০৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

বসুন্ধরা কিংসের শারজা শিক্ষা

ব্যবধানটা জানা ছিল আগে থেকেই। যতই শক্তি বাড়ানো হোক না কেন, শারজা এফসি যে মানে-গুনে অনেক এগিয়ে সেটা জেনেই মঙ্গলবার রাতে শারজা স্টেডিয়ামে নেমেছিল বসুন্ধরা কিংস। তারপরও তারা লড়াই করেছে চোখে চোখ রেখে।

প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই প্রবল প্রতিপক্ষকে গোল করতে না দেওয়ার কৃতিত্বের দাবী করতেই পারে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। তবে সেই প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে স্বাগতিক দলের তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড লুয়ানজিনহো পেরেইরার নিখুঁত ফিনিশিংয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিটে ব্রাজিল শীর্ষ লিগের দল আভাই এফসিতে বেড়ে ওঠা ব্রাজিলিয়ান করলেন আরেকটি গোল। তাতেই এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে কিংসের অভিষেকটা হলো ২-০ হারে। যে হারে শেষ হলো এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ লিগের পরের ধাপে খেলার স্বপ্ন।

স্কোরলাইনটা এক পাশে রাখলে, এই ম্যাচ হতে পারে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের জন্য বড় শিক্ষা। ঘরোয়া ফুটবলে তারা টানা চারবারের চ্যাম্পিয়ন। তবে এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে সাফল্য পেতে ঘরের মাঠের অপ্রতিরোধ্য দলটিও যে যথেষ্ট নয়, সেটাই মঙ্গলবার রাতে মরুর দেশে জানা হয়ে গেলো বসুন্ধরার।

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শারজা এফসির অতীত বেশ সমৃদ্ধ। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের লিগেরও বেশ কদর রয়েছে। তাই এ দেশটির ক্লাবগুলোতে বিশ্বমানের তারকার ছড়াছড়ি। এই শারজা দলেই তো আছেন দুজন সাবেক বার্সেলোনার তারকা। আর ইউরোপের বিভিন্ন জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারের অভাব নেই।

তাদের সামনে আনিসুর রহমান জিকো, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, সাদ উদ্দিনরা যে নস্যি সেটা আগেভাগেই বলা যায়। তবে মাঠে কিংস নিজেদের অসহায় রূপটা দেখাতে চায়নি। নেতিবাচক রক্ষণাত্মক খেলায় ফুটবলের সহজাত সৌন্দর্য্য নষ্ট করার বিকল্প ছিল না তাদের সামনে। তাতে তারা সফলও হতে পারতো যদি না প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লুয়ানজিনহো জালের দেখা পেতেন।

শারজা দলটা কতটা ভয়ঙ্কর, তার বড় প্রমা তাদের তারকা সমৃদ্ধ আক্রমণভাগ। এক দিকে বার্সায় খেলা বসনিয়ান তারকা পিয়ানিচ একের পর এক আক্রমণে কিংস রক্ষণকে ব্যস্ত রেখেছেন। অন্যদিকে নাম্বার নাইন পজিশনে আরেক বার্সা তারকা আলকাসার গার্সিয়া ভীতি ছড়িয়েছেন চোখ ধাধানো প্রচেষ্টায়। আর লুয়ান পেরেইরা তো সারাক্ষণ ওত পেতে ছিলেন সুযোগ কাজে লাগাতে। তবে কিংসের তেকাঠীর নিচে আছেন একজন নির্ভিক যোদ্ধা জিকো। যিনি বারবার হতাশায় ডুবিয়েছেন স্বাগতিক আক্রমণভাগকে। অসাধারণ সব সেভে একটা সময় শারজার ফরোয়ার্ডলাইনকে রীতিমত বিরক্ত করে তোলেন বাংলাদেশ গোলকিপার।

ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস থেকে বল পেয়েছিলেন আলকাসার। স্পেন ও বার্সেলোনার সাবেব ফরোয়ার্ডের বাঁ পায়ের কোনাকুনি শট রুখে দিয়ে নিজের জাত চেনানো শুরু জিকোর। ২১ মিনিটে লং বল লাফিয়ে উঠেও ক্লিয়ার করতে পারেননি বিশ্বনাথ ঘোষ। সেই বল পেয়ে লুয়ানের নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান জিকো। ৩০ মিনিটে পিয়ানিচের ক্রসে শাহিদ আবদেল্লাহর হেড বার উচিয়ে বাইরে যায।

এরপর কুলিং ব্রেক থেকে ফিরে প্রথমার্ধে বলার মতো প্রথম সুযোগ তৈরী করে বসুন্ধরা কিংস। রবসন রবিনহোর কর্নারে ঠিকই মাথা ছুঁইয়েছিলেন ডরিয়েলটন গোমেজ। তবে তার হেড শারজার এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে বাইরে জাল কাঁপায়।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে চাপ বাড়িয়ে দেয় শারজা। দলটির অভিজ্ঞ কোচও ডাগআউট থেকে চেপে ধরার তাগিদ দিচ্ছিলেন বারবার। কোচের চাওয়াটা পূরণে কিংসের রক্ষণে হামলে পড়ে শারজা। ৪০ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন পিয়ানিচ। তবে জিকো দ্রুত ছুটে এসে বল আয়ত্বে নেন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে অবশ্য কিংসের সব প্রতিরোধ ভেঙে যায় সমন্বিত এক আক্রমণে। কাইওর থ্রু পাস ধরে পিয়ানিচ বাইলাইনের উপর থেকে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান গোলমুখে। মার্কার বিশ্বনাথকে সুযোগ না দিয়ে লুয়ান পেরেইরা ঠিকই পা ছুঁইয়ে জিকোকে পরাস্থ করেন।

বিরতি থেকে ফিরে অবশ্য কিংস চেষ্টা করেছিল ম্যাচে ফেরার। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট করেন দলটির দুই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মিগেল ফিগেইরা ও ডরিয়েলটন গোমেজ। পাল্টা আক্রমণ থেকে ডরিয়েলটনের পাস ধরে মিগেল ভালো জায়গায় বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। ৫২ মিনিটে সেরা সুযোগটা নষ্ট করেন ডরিয়েলটন। মিগেলের পাস ধরে ডরিয়েলটন শট নিতে একটু দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত শারজা গোলরক্ষকের শরীর বরাবর মেরে সেরা সুযোগটাই হারান ব্রাজিলিয়ান মার্কসম্যান। এর দশ মিনিট পর জিকো আরেকটি ভালো সেভ করে দলকে ম্যাচে রেখেছিলেন।

৭০ মিনিটে পিয়ানিচের ফ্রি-কিক জিকো রুখে দিলে ফিরতি বলে শারজার প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন আসরর গফুরভ। তবে এই চাপটা ধরে রেখে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় স্বাগতিকরা। কর্নার থেকে পাওয়া বল ক্রস করে গোলমুখ ফেলেন সেলিম। গফুরভ ও তপু বর্মণকে সুযোগ না দিয়ে অনেকটা লাফিয়ে উঠে দারুণ হেডে গোল করেন লুয়ান পেরেইরা। তাতেই বলতে গেলে মেষ হয়ে যায় বসুন্ধরার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ।

শেষ দিকে কয়েকটি পরিবর্তন করেও ম্যাচের ভাগ্য বদলাতে পারেননি বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন। এখন তাই তাকে শুরু করতে হবে এএফসি কাপের গ্রুপপর্বের পরিকল্পনা।

জনপ্রিয়

বসুন্ধরা কিংসের শারজা শিক্ষা

প্রকাশিত : ০৩:৫১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

ব্যবধানটা জানা ছিল আগে থেকেই। যতই শক্তি বাড়ানো হোক না কেন, শারজা এফসি যে মানে-গুনে অনেক এগিয়ে সেটা জেনেই মঙ্গলবার রাতে শারজা স্টেডিয়ামে নেমেছিল বসুন্ধরা কিংস। তারপরও তারা লড়াই করেছে চোখে চোখ রেখে।

প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই প্রবল প্রতিপক্ষকে গোল করতে না দেওয়ার কৃতিত্বের দাবী করতেই পারে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। তবে সেই প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে স্বাগতিক দলের তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড লুয়ানজিনহো পেরেইরার নিখুঁত ফিনিশিংয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিটে ব্রাজিল শীর্ষ লিগের দল আভাই এফসিতে বেড়ে ওঠা ব্রাজিলিয়ান করলেন আরেকটি গোল। তাতেই এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে কিংসের অভিষেকটা হলো ২-০ হারে। যে হারে শেষ হলো এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ লিগের পরের ধাপে খেলার স্বপ্ন।

স্কোরলাইনটা এক পাশে রাখলে, এই ম্যাচ হতে পারে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের জন্য বড় শিক্ষা। ঘরোয়া ফুটবলে তারা টানা চারবারের চ্যাম্পিয়ন। তবে এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে সাফল্য পেতে ঘরের মাঠের অপ্রতিরোধ্য দলটিও যে যথেষ্ট নয়, সেটাই মঙ্গলবার রাতে মরুর দেশে জানা হয়ে গেলো বসুন্ধরার।

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শারজা এফসির অতীত বেশ সমৃদ্ধ। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের লিগেরও বেশ কদর রয়েছে। তাই এ দেশটির ক্লাবগুলোতে বিশ্বমানের তারকার ছড়াছড়ি। এই শারজা দলেই তো আছেন দুজন সাবেক বার্সেলোনার তারকা। আর ইউরোপের বিভিন্ন জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারের অভাব নেই।

তাদের সামনে আনিসুর রহমান জিকো, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, সাদ উদ্দিনরা যে নস্যি সেটা আগেভাগেই বলা যায়। তবে মাঠে কিংস নিজেদের অসহায় রূপটা দেখাতে চায়নি। নেতিবাচক রক্ষণাত্মক খেলায় ফুটবলের সহজাত সৌন্দর্য্য নষ্ট করার বিকল্প ছিল না তাদের সামনে। তাতে তারা সফলও হতে পারতো যদি না প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লুয়ানজিনহো জালের দেখা পেতেন।

শারজা দলটা কতটা ভয়ঙ্কর, তার বড় প্রমা তাদের তারকা সমৃদ্ধ আক্রমণভাগ। এক দিকে বার্সায় খেলা বসনিয়ান তারকা পিয়ানিচ একের পর এক আক্রমণে কিংস রক্ষণকে ব্যস্ত রেখেছেন। অন্যদিকে নাম্বার নাইন পজিশনে আরেক বার্সা তারকা আলকাসার গার্সিয়া ভীতি ছড়িয়েছেন চোখ ধাধানো প্রচেষ্টায়। আর লুয়ান পেরেইরা তো সারাক্ষণ ওত পেতে ছিলেন সুযোগ কাজে লাগাতে। তবে কিংসের তেকাঠীর নিচে আছেন একজন নির্ভিক যোদ্ধা জিকো। যিনি বারবার হতাশায় ডুবিয়েছেন স্বাগতিক আক্রমণভাগকে। অসাধারণ সব সেভে একটা সময় শারজার ফরোয়ার্ডলাইনকে রীতিমত বিরক্ত করে তোলেন বাংলাদেশ গোলকিপার।

ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস থেকে বল পেয়েছিলেন আলকাসার। স্পেন ও বার্সেলোনার সাবেব ফরোয়ার্ডের বাঁ পায়ের কোনাকুনি শট রুখে দিয়ে নিজের জাত চেনানো শুরু জিকোর। ২১ মিনিটে লং বল লাফিয়ে উঠেও ক্লিয়ার করতে পারেননি বিশ্বনাথ ঘোষ। সেই বল পেয়ে লুয়ানের নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান জিকো। ৩০ মিনিটে পিয়ানিচের ক্রসে শাহিদ আবদেল্লাহর হেড বার উচিয়ে বাইরে যায।

এরপর কুলিং ব্রেক থেকে ফিরে প্রথমার্ধে বলার মতো প্রথম সুযোগ তৈরী করে বসুন্ধরা কিংস। রবসন রবিনহোর কর্নারে ঠিকই মাথা ছুঁইয়েছিলেন ডরিয়েলটন গোমেজ। তবে তার হেড শারজার এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে বাইরে জাল কাঁপায়।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে চাপ বাড়িয়ে দেয় শারজা। দলটির অভিজ্ঞ কোচও ডাগআউট থেকে চেপে ধরার তাগিদ দিচ্ছিলেন বারবার। কোচের চাওয়াটা পূরণে কিংসের রক্ষণে হামলে পড়ে শারজা। ৪০ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন পিয়ানিচ। তবে জিকো দ্রুত ছুটে এসে বল আয়ত্বে নেন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে অবশ্য কিংসের সব প্রতিরোধ ভেঙে যায় সমন্বিত এক আক্রমণে। কাইওর থ্রু পাস ধরে পিয়ানিচ বাইলাইনের উপর থেকে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান গোলমুখে। মার্কার বিশ্বনাথকে সুযোগ না দিয়ে লুয়ান পেরেইরা ঠিকই পা ছুঁইয়ে জিকোকে পরাস্থ করেন।

বিরতি থেকে ফিরে অবশ্য কিংস চেষ্টা করেছিল ম্যাচে ফেরার। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট করেন দলটির দুই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মিগেল ফিগেইরা ও ডরিয়েলটন গোমেজ। পাল্টা আক্রমণ থেকে ডরিয়েলটনের পাস ধরে মিগেল ভালো জায়গায় বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। ৫২ মিনিটে সেরা সুযোগটা নষ্ট করেন ডরিয়েলটন। মিগেলের পাস ধরে ডরিয়েলটন শট নিতে একটু দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত শারজা গোলরক্ষকের শরীর বরাবর মেরে সেরা সুযোগটাই হারান ব্রাজিলিয়ান মার্কসম্যান। এর দশ মিনিট পর জিকো আরেকটি ভালো সেভ করে দলকে ম্যাচে রেখেছিলেন।

৭০ মিনিটে পিয়ানিচের ফ্রি-কিক জিকো রুখে দিলে ফিরতি বলে শারজার প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন আসরর গফুরভ। তবে এই চাপটা ধরে রেখে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় স্বাগতিকরা। কর্নার থেকে পাওয়া বল ক্রস করে গোলমুখ ফেলেন সেলিম। গফুরভ ও তপু বর্মণকে সুযোগ না দিয়ে অনেকটা লাফিয়ে উঠে দারুণ হেডে গোল করেন লুয়ান পেরেইরা। তাতেই বলতে গেলে মেষ হয়ে যায় বসুন্ধরার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ।

শেষ দিকে কয়েকটি পরিবর্তন করেও ম্যাচের ভাগ্য বদলাতে পারেননি বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন। এখন তাই তাকে শুরু করতে হবে এএফসি কাপের গ্রুপপর্বের পরিকল্পনা।