০৭:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

গাজীপুরে প্রকাশ্যে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা, প্রতিবাদে মানববন্ধন আটক ৫ 

গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) নামের এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে। হত্যার ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের বড়ভাই একটি হত্যা মামলা করেছেন।

আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে গাজীপুর মহাগরীর চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার সাথে থাকা সহকর্মী শামীম হোসেন বলেন, “চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক নারী ও এক পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। ঠিক এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি, তোরা আয়।’ এসময় তারা রামদা বের করলে ওই লোকটা (যার ওপর ওদের টার্গেট ছিল) দৌড় দেয়। ঠিক ওই সময় ওরাও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়।”
তিনি বলেন, “তখন আমার পাশ থেকে তুহিনও (সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন) মোবাইল নিয়ে ওদের পিছে পিছে দৌড় দিছে। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। সে কারণে আমি আর তাকে খুঁজে পাইনি। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি যারা রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তারা হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছন দিকে তাকাচ্ছে। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে।”
“ওই সময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তখন আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে,” যোগ করেন শামীম হোসেন।
তুহিনকে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল, শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল; কেউ এগিয়ে আসেনি।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান। তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।”
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছে। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম এখনো পলাতক ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গাজীপুরের সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় গাজীপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সহকর্মী আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। তারা প্রকাশ্যে দিবালোকে গাজীপুরের জনবহুল চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা করেন। গাজীপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলেও জানান তারা। এসময় সাংবাদিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইকারীদের মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করার দাবি তোলেন।
এছাড়া বুধবার চাঁদাবাজির সংবাদ সংগ্রহের সময় স্থানীয় আরেক সংবাদকর্মীকে থানার পাশে ‘মব তৈরি করে’ এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায় মেট্রোপলিটন সদর থানার পাশে সাহাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আহত সাংবাদিকের নাম আনোয়ার হোসেন সৌরভ (৩২)। তিনি গাজীপুর শহরের উত্তর ছায়াবিথী এলাকার বাসিন্দা এবং দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকায় কর্মরত। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আনোয়ারা সুলতানা গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ডিএস./
ট্যাগ :

তিমুর লেস্তের জালে ৮ গোল বাংলাদেশের মেয়েদের

গাজীপুরে প্রকাশ্যে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা, প্রতিবাদে মানববন্ধন আটক ৫ 

প্রকাশিত : ০৪:০১:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) নামের এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে। হত্যার ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের বড়ভাই একটি হত্যা মামলা করেছেন।

আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে গাজীপুর মহাগরীর চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার সাথে থাকা সহকর্মী শামীম হোসেন বলেন, “চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক নারী ও এক পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। ঠিক এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি, তোরা আয়।’ এসময় তারা রামদা বের করলে ওই লোকটা (যার ওপর ওদের টার্গেট ছিল) দৌড় দেয়। ঠিক ওই সময় ওরাও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়।”
তিনি বলেন, “তখন আমার পাশ থেকে তুহিনও (সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন) মোবাইল নিয়ে ওদের পিছে পিছে দৌড় দিছে। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। সে কারণে আমি আর তাকে খুঁজে পাইনি। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি যারা রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তারা হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছন দিকে তাকাচ্ছে। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে।”
“ওই সময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তখন আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে,” যোগ করেন শামীম হোসেন।
তুহিনকে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল, শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল; কেউ এগিয়ে আসেনি।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান। তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।”
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছে। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম এখনো পলাতক ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গাজীপুরের সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় গাজীপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সহকর্মী আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। তারা প্রকাশ্যে দিবালোকে গাজীপুরের জনবহুল চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা করেন। গাজীপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলেও জানান তারা। এসময় সাংবাদিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইকারীদের মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করার দাবি তোলেন।
এছাড়া বুধবার চাঁদাবাজির সংবাদ সংগ্রহের সময় স্থানীয় আরেক সংবাদকর্মীকে থানার পাশে ‘মব তৈরি করে’ এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায় মেট্রোপলিটন সদর থানার পাশে সাহাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আহত সাংবাদিকের নাম আনোয়ার হোসেন সৌরভ (৩২)। তিনি গাজীপুর শহরের উত্তর ছায়াবিথী এলাকার বাসিন্দা এবং দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকায় কর্মরত। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আনোয়ারা সুলতানা গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ডিএস./