০১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

চলনবিলে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে ক্ষতির মুখে বোরো ধানের বীজতলা

দেশের অন্যতম খাদ্যভান্ডার চলনবিল অঞ্চলের কৃষকরা আসন্ন ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে বোরো ধান চাষের জন্য বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত। ইত্মধ্যেই অনেক কৃষক অয়াগাম জাতের বোরো ধানের চারা জমিতে রোপন করতে শুরু করেছে। এখন বেশিরভাগ জমিতে সরিষা থাকায় জমি তৈরির আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরিষা উঠার সাথে সাথেই জমিতে যাতে চারা রোপন করতে দেরি না হয়।

বৈরী আবহাওয়ায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চলনবিল অঞ্চলের গুরুদাসপুর,বড়াইগ্রাম, সিংড়া, তাড়াশ, চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া রায়গঞ্জ উপজেলার ৭ হাজার হেক্টর হাইব্রিড ও উফশী জাতের বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে। আর বিরূপ আবহওয়ায় বীজতলার প্রতি যত্নবান হয়ে পরিচর্যার আহ্বান জানাচ্ছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা।

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া , বড়াইগ্রাম তাড়াশ, চাট্মোহর উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা শীত ও কুয়াশার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিচ্ছেন। এই রকম আবহাওয়া থাকলে এবার চলনবিল অঞ্চলে বোরোর চারার সংকট দেখা দিতে পারে বলে কৃষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

চলনবিলের বিলসা, রুহাই, কুন্দইলসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে শীতের কবল থেকে বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকরা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছে। যারা পলিথিন কিনতে পারেন নি, তারা খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন। গত কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করায় হলদে ও লাল রং ধারণ করতে শুরু করেছে বোরো বীজতলা। বিলসা গ্রামেরকৃষক আফিজাল হোসেন বলেন, ব্রি-২৯ জাতের এক মণ ধানের বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু কুয়াশা কমছে না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি। কৃষি অফিসারদের পরামর্শে চারা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছি এবং দিনে রোদ উঠলে পলিথিন সরিয়ে রাখছি। কুন্দইল গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, ব্রি-২৮ ও রত্নামালা জাতের আধা মণ ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশার কারণে হলদে ও লাল রং ধারণ করেছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, বোরো ধানের চারার জন্য প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে কোল্ড ইনজুরি হয়ে চাড়া অনেক সময় মরে যায়। ঝলসে যায়। তাই চারা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। দিনে পলিথিন সরিয়ে রাখতে হবে। চারায় সব সময় মাটির নিচ থেকে তোলা পানি ব্যবহার করতে হবে। পুকুর থেকে পানি দেওয়া যাবে না। কারণ পুকুরের পানি অনেক ঠান্ডা। এতে চারার আরও ক্ষতি হয়।বীজতলার নালায়/ড্রেনে পানি রাখতে হবে। এতে বীজতলার মাতির রস স্বভাবিক থাকবে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, প্রচন্ড ঠান্ডার সঙ্গে কুয়াশা থাকায় শীতকালীন শাকসবজি ও বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফসল নষ্টের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
তিনি আরও জানান, বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা নিলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। সবজি ও ফসলের পোকা আক্রামণ ঠেকাতে কৃষককে নানা রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় ফসলের বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা দিনরাত ঢেকে রাখতে হবে, তবে খেয়াল করতে হবে চারার পাতা যাতে পলিথিন স্পর্শ না করে। পাশাপাশি ঢেকে রাখা বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে, সঙ্গে চারার ওপর জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। আর প্রতি দশ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম সালফার জাতীয় অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করতে হবে।

উপজেলা কর্মকর্তা হারুনর রশিদ আরও জানান,এবারে ৫হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে চারার চাহিদা মেটাতে ২৪৮ হেক্টর ( হাইব্রিড ১৪ হেক্টর এবং উফশী ২৩৪ হেক্টর) বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষকদের উতসাহিত করা হচ্ছে । সেই লক্ষ্যে সরকারি প্রোনোদনায় ৪ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ৮ হাজার কেজি হাইব্রিড এবং ১ হাজার ৭০০ কৃষককে ১০ কেজি করে ১৭ হাজার কেজি উফশী জাতের বীজ ও সার বিতরন করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩ জানুয়ারির তথ্যমতে ২৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে যা লক্ষ্মাত্রার চেয়ে ৩২ হেক্টর বেশী। কৃষকরা এখন বীজতলা রক্ষনাবেক্ষনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

চলনবিলে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে ক্ষতির মুখে বোরো ধানের বীজতলা

প্রকাশিত : ০১:০৮:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩

দেশের অন্যতম খাদ্যভান্ডার চলনবিল অঞ্চলের কৃষকরা আসন্ন ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে বোরো ধান চাষের জন্য বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত। ইত্মধ্যেই অনেক কৃষক অয়াগাম জাতের বোরো ধানের চারা জমিতে রোপন করতে শুরু করেছে। এখন বেশিরভাগ জমিতে সরিষা থাকায় জমি তৈরির আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরিষা উঠার সাথে সাথেই জমিতে যাতে চারা রোপন করতে দেরি না হয়।

বৈরী আবহাওয়ায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চলনবিল অঞ্চলের গুরুদাসপুর,বড়াইগ্রাম, সিংড়া, তাড়াশ, চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া রায়গঞ্জ উপজেলার ৭ হাজার হেক্টর হাইব্রিড ও উফশী জাতের বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে। আর বিরূপ আবহওয়ায় বীজতলার প্রতি যত্নবান হয়ে পরিচর্যার আহ্বান জানাচ্ছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা।

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া , বড়াইগ্রাম তাড়াশ, চাট্মোহর উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা শীত ও কুয়াশার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিচ্ছেন। এই রকম আবহাওয়া থাকলে এবার চলনবিল অঞ্চলে বোরোর চারার সংকট দেখা দিতে পারে বলে কৃষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

চলনবিলের বিলসা, রুহাই, কুন্দইলসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে শীতের কবল থেকে বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকরা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছে। যারা পলিথিন কিনতে পারেন নি, তারা খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন। গত কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করায় হলদে ও লাল রং ধারণ করতে শুরু করেছে বোরো বীজতলা। বিলসা গ্রামেরকৃষক আফিজাল হোসেন বলেন, ব্রি-২৯ জাতের এক মণ ধানের বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু কুয়াশা কমছে না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি। কৃষি অফিসারদের পরামর্শে চারা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছি এবং দিনে রোদ উঠলে পলিথিন সরিয়ে রাখছি। কুন্দইল গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, ব্রি-২৮ ও রত্নামালা জাতের আধা মণ ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশার কারণে হলদে ও লাল রং ধারণ করেছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, বোরো ধানের চারার জন্য প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে কোল্ড ইনজুরি হয়ে চাড়া অনেক সময় মরে যায়। ঝলসে যায়। তাই চারা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। দিনে পলিথিন সরিয়ে রাখতে হবে। চারায় সব সময় মাটির নিচ থেকে তোলা পানি ব্যবহার করতে হবে। পুকুর থেকে পানি দেওয়া যাবে না। কারণ পুকুরের পানি অনেক ঠান্ডা। এতে চারার আরও ক্ষতি হয়।বীজতলার নালায়/ড্রেনে পানি রাখতে হবে। এতে বীজতলার মাতির রস স্বভাবিক থাকবে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, প্রচন্ড ঠান্ডার সঙ্গে কুয়াশা থাকায় শীতকালীন শাকসবজি ও বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফসল নষ্টের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
তিনি আরও জানান, বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা নিলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। সবজি ও ফসলের পোকা আক্রামণ ঠেকাতে কৃষককে নানা রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় ফসলের বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা দিনরাত ঢেকে রাখতে হবে, তবে খেয়াল করতে হবে চারার পাতা যাতে পলিথিন স্পর্শ না করে। পাশাপাশি ঢেকে রাখা বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে, সঙ্গে চারার ওপর জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। আর প্রতি দশ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম সালফার জাতীয় অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করতে হবে।

উপজেলা কর্মকর্তা হারুনর রশিদ আরও জানান,এবারে ৫হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে চারার চাহিদা মেটাতে ২৪৮ হেক্টর ( হাইব্রিড ১৪ হেক্টর এবং উফশী ২৩৪ হেক্টর) বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষকদের উতসাহিত করা হচ্ছে । সেই লক্ষ্যে সরকারি প্রোনোদনায় ৪ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ৮ হাজার কেজি হাইব্রিড এবং ১ হাজার ৭০০ কৃষককে ১০ কেজি করে ১৭ হাজার কেজি উফশী জাতের বীজ ও সার বিতরন করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩ জানুয়ারির তথ্যমতে ২৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে যা লক্ষ্মাত্রার চেয়ে ৩২ হেক্টর বেশী। কৃষকরা এখন বীজতলা রক্ষনাবেক্ষনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব