০৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হরিরামপুরের পদ্মার মাঝে জেগে ওঠা চরে অতিথি পাখির মিলনমেলা

শীত আসতে না আসতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পদ্মা নদীর মাঝামাঝিতে নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে এসেছে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির শীতের অতিথি পাখি। শীতের শুরুতেই সূদূর হিমালয় ও সাইব্রেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটি আসে এসব পাখি। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই আকর্ষণীয় তাদের খুনসুটি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের কুমারদহ বয়ড়া চর এবং উজান বয়ড়ায় নতুন জেগে ওঠা চরে এখন অতিথি পাখির নীড়ে পরিণত হয়েছে। বালু বাতান, জোড়ালী, কাঁদা খোচা,বাবু বাতানসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মেলে এ চরে। কখনো জলে ডুব-সাঁতার দিয়ে কখনো ঝাঁক বেঁধে মুক্ত আকাশের নীলে উড়ে বেড়াচ্ছে গুলো। গোধূলি লগ্নে সোনালি রঙ ছড়ালে শুরু হয় পাখিদের আনন্দ উল্লাসের মিছিল। তারা কিচির-মিচির ছন্দের তালে সারি সারি দল বেঁধে উড়ে বেড়ায় নীল আকাশের বুক চিড়ে।

হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক ট্রলার ঘাট থেকে ট্রলারে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট গেলেই চোখে পড়বে এই নতুন চরটি। যেখানে হাজারো অতিথি পাখির কোলাহলে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নয়নাভিরাম এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ট্রলারে অনেক দর্শনার্থীরাও ছুটে চলছে সেখানে।

জানা যায়, মূলত শীত প্রধান দেশে যখন প্রচণ্ড শীত দেখা দেয় এবং তাদের আপনালয়ে যখন জীবন মৃত্যুসহ খাদ্য ও আশ্রয়ের চরম সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই শীতপ্রধান দেশের ওই সব পাখিরা বাংলাদেশে ছুটে আসে। এদেরকেই আমরা বলে থাকি অতিথি পাখি। কিছুটা উষ্ণ, আর্দ্রতা ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় নিরিবিলি পরিবেশের আশায় হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে আমাদের এই বাংলাদেশে। ওরা খুঁজে ফেরে নির্জন স্থান, জলাশয় ও বনাঞ্চল। বিশেষ করে হিমালয়, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মালভূমি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, তিব্বতের উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে প্রতিবছরই শীতের প্রভাবে ওই পাখিরা এখানে ছুটে আসে।

হেমন্তের ক্রান্তি লগ্নে ও শীতের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এই পাখিগুলো আশ্রয় নেয়। এসব পাখি প্রায় ৬-৭ মাসের জন্য এ অঞ্চলে চলে আসে। এরা মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন নদীর বুকে জেগে উঠা চর, হাওর, বিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এক শ্রেণীর শিকারির হাতে তারা নিয়মিত শিকার হচ্ছে। ফলে এতে করে কারও কারও কাছে সৌখিন খাবারেও পরিণত হয় এই অতিথি পাখি। তবে এভাবে নিয়মিত শিকার করা হলে ভবিষ্যতে হয়তো এদের আসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়েও যেতে পারে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বন্য প্রাণীসহ পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাখি ও পরিবেশ লালন করি (পালক) সংগঠনের কার্যকরী সদস্য ও মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম সারোয়ার ছানু বলেন, “শীতে র শুরুতেই আমাদের দেশে যে অতিথি পাখি ছুটে আসে। পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অবশ্যই পাখি হত্যা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।”

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য, অতিথি পাখিকে প্রতি নিয়তই সৌখিন পাখি শিকারিরা মনপর আনন্দে পাখি শিকার করছে। এতে শুধু পাখিই ধ্বংস নয়, সাথে পরিবেশও ধ্বংস করা হচ্ছে। অতিথি পাখিরা যেন ‘মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে তার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।”

বিজনেস বাংলাদেশ / হাবিব

জনপ্রিয়

আমি কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে নাম লিখতে চাই : নবাগত জেলা প্রশাসক

হরিরামপুরের পদ্মার মাঝে জেগে ওঠা চরে অতিথি পাখির মিলনমেলা

প্রকাশিত : ০১:৫৯:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২

শীত আসতে না আসতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পদ্মা নদীর মাঝামাঝিতে নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে এসেছে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির শীতের অতিথি পাখি। শীতের শুরুতেই সূদূর হিমালয় ও সাইব্রেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটি আসে এসব পাখি। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই আকর্ষণীয় তাদের খুনসুটি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের কুমারদহ বয়ড়া চর এবং উজান বয়ড়ায় নতুন জেগে ওঠা চরে এখন অতিথি পাখির নীড়ে পরিণত হয়েছে। বালু বাতান, জোড়ালী, কাঁদা খোচা,বাবু বাতানসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মেলে এ চরে। কখনো জলে ডুব-সাঁতার দিয়ে কখনো ঝাঁক বেঁধে মুক্ত আকাশের নীলে উড়ে বেড়াচ্ছে গুলো। গোধূলি লগ্নে সোনালি রঙ ছড়ালে শুরু হয় পাখিদের আনন্দ উল্লাসের মিছিল। তারা কিচির-মিচির ছন্দের তালে সারি সারি দল বেঁধে উড়ে বেড়ায় নীল আকাশের বুক চিড়ে।

হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক ট্রলার ঘাট থেকে ট্রলারে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট গেলেই চোখে পড়বে এই নতুন চরটি। যেখানে হাজারো অতিথি পাখির কোলাহলে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নয়নাভিরাম এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ট্রলারে অনেক দর্শনার্থীরাও ছুটে চলছে সেখানে।

জানা যায়, মূলত শীত প্রধান দেশে যখন প্রচণ্ড শীত দেখা দেয় এবং তাদের আপনালয়ে যখন জীবন মৃত্যুসহ খাদ্য ও আশ্রয়ের চরম সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই শীতপ্রধান দেশের ওই সব পাখিরা বাংলাদেশে ছুটে আসে। এদেরকেই আমরা বলে থাকি অতিথি পাখি। কিছুটা উষ্ণ, আর্দ্রতা ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় নিরিবিলি পরিবেশের আশায় হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে আমাদের এই বাংলাদেশে। ওরা খুঁজে ফেরে নির্জন স্থান, জলাশয় ও বনাঞ্চল। বিশেষ করে হিমালয়, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মালভূমি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, তিব্বতের উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে প্রতিবছরই শীতের প্রভাবে ওই পাখিরা এখানে ছুটে আসে।

হেমন্তের ক্রান্তি লগ্নে ও শীতের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এই পাখিগুলো আশ্রয় নেয়। এসব পাখি প্রায় ৬-৭ মাসের জন্য এ অঞ্চলে চলে আসে। এরা মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন নদীর বুকে জেগে উঠা চর, হাওর, বিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এক শ্রেণীর শিকারির হাতে তারা নিয়মিত শিকার হচ্ছে। ফলে এতে করে কারও কারও কাছে সৌখিন খাবারেও পরিণত হয় এই অতিথি পাখি। তবে এভাবে নিয়মিত শিকার করা হলে ভবিষ্যতে হয়তো এদের আসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়েও যেতে পারে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বন্য প্রাণীসহ পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাখি ও পরিবেশ লালন করি (পালক) সংগঠনের কার্যকরী সদস্য ও মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম সারোয়ার ছানু বলেন, “শীতে র শুরুতেই আমাদের দেশে যে অতিথি পাখি ছুটে আসে। পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অবশ্যই পাখি হত্যা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।”

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য, অতিথি পাখিকে প্রতি নিয়তই সৌখিন পাখি শিকারিরা মনপর আনন্দে পাখি শিকার করছে। এতে শুধু পাখিই ধ্বংস নয়, সাথে পরিবেশও ধ্বংস করা হচ্ছে। অতিথি পাখিরা যেন ‘মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে তার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।”

বিজনেস বাংলাদেশ / হাবিব