০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মৎস্য আহরণে ছুটছে কক্সবাজারের জেলেরা

গত শুক্রবার ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। দীর্ঘ ২২ দিন পর আবারও পুনরায় মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন জেলেরা। তাই স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলেদের মনেও। তবে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি অনুদান না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক জেলে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৬ হাজার ১০৯ জন। তারমধ্যে সদর উপজেলা ৯৮৪৯ জন, চকরিয়া ৬০০৯ জন, মহেশখালী ১৬৬৪৪ জন, টেকনাফ ১০৮৮৩ জন, পেকুয়া ৫১০০ জন, উখিয়া ৩৮৯২ জন, রামু ২৭৭৩ জন এবং কুতুবদিয়া ১০৯৫৯ জন। এরমধ্যে ইলিশ শিকারি জেলে ২৭ হাজার ৯৬৫ জন। তাদের মধ্যে শুধু ইলিশ মাছ শিকারীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৬৫ জন।

সাধারণ ক্রেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে দেশের সর্বত্র নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সুফল মিলেছে ইলিশের উৎপাদনে। কিন্তু তাতে সাধারণ ক্রেতাদের কোন লাভ হয়নি। লাভ হয়েছে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের। তারা ক্ষেত্র বিশেষে মাছ ধরার ট্রলার কক্সবাজারে উপকূলে নোঙর না করে অন্যত্র নিয়ে যায়। যার ফলে আমরার কক্সবাজার জেলার মাছের দেশের মানুষ মাছ পায় না। এমনকি ইলিশের মৌসুমের সময়ও আমাদেরকে ছড়া দামে মাছ কিনে খেতে হয়। বিগত সময়ে ৬৫ দিন মাছ ধরার বন্ধ থাকলেও খোলার পর জেলার মানুষ সর্বনিন্ম ধরে মাছ কিনেছে ১২শ টাকা করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কক্সবাজারের মানুষকে এখন অর্ডার করে চাঁদপুর থেকে মাছ এনে খেতে হয়। অথচ আমরা কক্সবাজারের বেশিরভাগ মানুষ জেলে সম্প্রদায়ের। আমরা আশা করছি, এবারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশ আহরণ বাড়লে জেলেদের পাশাপাশি লাভবানও হচ্ছে কক্সবাজারের সাধারণ ক্রেতারা।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে মাছ ধরা বন্ধ থাকে দীর্ঘ ২২ দিন। ওই ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণও এ সময় নিষিদ্ধ। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের স্বার্থে এ সময় মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে অনেকে নোঙর তোলার চিন্তা-ভাবনা করছেন জেলেরা। কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের মোহনা ও ঘাটে নোঙর করা মাছ ধরার ট্রলার সাগরে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেশির ভাগ ট্রলারে জাল, রসদপাতি ও বরফ ভর্তি করে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন অনেক জেলেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা ফিশারিঘাটে নোঙর করে রাখা ছোট-বড় হাজারো ট্রলারের জেলেরা সাগরে যেতে ঘাটে পৌঁছেছেন। কক্সবাজার ফিশারি ঘাট এলাকার মোহাম্মদ ইয়াছিন নামের এক জেলে জানান, দীর্ঘ ২২ দিন পর আজ মধ্যরাতে (গতকাল বৃহস্পতিবার) শেষ হচ্ছে ইলিশ মাছ ধরার প্রজনন মৌসুম। এই ২২ দিন পর আশা করছি সাগরে ভাল মাছের প্রজনন হবে। কিন্তু এই ২২ দিন ছিল আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দিন। এই ২২ দিনে আমাদেরকে কোন মহলই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। এমনকি আমাদের সংসার চালানোর বিকল্প কোন ব্যবস্থা করেননি।

এদিকে বোট মালিকরা জানিয়েছেন, আশা করছি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আমরা সুফল পাবো। প্রস্তুতি নিচ্ছি সাগরে যাওয়ার। ইলিশের প্রজনন ভাল হলে কক্সবাজার সহ দেশের জন্য অনেক ভাল হবে। সবার চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় ইলিশ মাছ আমরা আহরণ করতে পারবো বলে আশা করছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান জানান, ইশিশসহ সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২২ দিন পর্যন্ত সাগরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এবার নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা উৎসাহ নিয়ে সাগরে মাছ শিকারের জন্য যাচ্ছে। আশা করছি জেলেরা সাগরে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ শিকার করে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ‍দিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মৎস্য আহরণে ছুটছে কক্সবাজারের জেলেরা

প্রকাশিত : ০৩:১৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২

গত শুক্রবার ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। দীর্ঘ ২২ দিন পর আবারও পুনরায় মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন জেলেরা। তাই স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলেদের মনেও। তবে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি অনুদান না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক জেলে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৬ হাজার ১০৯ জন। তারমধ্যে সদর উপজেলা ৯৮৪৯ জন, চকরিয়া ৬০০৯ জন, মহেশখালী ১৬৬৪৪ জন, টেকনাফ ১০৮৮৩ জন, পেকুয়া ৫১০০ জন, উখিয়া ৩৮৯২ জন, রামু ২৭৭৩ জন এবং কুতুবদিয়া ১০৯৫৯ জন। এরমধ্যে ইলিশ শিকারি জেলে ২৭ হাজার ৯৬৫ জন। তাদের মধ্যে শুধু ইলিশ মাছ শিকারীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৬৫ জন।

সাধারণ ক্রেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে দেশের সর্বত্র নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সুফল মিলেছে ইলিশের উৎপাদনে। কিন্তু তাতে সাধারণ ক্রেতাদের কোন লাভ হয়নি। লাভ হয়েছে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের। তারা ক্ষেত্র বিশেষে মাছ ধরার ট্রলার কক্সবাজারে উপকূলে নোঙর না করে অন্যত্র নিয়ে যায়। যার ফলে আমরার কক্সবাজার জেলার মাছের দেশের মানুষ মাছ পায় না। এমনকি ইলিশের মৌসুমের সময়ও আমাদেরকে ছড়া দামে মাছ কিনে খেতে হয়। বিগত সময়ে ৬৫ দিন মাছ ধরার বন্ধ থাকলেও খোলার পর জেলার মানুষ সর্বনিন্ম ধরে মাছ কিনেছে ১২শ টাকা করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কক্সবাজারের মানুষকে এখন অর্ডার করে চাঁদপুর থেকে মাছ এনে খেতে হয়। অথচ আমরা কক্সবাজারের বেশিরভাগ মানুষ জেলে সম্প্রদায়ের। আমরা আশা করছি, এবারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশ আহরণ বাড়লে জেলেদের পাশাপাশি লাভবানও হচ্ছে কক্সবাজারের সাধারণ ক্রেতারা।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে মাছ ধরা বন্ধ থাকে দীর্ঘ ২২ দিন। ওই ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণও এ সময় নিষিদ্ধ। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের স্বার্থে এ সময় মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে অনেকে নোঙর তোলার চিন্তা-ভাবনা করছেন জেলেরা। কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের মোহনা ও ঘাটে নোঙর করা মাছ ধরার ট্রলার সাগরে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেশির ভাগ ট্রলারে জাল, রসদপাতি ও বরফ ভর্তি করে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন অনেক জেলেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা ফিশারিঘাটে নোঙর করে রাখা ছোট-বড় হাজারো ট্রলারের জেলেরা সাগরে যেতে ঘাটে পৌঁছেছেন। কক্সবাজার ফিশারি ঘাট এলাকার মোহাম্মদ ইয়াছিন নামের এক জেলে জানান, দীর্ঘ ২২ দিন পর আজ মধ্যরাতে (গতকাল বৃহস্পতিবার) শেষ হচ্ছে ইলিশ মাছ ধরার প্রজনন মৌসুম। এই ২২ দিন পর আশা করছি সাগরে ভাল মাছের প্রজনন হবে। কিন্তু এই ২২ দিন ছিল আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দিন। এই ২২ দিনে আমাদেরকে কোন মহলই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। এমনকি আমাদের সংসার চালানোর বিকল্প কোন ব্যবস্থা করেননি।

এদিকে বোট মালিকরা জানিয়েছেন, আশা করছি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আমরা সুফল পাবো। প্রস্তুতি নিচ্ছি সাগরে যাওয়ার। ইলিশের প্রজনন ভাল হলে কক্সবাজার সহ দেশের জন্য অনেক ভাল হবে। সবার চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় ইলিশ মাছ আমরা আহরণ করতে পারবো বলে আশা করছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান জানান, ইশিশসহ সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২২ দিন পর্যন্ত সাগরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এবার নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা উৎসাহ নিয়ে সাগরে মাছ শিকারের জন্য যাচ্ছে। আশা করছি জেলেরা সাগরে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ শিকার করে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব