি নাই। কিন্তু যখন তাদের খাতা এক্সামিন করা হয় তখন ১ টি খাতাতে শতভাগ মিল পাওয়া যায়। তারপর তাদের অন্যান্য খাতাগুলো দেখি। মোটামুটি ৩ টি খাতাতে শতভাগ মিল। স্বাভাবিকভাবে এরকম তো কখনো হয় না শিক্ষক-ছাত্র আমরা সবাই জানি।

তিনি আরও জানান, বিভাগের কাছে মনে হয়েছে জিনিসটি নৈতিকতা বিরোধী বা জিনিসটি ঠিক হয় নাই। আমরা সেই মোতাবেক শৃঙ্খলা বোর্ডে তা পাঠিয়েছি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডের ক্ষমতা আছে বহিষ্কার করার।

এদিকে পরীক্ষা হলে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নিয়ে ধরা পড়েও আইন বিভাগের ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী শামস জেবিনকে কেন সেমিস্টার ধরে বহিষ্কার করা হয়নি জানতে চাইলে এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি বলেন, আমরা পরীক্ষার হলে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস এর অনুমতি দেই না। মানে ইলেকট্রনিক ওয়াচ থাকলে তা খুলে রাখতে বলি। উক্ত পরীক্ষার্থীর হাতে স্মার্ট ওয়াচ ছিল কিন্তু পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন ডকুমেন্টসই আমরা পাই নাই বা লেখা পাই নাই। তারপর তার কাছে ইলেকট্রনিক ওয়াচ ছিল কিন্তু ডকুমেন্টস না থাকায় এক সাবজেক্টে বহিষ্কার করা হয় কিন্তু পুরো সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয় নি। এদিকে পরীক্ষার হলের ইনভিজিলেটর ও আইন বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন কবির শামস জেবিনের বিষয়ে বলছেন ভিন্ন কথা।

শামস জেবিনের বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, পরীক্ষার সময় পায়ের উপর ইলেকট্রনিক ওয়াচ নিয়ে দেখে লেখছিলেন আইন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী শামস জেবিন। পরবর্তীতে আমি তাকে চার্জ করে তার থেকে ওয়াচ নেওয়ার সময় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে চেয়ারম্যানের সামনে তিনি ডকুমেন্টস সমূহ ডিলেট করে দেন। সাথে সাথে তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মানসুরা খানমের সাইনেই তাকে ওই সাবজেক্টে বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম জানান, ৭ মাস আগে (ফেব্রুয়ারি) শেষ হওয়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ২ জন শিক্ষার্থীর ১০টি খাতা এবং বহিষ্কারের সুপারিশ এর রেজুলেশন এর কপি ও চিঠি আইন বিভাগ থেকে দিয়েছে। দায়িত্ব অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডকে বিষয়টি অবগত করেছি মাত্র। এরপর শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিংয়ে আইন বিভাগের ডীন ড. রাজিউর রহমান বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে তিনি দুজনের খাতায় হুবহু মিল পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুই সেমিস্টার বহিষ্কার এর সুপারিশ করেন।

তিনি আরও জানান, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের চিঠি প্রেরণের সময় দেখতে পাই তাদের দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মাত্র এক সেমিস্টার বাকি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ ধরনের বহিষ্কার প্রদানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন নাই। এক্ষেত্রে ড. রাজিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা যেন পরবর্তী ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া সেমিস্টারে যাতে অংশ না নিতে পারে সেজন্য দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানান।

এবিষয়ে অভিযুক্ত আইন অনুষদের ডীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রাজিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি৷

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ওদের সাথে আলাপ হইছে৷ এটা তোমার ব্যাপার না৷ পরে এটা আলোচনা হবে৷ এখন না৷ আমি ক্যাম্পাসে এসে নেই৷

উল্লেখ, ২০১৯ সালে নম্বর টেম্পারিং, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র সরবরাহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আইন বিভাগের ডীন ড. রাজিউর রহমান ও মানসুরা খানমের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির তিন বছর পার হলেও মেলেনি কোন তদন্ত রিপোর্ট।