১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামে লাইনচ্যুত ওয়াগনের তেল গুপ্তখাল মহেশখাল ছাড়িয়ে কর্ণফুলীতে

চট্টগ্রামে লাইনচ্যুত ওয়াগন থেকে পড়া তেল পাশের মহেশখালে ছড়িয়ে পড়েছে। এই খালটি মিশেছে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে। ফলে সেখানেও তেল ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) একটি তেলবাহী ট্রেনের তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়া বিপুল পরিমাণ তেল মহেশখালের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। মহেশখালের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে। স্লুইচ গেট হয়ে এই তেল গুপ্ত খাল–মহেশখাল থেকে কর্ণফুলী নদীতেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের দুটি দল মহেশখালের স্লুইচ গেটের দুই পাশ থেকেই পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে। তারা নদীর পানিতেও কিছু তেলের উপস্থিতি দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় রেলওয়ের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে একটি তেলবাহী ট্রেনের তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় ৩০ হাজার লিটারের বেশি তেল ড্রেন হয়ে মহেশখালে গিয়ে পড়েছে।
যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা বলে দাবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। লাইনচ্যুত ওয়াগন উদ্ধারের পর একটি থেকে ২০ হাজার লিটার ডিজেল উদ্ধার করা হয়। তবে খালের জলে ভেসে গেছে ওই ওয়াগনে থাকা আরও ১০ হাজার লিটার ডিজেল। যার আনুমানিক মূল্য ১৩ লাখ টাকার মতো। আর একটি ওয়াগন থেকে ২০ হাজার লিটার তেল পড়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৬ লাখ টাকা। অপর একটি ওয়াগন থেকে সামান্য কিছু তেল পড়েছে বলে জানা যায়।

এই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মফিদুল আলম বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, রেলওয়ের তেলের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে তেল খালের যেসব স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে সে সব এলাকার নমুনা আমরা সংগ্রহ করেছি। ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে পাঁচ দিন লাগবে। তখন বুঝা যাবে নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বলতে পারি এতগুলো তেল খালের পানিতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে পরিবেশের জন্য অনেকটা ক্ষতিকর হবে। জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়বে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক বিন ইমরানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা দ্রুত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেব। তবে লাইনচ্যুত ওয়াগানের তেল নদীতে যায়নি বলে জানান তিনি। দুর্ঘটনার পরপর তেল পড়লেও সাথে সাথে বন্ধ করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণে তেল পড়েছে এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি জানান, লাইনচ্যুত তিনটি ওয়াগনের মধ্যে দুটি গত বুধবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে। একটি ওয়াগন বৃহস্পতিবার দুপুরে উদ্ধার করার পর লাইন সচল হয়েছে। তবে ওয়াগনগুলো উদ্ধার করার জন্য লাইন বন্ধ ছিল না। এখানে একাধিক লাইন রয়েছে। অন্যান্য লাইন দিয়ে ইয়ার্ড থেকে মালামাল পরিবহন সচল ছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনির হোসেন জানান, রেলওয়ের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে লাইনচ্যুত হওয়া তেলবাহী ওয়াগন থেকে ছিটকে পড়া তেল সিজিপিওয়াই খাল, গুপ্তা খাল ও মহেশ খাল দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মহেশখাল যেখানে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে, সেখানকার স্লুইচ গেটটি বুধবার থেকে বন্ধ ছিল। আমরা গেটের ভেতরের দিকে খাল থেকে নমুনা নিয়েছি একাধিক। খালের পানিতে ভালো পরিমাণে তেলের উপস্থিতি আছে। গেটের অপর পাশে নদীর পানির নমুনাও নিয়েছি। নমুনা পরীক্ষার পর বলা যাবে তেল নদীতে ছড়িয়েছে কি না। তবে খালি চোখে নদীর পানিতে খুব অল্প পরিমাণ তেল দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াগন থেকে পড়া তেলে খালের পানির রং পাল্টে গেছে। ছিটকে পড়া তেল ফোম, বালতি ও প্লেটে করে সংগ্রহ করছেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় সাইফুল, মোমেন উদ্দিন, আবদুর রহিমসহ বেশ কয়েকজনকে তেল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, খাল এবং নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে খালের খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুসংস্থানে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। পানির উপরিভাগে থাকা জলজ প্রাণীর খাদ্য ধ্বংস করে দেবে। এছাড়া আরো নানান ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

চট্টগ্রামে লাইনচ্যুত ওয়াগনের তেল গুপ্তখাল মহেশখাল ছাড়িয়ে কর্ণফুলীতে

প্রকাশিত : ০৩:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

চট্টগ্রামে লাইনচ্যুত ওয়াগন থেকে পড়া তেল পাশের মহেশখালে ছড়িয়ে পড়েছে। এই খালটি মিশেছে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে। ফলে সেখানেও তেল ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) একটি তেলবাহী ট্রেনের তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়া বিপুল পরিমাণ তেল মহেশখালের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। মহেশখালের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে। স্লুইচ গেট হয়ে এই তেল গুপ্ত খাল–মহেশখাল থেকে কর্ণফুলী নদীতেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের দুটি দল মহেশখালের স্লুইচ গেটের দুই পাশ থেকেই পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে। তারা নদীর পানিতেও কিছু তেলের উপস্থিতি দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় রেলওয়ের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে একটি তেলবাহী ট্রেনের তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় ৩০ হাজার লিটারের বেশি তেল ড্রেন হয়ে মহেশখালে গিয়ে পড়েছে।
যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা বলে দাবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। লাইনচ্যুত ওয়াগন উদ্ধারের পর একটি থেকে ২০ হাজার লিটার ডিজেল উদ্ধার করা হয়। তবে খালের জলে ভেসে গেছে ওই ওয়াগনে থাকা আরও ১০ হাজার লিটার ডিজেল। যার আনুমানিক মূল্য ১৩ লাখ টাকার মতো। আর একটি ওয়াগন থেকে ২০ হাজার লিটার তেল পড়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৬ লাখ টাকা। অপর একটি ওয়াগন থেকে সামান্য কিছু তেল পড়েছে বলে জানা যায়।

এই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মফিদুল আলম বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, রেলওয়ের তেলের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে তেল খালের যেসব স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে সে সব এলাকার নমুনা আমরা সংগ্রহ করেছি। ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে পাঁচ দিন লাগবে। তখন বুঝা যাবে নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বলতে পারি এতগুলো তেল খালের পানিতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে পরিবেশের জন্য অনেকটা ক্ষতিকর হবে। জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়বে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক বিন ইমরানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা দ্রুত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেব। তবে লাইনচ্যুত ওয়াগানের তেল নদীতে যায়নি বলে জানান তিনি। দুর্ঘটনার পরপর তেল পড়লেও সাথে সাথে বন্ধ করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণে তেল পড়েছে এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি জানান, লাইনচ্যুত তিনটি ওয়াগনের মধ্যে দুটি গত বুধবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে। একটি ওয়াগন বৃহস্পতিবার দুপুরে উদ্ধার করার পর লাইন সচল হয়েছে। তবে ওয়াগনগুলো উদ্ধার করার জন্য লাইন বন্ধ ছিল না। এখানে একাধিক লাইন রয়েছে। অন্যান্য লাইন দিয়ে ইয়ার্ড থেকে মালামাল পরিবহন সচল ছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনির হোসেন জানান, রেলওয়ের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে লাইনচ্যুত হওয়া তেলবাহী ওয়াগন থেকে ছিটকে পড়া তেল সিজিপিওয়াই খাল, গুপ্তা খাল ও মহেশ খাল দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মহেশখাল যেখানে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে, সেখানকার স্লুইচ গেটটি বুধবার থেকে বন্ধ ছিল। আমরা গেটের ভেতরের দিকে খাল থেকে নমুনা নিয়েছি একাধিক। খালের পানিতে ভালো পরিমাণে তেলের উপস্থিতি আছে। গেটের অপর পাশে নদীর পানির নমুনাও নিয়েছি। নমুনা পরীক্ষার পর বলা যাবে তেল নদীতে ছড়িয়েছে কি না। তবে খালি চোখে নদীর পানিতে খুব অল্প পরিমাণ তেল দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াগন থেকে পড়া তেলে খালের পানির রং পাল্টে গেছে। ছিটকে পড়া তেল ফোম, বালতি ও প্লেটে করে সংগ্রহ করছেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় সাইফুল, মোমেন উদ্দিন, আবদুর রহিমসহ বেশ কয়েকজনকে তেল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, খাল এবং নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে খালের খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুসংস্থানে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। পানির উপরিভাগে থাকা জলজ প্রাণীর খাদ্য ধ্বংস করে দেবে। এছাড়া আরো নানান ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব