০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য কিংবদন্তি ভালুকার আফসার উদ্দিন

সমগ্র বাঙালী জাতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে কোটি বাঙালীর নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করবে। হানাদার বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় করে, ২৪ বছরের অর্থনৈতিক বঞ্চনার প্রতিশোধ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করে বাংলায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবেই। মেজর আফছারের নেতৃত্বে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শহীদ হন। মেজর আফছারের নেতৃত্বে বাটাজোর, বড়চালা, সোনাখালি, পাড়াগাঁও যুদ্ধ অন্যতম।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে রিলিজ হয়ে বাড়ি চলে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন এলাকার মতো ভালুকায়ও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ওই প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়েন আফসার উদ্দিন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন। ১৭ এপ্রিল মাত্র সাতজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মল্লিকবাড়ী গ্রামে আফসার উদ্দিন একটি ‘ব্যাটালিয়ন’ গঠন করেন, যা পরে আফসার বাহিনী নামে খ্যাতি লাভ করে। তাঁরা হলেন মো. আমজাদ হোসেন, আবদুল খালেক মিঞা, নারায়ণ চন্দ্র পাল, আ. বারেক মিঞা, আবদুল মান্নান, অনিল চন্দ্র সাংমা ও মো. ছমর উদ্দিন মিয়া। এঁদের মধ্যে আবদুল মান্নান ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে এবং অনিল চন্দ্র সাংমা ডুমনিঘাট যুদ্ধে শহীদ হন।

দীর্ঘদিন যাবৎ ভালুকা, গফরগাঁও, ত্রিশাল, শ্রীপুরে, চুরি ডাকাতির, লুটপাটের খরব আসতো। ভালুকা মেদুয়ারী পাইত্তাবাড়িতে দিনে দুপুরে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতরা। শ্রীপুরের তেলিহাটি, মির্জাপুরের, লবলংসাগর পাড়ে, খালেকের ডাকাত দলের বলদী ঘাট, চেলের ঘাট, রায়মনি অত্র অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ অসহায়। ২৭-২৮ মার্চে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ, কিছু লোকজন নিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঐ সময় এলাকার অনেক লোকজন এসে বললেন আপনি ভারতে চলে গেলে আমরা মা বোন সহায়-সম্পদ, মানসম্মান নিয়ে থাকতে পারব না। যা তাকে চিন্তায় ফেলে দিলো। পরবর্তীতে ভালুকা এলাকার বন্দুকধারীদের সাথে পরামর্শ সভা করে চোর ডাকাত ধরা শুরু করলেন। ৪-৫ জন ডাকাত ধরে মল্লিকবাড়ি বাজারের বটগাছের সাথে বেঁধে মারলেন। এলাকা শান্ত হয়ে যায়। ভালুকার একাধিক স্থানে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন। ১৭ই এপ্রিল মাত্র ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে দল গঠন করেন। দলের নাম আফসার বাহিনী।

শুরুর দিকে ভালুকা থানার রাজৈ গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী মো. আবদুল হামিদ মিঞার কাছ থেকে একটি রাইফেল ও ৩১ রাউন্ড গুলি সংগ্রহ করেছিলেন আফসার উদ্দিন। বাহিনী গঠনে সাহায্য করেছিলেন মাওলানা আলী ফকির, ডা. হাফিজ উদ্দিন, মো. আবদুর রাজ্জাক মিয়া, আবদুল হাফিজ, মো. মোছলেম মিঞা ও বাবু প্রেমনাথ অধিকারী। একাত্তরের ২০ জুন চানপুর এলাকার ইপিআর সদস্যদের ফেলে যাওয়া সাতটি রাইফেল দখলে এলে আফসার বাহিনীর মনোবল আরো বেড়ে যায়।

আফসার উদ্দিন আহমেদের ভাষায়, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির গঠন করেছি এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ইপিআর-আনসার-মোজাহিদদের ভেতর থেকে বাঙালিদের অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আমার সংগঠিত বাহিনীতে যোগ দিতে থাকেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ মুক্তিযোদ্ধার এক বাহিনী গড়ে তুললাম। ধীরে ধীরে দেশের ভেতরই অবস্থান নিয়ে বন্ধু দেশ ভারতের কোনো সাহায্য ছাড়াই চার হাজার ৫০০ অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধার এক বিরাট বাহিনী গড়ে তুলি। ’

আফসার বাহিনীতে স্থানীয় জনতা ও ছাত্ররাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন। তবে কিছু আনসার, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকও ছিলেন। ওই বাহিনী পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর কায়দায়। তাঁর বাহিনী ছিল ২৫টি কম্পানির সমন্বয়ে। প্রতিটি কম্পানিতে ছিল তিনটি প্লাটুন ও তিনটি সেকশন। আর প্রতি সেকশনে ছিলেন ১৫ জন করে মুক্তিযোদ্ধা।

আফসার ‘ব্যাটালিয়নে’র অধিনায়ক ছিলেন মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। সহকারী অধিনায়ক ছিলেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দুজন শহীদ হয়েছেন। এ ছাড়া অ্যাডজুট্যান্ট, সিকিউরিটি অফিসার, সহ-সিকিউরিটি অফিসার, কোয়ার্টার মাস্টার, অফিস ইনচার্জ প্রভৃতি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ছিল। জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ভালুকা সদর ও মল্লিকবাড়ী বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এ বাহিনীর। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু ছিল রাজৈ ইউনিয়নের খুর্দ্দ গ্রামে।

আফসার বাহিনী ১৫০টি যুদ্ধে অংশ নেয়। ব্যক্তিগতভাবে আফসার ৭৫টি যুদ্ধে অংশ নেন বলে জানা যায়। ২১ মে ভালুকা থানা আক্রমণ করে ১৬টি রাইফেল, ৩০টি বেয়নেট ও এক হাজার ৬০০ রাউন্ড গুলি হস্তগত করে আফসার বাহিনী। ২৫ জুন ভাওয়ালিয়াবাজু সম্মুখযুদ্ধে ৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে খতম করে এ বাহিনী।

ভালুকা ছাড়াও গফরগাঁও এবং ত্রিশালের একাধিক স্থানে যুদ্ধ করে আফসার বাহিনী। ১৭ জুলাই গফরগাঁওয়ে দেউলপাড়া টহল ট্রেন আক্রমণ করে আফসার বাহিনী। এ ছাড়া মশাখালী রেলওয়ে ফরচঙ্গী পুলের পাড় যুদ্ধ, শীলা নদী আক্রমণ, প্রসাদপুর যুদ্ধে অংশ নেয় এ বাহিনী। গফরগাঁও পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিতে ৯ ডিসেম্বর আক্রমণ করে তা দখলে নিয়ে নেয় আফসার বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, কর্মদক্ষতা ও সাফল্যের জন্য আফসার উদ্দিনকে মেজর পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবজি। আফসার বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে মেজর আফসার বাহিনী হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আফসার উদ্দিনের জন্ম ১৯২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। পৈতৃক নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার চাউলাদি গ্রামে। নানাবাড়ি ছিল ভালুকা উপজেলার ধামশুর গ্রামে। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

আফসার উদ্দিনের ছেলে ভালুকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু বলেন, তাঁদের পরিবারে ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর এক ভাই শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা আরো তিন ভাই জীবিত আছেন। তাঁরা হলেন কম্পানি কমান্ডার গাজী খলিলুর রহমান, প্লাটুন কমান্ডার গাজী খোরশেদ আলম ও শওকত আলী।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য কিংবদন্তি ভালুকার আফসার উদ্দিন

প্রকাশিত : ০২:৩৬:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

সমগ্র বাঙালী জাতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে কোটি বাঙালীর নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করবে। হানাদার বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় করে, ২৪ বছরের অর্থনৈতিক বঞ্চনার প্রতিশোধ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করে বাংলায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবেই। মেজর আফছারের নেতৃত্বে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শহীদ হন। মেজর আফছারের নেতৃত্বে বাটাজোর, বড়চালা, সোনাখালি, পাড়াগাঁও যুদ্ধ অন্যতম।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে রিলিজ হয়ে বাড়ি চলে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন এলাকার মতো ভালুকায়ও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ওই প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়েন আফসার উদ্দিন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন। ১৭ এপ্রিল মাত্র সাতজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মল্লিকবাড়ী গ্রামে আফসার উদ্দিন একটি ‘ব্যাটালিয়ন’ গঠন করেন, যা পরে আফসার বাহিনী নামে খ্যাতি লাভ করে। তাঁরা হলেন মো. আমজাদ হোসেন, আবদুল খালেক মিঞা, নারায়ণ চন্দ্র পাল, আ. বারেক মিঞা, আবদুল মান্নান, অনিল চন্দ্র সাংমা ও মো. ছমর উদ্দিন মিয়া। এঁদের মধ্যে আবদুল মান্নান ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে এবং অনিল চন্দ্র সাংমা ডুমনিঘাট যুদ্ধে শহীদ হন।

দীর্ঘদিন যাবৎ ভালুকা, গফরগাঁও, ত্রিশাল, শ্রীপুরে, চুরি ডাকাতির, লুটপাটের খরব আসতো। ভালুকা মেদুয়ারী পাইত্তাবাড়িতে দিনে দুপুরে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতরা। শ্রীপুরের তেলিহাটি, মির্জাপুরের, লবলংসাগর পাড়ে, খালেকের ডাকাত দলের বলদী ঘাট, চেলের ঘাট, রায়মনি অত্র অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ অসহায়। ২৭-২৮ মার্চে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ, কিছু লোকজন নিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঐ সময় এলাকার অনেক লোকজন এসে বললেন আপনি ভারতে চলে গেলে আমরা মা বোন সহায়-সম্পদ, মানসম্মান নিয়ে থাকতে পারব না। যা তাকে চিন্তায় ফেলে দিলো। পরবর্তীতে ভালুকা এলাকার বন্দুকধারীদের সাথে পরামর্শ সভা করে চোর ডাকাত ধরা শুরু করলেন। ৪-৫ জন ডাকাত ধরে মল্লিকবাড়ি বাজারের বটগাছের সাথে বেঁধে মারলেন। এলাকা শান্ত হয়ে যায়। ভালুকার একাধিক স্থানে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন। ১৭ই এপ্রিল মাত্র ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে দল গঠন করেন। দলের নাম আফসার বাহিনী।

শুরুর দিকে ভালুকা থানার রাজৈ গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী মো. আবদুল হামিদ মিঞার কাছ থেকে একটি রাইফেল ও ৩১ রাউন্ড গুলি সংগ্রহ করেছিলেন আফসার উদ্দিন। বাহিনী গঠনে সাহায্য করেছিলেন মাওলানা আলী ফকির, ডা. হাফিজ উদ্দিন, মো. আবদুর রাজ্জাক মিয়া, আবদুল হাফিজ, মো. মোছলেম মিঞা ও বাবু প্রেমনাথ অধিকারী। একাত্তরের ২০ জুন চানপুর এলাকার ইপিআর সদস্যদের ফেলে যাওয়া সাতটি রাইফেল দখলে এলে আফসার বাহিনীর মনোবল আরো বেড়ে যায়।

আফসার উদ্দিন আহমেদের ভাষায়, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির গঠন করেছি এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ইপিআর-আনসার-মোজাহিদদের ভেতর থেকে বাঙালিদের অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আমার সংগঠিত বাহিনীতে যোগ দিতে থাকেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ মুক্তিযোদ্ধার এক বাহিনী গড়ে তুললাম। ধীরে ধীরে দেশের ভেতরই অবস্থান নিয়ে বন্ধু দেশ ভারতের কোনো সাহায্য ছাড়াই চার হাজার ৫০০ অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধার এক বিরাট বাহিনী গড়ে তুলি। ’

আফসার বাহিনীতে স্থানীয় জনতা ও ছাত্ররাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন। তবে কিছু আনসার, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকও ছিলেন। ওই বাহিনী পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর কায়দায়। তাঁর বাহিনী ছিল ২৫টি কম্পানির সমন্বয়ে। প্রতিটি কম্পানিতে ছিল তিনটি প্লাটুন ও তিনটি সেকশন। আর প্রতি সেকশনে ছিলেন ১৫ জন করে মুক্তিযোদ্ধা।

আফসার ‘ব্যাটালিয়নে’র অধিনায়ক ছিলেন মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। সহকারী অধিনায়ক ছিলেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দুজন শহীদ হয়েছেন। এ ছাড়া অ্যাডজুট্যান্ট, সিকিউরিটি অফিসার, সহ-সিকিউরিটি অফিসার, কোয়ার্টার মাস্টার, অফিস ইনচার্জ প্রভৃতি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ছিল। জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ভালুকা সদর ও মল্লিকবাড়ী বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এ বাহিনীর। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু ছিল রাজৈ ইউনিয়নের খুর্দ্দ গ্রামে।

আফসার বাহিনী ১৫০টি যুদ্ধে অংশ নেয়। ব্যক্তিগতভাবে আফসার ৭৫টি যুদ্ধে অংশ নেন বলে জানা যায়। ২১ মে ভালুকা থানা আক্রমণ করে ১৬টি রাইফেল, ৩০টি বেয়নেট ও এক হাজার ৬০০ রাউন্ড গুলি হস্তগত করে আফসার বাহিনী। ২৫ জুন ভাওয়ালিয়াবাজু সম্মুখযুদ্ধে ৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে খতম করে এ বাহিনী।

ভালুকা ছাড়াও গফরগাঁও এবং ত্রিশালের একাধিক স্থানে যুদ্ধ করে আফসার বাহিনী। ১৭ জুলাই গফরগাঁওয়ে দেউলপাড়া টহল ট্রেন আক্রমণ করে আফসার বাহিনী। এ ছাড়া মশাখালী রেলওয়ে ফরচঙ্গী পুলের পাড় যুদ্ধ, শীলা নদী আক্রমণ, প্রসাদপুর যুদ্ধে অংশ নেয় এ বাহিনী। গফরগাঁও পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিতে ৯ ডিসেম্বর আক্রমণ করে তা দখলে নিয়ে নেয় আফসার বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, কর্মদক্ষতা ও সাফল্যের জন্য আফসার উদ্দিনকে মেজর পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবজি। আফসার বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে মেজর আফসার বাহিনী হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আফসার উদ্দিনের জন্ম ১৯২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। পৈতৃক নিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার চাউলাদি গ্রামে। নানাবাড়ি ছিল ভালুকা উপজেলার ধামশুর গ্রামে। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

আফসার উদ্দিনের ছেলে ভালুকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু বলেন, তাঁদের পরিবারে ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর এক ভাই শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা আরো তিন ভাই জীবিত আছেন। তাঁরা হলেন কম্পানি কমান্ডার গাজী খলিলুর রহমান, প্লাটুন কমান্ডার গাজী খোরশেদ আলম ও শওকত আলী।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব