প্রায় চার বছর পর আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন ব্রেন্ডন টেলর, খেললেন ৪৪ রানের ইনিংস। ফলে মুশফিকুর রহিমকে ছাড়িয়ে ২০০৪ সালে ডেব্যু হওয়া টেলরই অ্যাক্টিভ ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন।
টেলর অবসর নিয়েছিলেন, ফিক্সিং কান্ডে আইসিসি নিষিদ্ধও করেছিল। এরপর বোর্ডের ডাকে, দলের প্রয়োজনে আবারও ফিরলেন এ রোডেশিয়ান সুপারস্টার।
২০১৯ সালের অক্টোবরের ঘটনা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে তখন অনিশ্চিত। তার উপরে ক্রিকেটারদের প্রায় ছয় মাসের বেতন দিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। তখনই একদিন ব্রেন্ডনের কাছে একজন ভারতীয় ব্যবসায়ীর প্রস্তাব আসে। প্রস্তাবটা একটু অবাক করা, জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে টেলরের সঙ্গে তারা আলোচনা করতে চান; সেটাও আবার ভারতে। এমনকি এই সফরের জন্য টেলর পাবেন ১৫ হাজার ইউএস ডলার।
এতগুলো অর্থের হাতছানি, সেটাও আবার এমন এক সময়; যখন টেলরের হাতে টাকা নেই। টুকটাক টেনশন মাথায় নিয়ে ভারতে রওনা হলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। কথাসমেত আলোচনাও হলো, সেখান থেকে তারা গেলেন ডিনারে, ডিনারশেষে চলছিল মদ্যপান। একপর্যায়ে বাকিরা কোকেন সেবন করছিলেন, টেলরকে প্রস্তাবও দেয়া হলো। সেই প্রস্তাবে রাজিও হন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি। ব্যস, সেখানেই ভুলটা করে বসেন টেলর।
পরদিন সকালে টেলরকে একটা ভিডিও দেখান সেই ব্যবসায়ী। যেখানে দেখা যাচ্ছে, টেলর কোকেন নিচ্ছেন। পরে তারা ব্ল্যাকমেইল করেন, হুমকিও দেন, আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিং না করলে ভিডিওটি ফাঁস করে দেয়া হবে। দূরদেশের একটা হোটেলে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন টেলর।
তৎক্ষনাৎ তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। এই কাজ করার জন্য আগাম ১৫ হাজার ইউএস ডলারও দেয় তারা। সেই টাকা নিয়ে ভারত ছাড়েন টেলর। আইসিসিকে জানাতে জানাতে চার মাস সময় নেন, তাতেই বেঁকে বসে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট ভাঙায়, সাড়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন টেলর।
এমনকি সেই ঘটনা তাকে নিয়ে যায় মাদকাসক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডোপ টেস্টে পজেটিভ হয়ে ৬মাসের জন্য নিষিদ্ধও হয়েছিলেন। এক বছরের জন্য ছিলেন রিহ্যাবেও। সেখান থেকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন, শরীর থেকে ২০ কেজি চর্বি ঝড়িয়ে ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। যেখান থেকে ব্রেন্ডন টেলর আবারও ফিরলেন, একমাত্র রূপকথায়ই সেটা সম্ভব।
ডিএস./