০৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

লালমনিরহাটে সবুজে ঢাকা তিস্তার চর অঞ্চল

লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলা বেষ্টিত তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতে করে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমলেও ৫ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরে এখন বিভিন্ন ফসলের সংখ্যাও বাড়ছে।

কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে। জেগে ওঠা চরের জমিতে যে পরিমাণ ভুট্টা চাষাবাদ বেড়েছে তা স্হানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবারাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চরের জমিতে আলু, পিয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রকম মসলা জাতীয় ফসল ও শাকসবজি চাষাবাদ হচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, তিস্তা বেষ্টিত এ জেলায় ২১ টি ইউনিয়নের জেগে ওঠা চর সবই চাষাবাদ যোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে যা গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি বেশি।

চর অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার জেগে থাকা চরে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন ভুট্টা, আলু, রসুন, পিয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, লালশাকসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল ও নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি গম, সরিষা, মসুর ডাল, ছোলা ও বাদাম।

চর অঞ্চলের কৃষকরা জানায়, সারা বছর জেগে ওঠা চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষাবাদ করা হয়। বন্যার পর জেগে ওঠা চরে পলি জমে থাকায় সারের পরিমাণ কম লাগে ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম থাকে এবং কীটনাশকের ব্যবহার লাগেই না। তাই ফসল উৎপাদনে ব্যয় অনেকটা কম হয়।

পাটগ্রাম উপজেলার সরকারের হাট এলাকার কৃষক জয়নাল (৪৮) জানান, প্রায় ৫ একর জমিতে আলু, ভুট্টা ও শাকসবজিসহ ফসল চাষাবাদ করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে আর ভালো ভাবে যদি ফসল ঘরে তুলতে পারি তাহলে বন্যায় যে পরিমাণে ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা পুষিয়ে যাবে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের কৃষক লিটন মিয়া ( ৪৮) জানান, তিস্তা নদীর বন্যা আর ভাঙনে আমরা প্রতি বছর অনেক ক্ষতির মূখে পড়ে থাকি। পানি শুকিয়ে চর জাগলে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি। আমি কয়েক একর জমিতে আগুর আলুসহ অন্যান্য ফসল লাগিয়েছি। যদি বাজার দর ভালো থাকে আর কোন ধরনের বিপদ না আসে তাহলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কৃষক জব্বার মিয়া (৫৩) জানান, এই সময়ে তিস্তার জেগে ওঠা চরে আমরা কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। নদীর পানি নেমে গেলে সামান্য খরচে ফসল ঘরে তুলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা পূরণ করে নেই। আমি ৪৯ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়া ৩২ শতক জমিতে লালশাক ৫৬ শতক জমিতে আগুর ভুট্টা চাষাবাদ করেছি। জমিতে পলি জমে থাকার কারণে খরচ নেই বললে চলে।

সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের প্রফুল্ল মাষ্টার (৪৬) জানান, গেল বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাই এই সময়টায় চরের জমি গুলোতে সব রকম ফসল চাষাবাদ করি। কেননা অন্যান্য সময় চাষাবাদ করতে গেলে সার, কীটনাশক, সেচ দিতে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয় ফসল বিক্রি করে সে টাকা আয় হয় না। সে কারণে নদীর পানি নেমে যাওয়ার পর চরের জমিতে আমি ৪২ শতকে কাঁচা মরিচ, ২৮ শতকে ফুলকপি, ১ বিঘায় ভুট্টা, ১৩ শতকে লাউ চাষাবাদ করেছি।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের কারণে বদলে গেছে তিস্তা চরের দৃশ্যপট। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের চেয়ে এবছর অনেক চাষাবাদ বেড়েছে চর অঞ্চলে। প্রতি বছর উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক হারে ক্ষতি স্বাদিত হয়। তাই চর অঞ্চলের সব চাষিদের সরকারের প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/bh

ট্যাগ :

রামগঞ্জে হতদরিদ্র হৃদয়ের স্বপ্ন পুরন করবে স্মার্ট জহির

লালমনিরহাটে সবুজে ঢাকা তিস্তার চর অঞ্চল

প্রকাশিত : ০৭:১৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলা বেষ্টিত তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতে করে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমলেও ৫ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের শতাধিক চরে এখন বিভিন্ন ফসলের সংখ্যাও বাড়ছে।

কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে। জেগে ওঠা চরের জমিতে যে পরিমাণ ভুট্টা চাষাবাদ বেড়েছে তা স্হানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবারাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চরের জমিতে আলু, পিয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রকম মসলা জাতীয় ফসল ও শাকসবজি চাষাবাদ হচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, তিস্তা বেষ্টিত এ জেলায় ২১ টি ইউনিয়নের জেগে ওঠা চর সবই চাষাবাদ যোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে যা গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি বেশি।

চর অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার জেগে থাকা চরে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন ভুট্টা, আলু, রসুন, পিয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, লালশাকসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল ও নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি গম, সরিষা, মসুর ডাল, ছোলা ও বাদাম।

চর অঞ্চলের কৃষকরা জানায়, সারা বছর জেগে ওঠা চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষাবাদ করা হয়। বন্যার পর জেগে ওঠা চরে পলি জমে থাকায় সারের পরিমাণ কম লাগে ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম থাকে এবং কীটনাশকের ব্যবহার লাগেই না। তাই ফসল উৎপাদনে ব্যয় অনেকটা কম হয়।

পাটগ্রাম উপজেলার সরকারের হাট এলাকার কৃষক জয়নাল (৪৮) জানান, প্রায় ৫ একর জমিতে আলু, ভুট্টা ও শাকসবজিসহ ফসল চাষাবাদ করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে আর ভালো ভাবে যদি ফসল ঘরে তুলতে পারি তাহলে বন্যায় যে পরিমাণে ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা পুষিয়ে যাবে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের কৃষক লিটন মিয়া ( ৪৮) জানান, তিস্তা নদীর বন্যা আর ভাঙনে আমরা প্রতি বছর অনেক ক্ষতির মূখে পড়ে থাকি। পানি শুকিয়ে চর জাগলে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি। আমি কয়েক একর জমিতে আগুর আলুসহ অন্যান্য ফসল লাগিয়েছি। যদি বাজার দর ভালো থাকে আর কোন ধরনের বিপদ না আসে তাহলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কৃষক জব্বার মিয়া (৫৩) জানান, এই সময়ে তিস্তার জেগে ওঠা চরে আমরা কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। নদীর পানি নেমে গেলে সামান্য খরচে ফসল ঘরে তুলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা পূরণ করে নেই। আমি ৪৯ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়া ৩২ শতক জমিতে লালশাক ৫৬ শতক জমিতে আগুর ভুট্টা চাষাবাদ করেছি। জমিতে পলি জমে থাকার কারণে খরচ নেই বললে চলে।

সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের প্রফুল্ল মাষ্টার (৪৬) জানান, গেল বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাই এই সময়টায় চরের জমি গুলোতে সব রকম ফসল চাষাবাদ করি। কেননা অন্যান্য সময় চাষাবাদ করতে গেলে সার, কীটনাশক, সেচ দিতে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয় ফসল বিক্রি করে সে টাকা আয় হয় না। সে কারণে নদীর পানি নেমে যাওয়ার পর চরের জমিতে আমি ৪২ শতকে কাঁচা মরিচ, ২৮ শতকে ফুলকপি, ১ বিঘায় ভুট্টা, ১৩ শতকে লাউ চাষাবাদ করেছি।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের কারণে বদলে গেছে তিস্তা চরের দৃশ্যপট। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের চেয়ে এবছর অনেক চাষাবাদ বেড়েছে চর অঞ্চলে। প্রতি বছর উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক হারে ক্ষতি স্বাদিত হয়। তাই চর অঞ্চলের সব চাষিদের সরকারের প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/bh