০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

বাংলা বর্ষবরণে প্রস্তুত হচ্ছে জবি

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হতে যাচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহাসমারোহে বাংলা বর্ষবরণের ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সরজমিনে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেউ কেউ পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, পাখির মুখোশ, রাজা-রানির মুখোশ, নানা রকমের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। আবার কেউ কেউ দেয়ালে দেয়ালে চিত্র অংকন করছেন। বর্ষবরণ সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ও শান্ত চত্বরে ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম এবং মুখোশে রঙ করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের রং তুলিতে ফুটে উঠছে আবহমান বাংলার রূপ।
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘শান্তি ও সম্প্রীতি’। শান্তির প্রতীক হিসেবে কবুতর এবং সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পেঁচা তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে বড় একটি কবুতর পাখির স্ট্রাকচার আর ছোট একটি পেঁচার স্ট্রাকচার তৈরি করা হচ্ছে। কবুতরটি দৈর্ঘ্যে ১৮ ফিট, উচ্চতায় ১৬ ফিট, প্রস্থ্যে ১৪ ফিট। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রাটির নেতৃত্ব দিবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
এদিকে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। দিন-রাত পরিশ্রম করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তুলার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবার কাজ হচ্ছে। শোভাযাত্রার জন্য বড় আকারের ফুল, পাতা ছাড়াও বাঘ ও পেঁচার মুখোশ তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা গতবারের ন্যায় এবারও দেয়ালচিত্র অঙ্কন করছে। ইউটিলিটি ভবনের নীচতলা থেকে তৃতীয় তলায় চারুকলা বিভাগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এ দেয়াল চিত্র অংকন করছেন। দেয়ালচিত্রে বাংলাদেশের লোকঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাছ, লতাপাতা সহ বিভিন্ন টেরাকোটার কাঠামো। এবার বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রকাশনা উৎসবসহ নানা আয়োজন থাকছে এবারের অনুষ্ঠানমালায়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি সকাল ৯.৩০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড় ঘুরে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় নৃত্য ও দলীয় সংগীত, লোক সংগীত এবং নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে নাটক মঞ্চায়ন। এছাড়াও দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহিদ রফিক ভবনের নিচতলায় ‘প্রকাশনা প্রদর্শনী’ অনুষ্ঠিত হবে।
চারুকলা বিভাগের আয়োজক ব্যাচের শিক্ষার্থী রামিসা তাসনিম বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে আমরা কয়েকটি গ্রুপ ভাগ করে কাজ করছি। একটি গ্রুপ কাগজের ফুল বানাচ্ছে এবং ছেলেরা পোড়া মাটির হাতি৷ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার অনেক মানুষ কম। তাই আমাদের উপর চাপ পরে যাচ্ছে। তবুও আমরা সবাই মিলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি। কাজের ফাঁকে চারুকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী উচ্ছাস দাস বলেন, আমরা কবুতর ও পেঁচার স্ট্রাকচার তৈরি করছি। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এসব বানানো হচ্ছে। এবার ১৪৩০ নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় টিম শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে শান্তির পায়রা বানাচ্ছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ও চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমাম হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ম তম বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আমরা কাজ করছি। এবারের পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের বাসায় যাওয়া বন্ধ করে আমাদের সাথে কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা দেয়ালচিত্র আঁকছে, মুখোশ, ফুলও বানাচ্ছে। সেগুলো র্যালিতে আমরা বহন করবো। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও আমরা আমাদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমরা সীমিত পরিসরে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে। আমরা সবাই মিলে ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবো। প্রতিবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি‌তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট বিভিন্ন ব্যানা‌রে অংশ নেয়। পাশাপাশি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনও এতে অংশ নেয়।
ট্যাগ :

রামগঞ্জে হতদরিদ্র হৃদয়ের স্বপ্ন পুরন করবে স্মার্ট জহির

বাংলা বর্ষবরণে প্রস্তুত হচ্ছে জবি

প্রকাশিত : ০৭:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হতে যাচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহাসমারোহে বাংলা বর্ষবরণের ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সরজমিনে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেউ কেউ পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, পাখির মুখোশ, রাজা-রানির মুখোশ, নানা রকমের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। আবার কেউ কেউ দেয়ালে দেয়ালে চিত্র অংকন করছেন। বর্ষবরণ সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ও শান্ত চত্বরে ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম এবং মুখোশে রঙ করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের রং তুলিতে ফুটে উঠছে আবহমান বাংলার রূপ।
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘শান্তি ও সম্প্রীতি’। শান্তির প্রতীক হিসেবে কবুতর এবং সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পেঁচা তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে বড় একটি কবুতর পাখির স্ট্রাকচার আর ছোট একটি পেঁচার স্ট্রাকচার তৈরি করা হচ্ছে। কবুতরটি দৈর্ঘ্যে ১৮ ফিট, উচ্চতায় ১৬ ফিট, প্রস্থ্যে ১৪ ফিট। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রাটির নেতৃত্ব দিবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
এদিকে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। দিন-রাত পরিশ্রম করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তুলার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবার কাজ হচ্ছে। শোভাযাত্রার জন্য বড় আকারের ফুল, পাতা ছাড়াও বাঘ ও পেঁচার মুখোশ তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা গতবারের ন্যায় এবারও দেয়ালচিত্র অঙ্কন করছে। ইউটিলিটি ভবনের নীচতলা থেকে তৃতীয় তলায় চারুকলা বিভাগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এ দেয়াল চিত্র অংকন করছেন। দেয়ালচিত্রে বাংলাদেশের লোকঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাছ, লতাপাতা সহ বিভিন্ন টেরাকোটার কাঠামো। এবার বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রকাশনা উৎসবসহ নানা আয়োজন থাকছে এবারের অনুষ্ঠানমালায়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি সকাল ৯.৩০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড় ঘুরে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় নৃত্য ও দলীয় সংগীত, লোক সংগীত এবং নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে নাটক মঞ্চায়ন। এছাড়াও দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহিদ রফিক ভবনের নিচতলায় ‘প্রকাশনা প্রদর্শনী’ অনুষ্ঠিত হবে।
চারুকলা বিভাগের আয়োজক ব্যাচের শিক্ষার্থী রামিসা তাসনিম বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে আমরা কয়েকটি গ্রুপ ভাগ করে কাজ করছি। একটি গ্রুপ কাগজের ফুল বানাচ্ছে এবং ছেলেরা পোড়া মাটির হাতি৷ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার অনেক মানুষ কম। তাই আমাদের উপর চাপ পরে যাচ্ছে। তবুও আমরা সবাই মিলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি। কাজের ফাঁকে চারুকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী উচ্ছাস দাস বলেন, আমরা কবুতর ও পেঁচার স্ট্রাকচার তৈরি করছি। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এসব বানানো হচ্ছে। এবার ১৪৩০ নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় টিম শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে শান্তির পায়রা বানাচ্ছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ও চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমাম হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ম তম বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আমরা কাজ করছি। এবারের পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের বাসায় যাওয়া বন্ধ করে আমাদের সাথে কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা দেয়ালচিত্র আঁকছে, মুখোশ, ফুলও বানাচ্ছে। সেগুলো র্যালিতে আমরা বহন করবো। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও আমরা আমাদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমরা সীমিত পরিসরে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে। আমরা সবাই মিলে ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবো। প্রতিবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি‌তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট বিভিন্ন ব্যানা‌রে অংশ নেয়। পাশাপাশি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনও এতে অংশ নেয়।