০৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

টাঙ্গাইলে শামসুল হকের জন্মদিন পালিত

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের রূপকার শামসুল হকের ১০৫ তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। শামসুল হকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই প্রথম তার দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসেন। বুধবার সকালে শহরের শামসুল হক তোরণের প্রতিকৃতিত্বে তার দুই মেয়ে হারবার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. শাহীন ফাতেমা দিল ও নাসার ভার্টিলেক এ্যাস্ট্রোফিজিসিয়েস্ট ড. শায়েকা দিলের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। এছাড়াও শামসুল হক ফাউন্ডেশন, ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতিকৃতিত্বে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান, শামসুল হক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক প্রমুখ।

সকাল ১১ টায় অতিথিরা টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা শামছুল হক কলেজে মত বিনিময় করেন। দুপুর ১২ টায় জোগারচর গ্রামে শামসুল হকের কবরের পুষ্পস্তবক অর্পন, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন এলাকায় শামছুল হক সেতু ও তার জন্মস্থান মাঠান গ্রাম অতিথিরা পরিদর্শন করেন।

শামছুল হক ১৯১৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি দেলদুয়ার উপজেলার পাছ-এলাসিনের শাকইজোড়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি মাইঠান গ্রামে। ১৯৩৯ সালে টাঙ্গাইলের সা’দত কলেজের ছাত্র সংসদের প্রথম সভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ (সম্মান) পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে ৯ ই এপ্রিল আবুল হাশিমের উদ্যোগে শামছুল হক ঢাকার ১৫০ মোগল টুলিতে মুসলিম লীগের নেতা কর্মীদের একটি সম্মেলন কার্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠন। শামছুল হক সভাপতি, মোহাম্মদ তোয়াহা সাধারণ সম্পাদক।

১৯৪৮ সালের ২৮শে ফেব্রæয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কলকাতায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণ। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষার মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হন। ১৫ই মার্চ মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণা দিলে তিনি ‘নো’ ‘নো’ বলে প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৯ সালের ২৬ শে মার্চ তার লেখা গ্রন্থ, বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল প্রাদেশিক পরিষদের উপ-নির্বাচনে খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করেন। পরদিন গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠন করেন। মওলানা ভাসানী সভাপতি, শামসুলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর ইডেন কলেজের ইংরেজির শিক্ষক আফিয়া খাতুনের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

১৯৪৯ সালের ১১ই অক্টোবর খাদ্য সংকট নিরসনের জনসভা থেকে ভাসানীর সাথে গ্রেপ্তার হন। ১৯৫১ সালের মার্চে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫১ সালের ৯ ই এপ্রিল ১ম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ১৯৫২ সালের ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে ছাত্রদের বোঝানোর জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৫২ সালের সালের ১৯ শে মার্চে গ্রেপ্তার। ১৯৫২ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তখন তিনি জেলে ছিলেন। ১৯৫৩ সালের ৬ ই ফেব্রæয়ারি সন্তানদের নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আফিয়া খাতুন নিউজিল্যান্ড গমন করেন।

১৯৫৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ভগ্নুস্বাস্থ্য নিয়ে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে আফিয়া খাতুন দেশে ফেরেন। তাকে দেখতে শ্বশুর বাড়ি গেলে স্ত্রীর ভাইয়ের দ্বারা প্রহৃত হন শামসুল হক। ১৯৫৫ সালে চিকিৎসার জন্য তাকে করাচী পাঠানো হয়। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তাকে দেখা গেছে। এই সময়ে হুকুমতে রব্বানী বা খেলাফতে রব্বানী নামের দলের ম্যানিফেস্টো রচনা করেন এবং বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা আদায় করেন। ১৯৬৪ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর অসুস্থ মাকে দেখার জন্য বাড়িতে চলে আসেন। পরদিন চলে যান। ২০০৭ সালের মে মাসে কালিহাতী উপজেলার জোগারচর গ্রামে তার কবরের সন্ধান পাওয়া যায়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

টাঙ্গাইলে শামসুল হকের জন্মদিন পালিত

প্রকাশিত : ১২:৫৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের রূপকার শামসুল হকের ১০৫ তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। শামসুল হকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই প্রথম তার দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসেন। বুধবার সকালে শহরের শামসুল হক তোরণের প্রতিকৃতিত্বে তার দুই মেয়ে হারবার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. শাহীন ফাতেমা দিল ও নাসার ভার্টিলেক এ্যাস্ট্রোফিজিসিয়েস্ট ড. শায়েকা দিলের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। এছাড়াও শামসুল হক ফাউন্ডেশন, ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতিকৃতিত্বে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান, শামসুল হক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক প্রমুখ।

সকাল ১১ টায় অতিথিরা টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা শামছুল হক কলেজে মত বিনিময় করেন। দুপুর ১২ টায় জোগারচর গ্রামে শামসুল হকের কবরের পুষ্পস্তবক অর্পন, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন এলাকায় শামছুল হক সেতু ও তার জন্মস্থান মাঠান গ্রাম অতিথিরা পরিদর্শন করেন।

শামছুল হক ১৯১৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি দেলদুয়ার উপজেলার পাছ-এলাসিনের শাকইজোড়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি মাইঠান গ্রামে। ১৯৩৯ সালে টাঙ্গাইলের সা’দত কলেজের ছাত্র সংসদের প্রথম সভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ (সম্মান) পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে ৯ ই এপ্রিল আবুল হাশিমের উদ্যোগে শামছুল হক ঢাকার ১৫০ মোগল টুলিতে মুসলিম লীগের নেতা কর্মীদের একটি সম্মেলন কার্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠন। শামছুল হক সভাপতি, মোহাম্মদ তোয়াহা সাধারণ সম্পাদক।

১৯৪৮ সালের ২৮শে ফেব্রæয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কলকাতায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণ। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষার মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হন। ১৫ই মার্চ মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণা দিলে তিনি ‘নো’ ‘নো’ বলে প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৯ সালের ২৬ শে মার্চ তার লেখা গ্রন্থ, বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল প্রাদেশিক পরিষদের উপ-নির্বাচনে খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করেন। পরদিন গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠন করেন। মওলানা ভাসানী সভাপতি, শামসুলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর ইডেন কলেজের ইংরেজির শিক্ষক আফিয়া খাতুনের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

১৯৪৯ সালের ১১ই অক্টোবর খাদ্য সংকট নিরসনের জনসভা থেকে ভাসানীর সাথে গ্রেপ্তার হন। ১৯৫১ সালের মার্চে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫১ সালের ৯ ই এপ্রিল ১ম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ১৯৫২ সালের ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে ছাত্রদের বোঝানোর জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৫২ সালের সালের ১৯ শে মার্চে গ্রেপ্তার। ১৯৫২ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তখন তিনি জেলে ছিলেন। ১৯৫৩ সালের ৬ ই ফেব্রæয়ারি সন্তানদের নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আফিয়া খাতুন নিউজিল্যান্ড গমন করেন।

১৯৫৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ভগ্নুস্বাস্থ্য নিয়ে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে আফিয়া খাতুন দেশে ফেরেন। তাকে দেখতে শ্বশুর বাড়ি গেলে স্ত্রীর ভাইয়ের দ্বারা প্রহৃত হন শামসুল হক। ১৯৫৫ সালে চিকিৎসার জন্য তাকে করাচী পাঠানো হয়। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তাকে দেখা গেছে। এই সময়ে হুকুমতে রব্বানী বা খেলাফতে রব্বানী নামের দলের ম্যানিফেস্টো রচনা করেন এবং বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা আদায় করেন। ১৯৬৪ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর অসুস্থ মাকে দেখার জন্য বাড়িতে চলে আসেন। পরদিন চলে যান। ২০০৭ সালের মে মাসে কালিহাতী উপজেলার জোগারচর গ্রামে তার কবরের সন্ধান পাওয়া যায়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব