০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাতক্ষীরায় এবার আমের বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরায় চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ঝড়বৃষ্টির কবলে না পড়ায় অধিক ফলনের আশা করছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। গত বছর আবহাওয়া প্রতিকূলের কারণে আমের ফলন কম হয়েছিল। এবছর প্রতি গাছে যেভাবে আম ঝুলছে তাতে অনেক ভাল ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পাকে। এ জন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। গত কয়েক বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে কিছু গুটি ঝরে পড়ছে। এতে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না দাবি কৃষি বিভাগের।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ও বিদেশে রফতানি করা যাবে। এতে আয় হবে ২২৫ কোটি টাকারও বেশি।গত কয়েক বছর ধরে জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মল্লিকা, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য জাতের প্রচুর আম উৎপাদন হয়। চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়। এ বছর নবমবারের মতো ইংল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাবে এই জেলার আম।

আম চাষী তালা উপজেলার বড় কাশিপুর গ্রামের শেখ সইদুল ইসলাম বলেন, ‌আমাদের এলাকার আম অতুলনীয়। হিমসাগর বিখ্যাত। ল্যাংড়া ও আম্রপালির চাহিদা বেশি। এ বছরও জমি লিজ নিয়ে আমের চাষ করেছি।এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল আছে। আম অতিদ্রুত বড় হচ্ছে। গত কয়েক বছর দুর্যোগের কারণে মূলধন হারিয়ে ফেলেছিলাম। এবার ফলন অনেক ভাল হয়েছে আশা করছি লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের আমচাষী রইচউদ্দীন সরদার বলেন,গত বছর উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান হয়েছিল। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান পরিচর্যা, পোকামাকড় মুক্ত করতে ওষুধ প্রয়োগ, ফলনের পর বাজারজাত, শ্রমিকের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ফলন ভালো হলে আমাদের লাভ হয়। এবার আশা করছি, লাভের মুখ দেখবো।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তদার মতিয়ার রহমান বলেন,এ বছর কাঁচা আমের মণ ১৪০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে কম দামে কাঁচা আম কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা অনেকটা লাভবান হচ্ছে।গত বছর পাকা আমের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল এবার আরও বেশি দামে বিক্রি হবে। আমের সাইজ বড় ও দেখতে সুন্দর হলে ৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হবে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। সেই পরিমাণ গুটি ধরেছে। গুটি থেকে আমের আকার বড় হয়েছে। তুলনামূলক কম ঝরেছে। এজন্য বেশি উৎপাদনের আশা করছি।উৎপাদনে রেকর্ডের আশা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের শপগুলোতে যাবে সাতক্ষীরার আম।

সরকারী ভাবে আম নিরাপদ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ ও বাজারজাত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।আগামী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য স্থানীয় আম পাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চাষিদের। ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে আম পাড়লে অপরিপক্ব থেকে যাবে।ইতিমধ্যে বাজার মনিটরিংসহ কড়া নজর দারীতে রয়েছে প্রশাসন।

বিজনেস বাংলাদেশ/  হাবিব

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় এবার আমের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত : ০১:৪৪:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩

সাতক্ষীরায় চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ঝড়বৃষ্টির কবলে না পড়ায় অধিক ফলনের আশা করছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। গত বছর আবহাওয়া প্রতিকূলের কারণে আমের ফলন কম হয়েছিল। এবছর প্রতি গাছে যেভাবে আম ঝুলছে তাতে অনেক ভাল ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পাকে। এ জন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। গত কয়েক বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে কিছু গুটি ঝরে পড়ছে। এতে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না দাবি কৃষি বিভাগের।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ও বিদেশে রফতানি করা যাবে। এতে আয় হবে ২২৫ কোটি টাকারও বেশি।গত কয়েক বছর ধরে জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মল্লিকা, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য জাতের প্রচুর আম উৎপাদন হয়। চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়। এ বছর নবমবারের মতো ইংল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাবে এই জেলার আম।

আম চাষী তালা উপজেলার বড় কাশিপুর গ্রামের শেখ সইদুল ইসলাম বলেন, ‌আমাদের এলাকার আম অতুলনীয়। হিমসাগর বিখ্যাত। ল্যাংড়া ও আম্রপালির চাহিদা বেশি। এ বছরও জমি লিজ নিয়ে আমের চাষ করেছি।এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল আছে। আম অতিদ্রুত বড় হচ্ছে। গত কয়েক বছর দুর্যোগের কারণে মূলধন হারিয়ে ফেলেছিলাম। এবার ফলন অনেক ভাল হয়েছে আশা করছি লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের আমচাষী রইচউদ্দীন সরদার বলেন,গত বছর উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান হয়েছিল। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান পরিচর্যা, পোকামাকড় মুক্ত করতে ওষুধ প্রয়োগ, ফলনের পর বাজারজাত, শ্রমিকের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ফলন ভালো হলে আমাদের লাভ হয়। এবার আশা করছি, লাভের মুখ দেখবো।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তদার মতিয়ার রহমান বলেন,এ বছর কাঁচা আমের মণ ১৪০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে কম দামে কাঁচা আম কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা অনেকটা লাভবান হচ্ছে।গত বছর পাকা আমের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল এবার আরও বেশি দামে বিক্রি হবে। আমের সাইজ বড় ও দেখতে সুন্দর হলে ৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হবে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। সেই পরিমাণ গুটি ধরেছে। গুটি থেকে আমের আকার বড় হয়েছে। তুলনামূলক কম ঝরেছে। এজন্য বেশি উৎপাদনের আশা করছি।উৎপাদনে রেকর্ডের আশা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের শপগুলোতে যাবে সাতক্ষীরার আম।

সরকারী ভাবে আম নিরাপদ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ ও বাজারজাত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।আগামী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য স্থানীয় আম পাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চাষিদের। ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে আম পাড়লে অপরিপক্ব থেকে যাবে।ইতিমধ্যে বাজার মনিটরিংসহ কড়া নজর দারীতে রয়েছে প্রশাসন।

বিজনেস বাংলাদেশ/  হাবিব