০১:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

ভোলায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দিল শিক্ষার্থীরা, ভিডিও ভাইরাল

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপূর ইউনিয়নের শান্তির হাট বাজার সংলগ্ন ৭ নং চরমনসা সাহিদা রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক খুকু রাণী দে’কে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

গত ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে।

৩১ জানুয়ারি বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নোমানের ইন্ধনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হক বয়াতী, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো. বশিরের নেতৃত্বে প্রধান শিক্ষিকা খুকু রাণীর বিরেুদ্ধে ঝাড়ু ও জুতার মিছিল করে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

অভিযুক্তরা সবাই স্কুল কমিটির সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। অভিযুক্তরা বলেন, খুকু রাণীর সাথে স্কুলের শিক্ষকদের কোন সু-সম্পর্ক নেই। এলাকার মানুষের সাথে কোন ভাল সম্পর্ক নেই। স্কুলের ভাল মন্দ নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নাই। তিনি শুধু স্কুলে আসেন আর যান। এই স্কুলে কোন পড়া লেখা হয়না। ওনার বিরুদ্ধে অফিসে (উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস) অনেক দরখাস্ত দিছি। কিন্তু কোন কাজ হয়না দেইখা এলাকার মানুষ এইবার প্রতিবাদ করছে। আমরা তারে চইলা যাইতে সহযোগীতা করছি। কোন লাঞ্চিত করি নাই এবং শিশুদেকে দিয়া আমরা কোন মিছিলও করাই নাই।

স্কুলের শিশুদের সাথে কথা বললে তারা বলে, কমিটির লোকজন আমাদের দিয়া ম্যাডামের বিরুদ্ধে জুতার মিছিল করাইছে। আমরা ম্যাডামরে খুব ভালবাসি।

লাঞ্চিত প্রধান শিক্ষিকা খুকু রাণী গনমাধ্যমকে বলেন, আমি ষরযন্ত্রের শিকার। আব্দুল মান্নান (ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক) আমার স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার চাই।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নোমান বলেন, ঘটনার সময় আমি আমার কর্মস্থলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেে ছিলাম। ঘটনা শুনে স্কুলে আসি এবং স্কুল থেকে সবাইকে চলে যেতে বলি। এছাড়া প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। প্রতিকার হয়না বিধায় এলাকার মানুষ ক্ষ্যাপেছে।

এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাছিমা আক্তার বলেন, ঘটনাটি আমি জানিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষক অভিযোগ দিলে ব্যাবস্থা নেব।

ভোলা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষে আমরা রিপোর্ট হাতে পেলে ব্যাবস্থা নেব। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষিকার বদলি দাবি করেছেন। আমরা বলেছি অন্যত্র দিয়ে দেব। তারপরেও একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এটাতো আগে থেকে বোঝার সুযোগ ছিলনা।

অভিভাবক ও স্থানীয়রা বলছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। কোন অবস্থাতেই এই ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায়না। স্কুল কমিটির লোকজন কোমলমতি শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এই সব শিশুরা আজকে কি শিখলো। সামাজিক মুল্যেবোধ, দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করা ও ছাত্র শিক্ষকের যে মুল্যেবোধ থাকা দরকার তা স্থানীয় নোংড়া রাজনীতির কাছে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনা আমি শুনিনি। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেব।

বিজনেস বাংলাদেশ/এমএইচটি

জনপ্রিয়

ফরিদপুর চর অঞ্চল ও কৃষকদের মাঝে জেলা প্রসাশকের গামবুট বিতরণ

ভোলায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দিল শিক্ষার্থীরা, ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত : ০৬:০৩:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৪

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপূর ইউনিয়নের শান্তির হাট বাজার সংলগ্ন ৭ নং চরমনসা সাহিদা রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক খুকু রাণী দে’কে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

গত ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে।

৩১ জানুয়ারি বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নোমানের ইন্ধনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হক বয়াতী, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো. বশিরের নেতৃত্বে প্রধান শিক্ষিকা খুকু রাণীর বিরেুদ্ধে ঝাড়ু ও জুতার মিছিল করে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

অভিযুক্তরা সবাই স্কুল কমিটির সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। অভিযুক্তরা বলেন, খুকু রাণীর সাথে স্কুলের শিক্ষকদের কোন সু-সম্পর্ক নেই। এলাকার মানুষের সাথে কোন ভাল সম্পর্ক নেই। স্কুলের ভাল মন্দ নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নাই। তিনি শুধু স্কুলে আসেন আর যান। এই স্কুলে কোন পড়া লেখা হয়না। ওনার বিরুদ্ধে অফিসে (উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস) অনেক দরখাস্ত দিছি। কিন্তু কোন কাজ হয়না দেইখা এলাকার মানুষ এইবার প্রতিবাদ করছে। আমরা তারে চইলা যাইতে সহযোগীতা করছি। কোন লাঞ্চিত করি নাই এবং শিশুদেকে দিয়া আমরা কোন মিছিলও করাই নাই।

স্কুলের শিশুদের সাথে কথা বললে তারা বলে, কমিটির লোকজন আমাদের দিয়া ম্যাডামের বিরুদ্ধে জুতার মিছিল করাইছে। আমরা ম্যাডামরে খুব ভালবাসি।

লাঞ্চিত প্রধান শিক্ষিকা খুকু রাণী গনমাধ্যমকে বলেন, আমি ষরযন্ত্রের শিকার। আব্দুল মান্নান (ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক) আমার স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার চাই।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নোমান বলেন, ঘটনার সময় আমি আমার কর্মস্থলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেে ছিলাম। ঘটনা শুনে স্কুলে আসি এবং স্কুল থেকে সবাইকে চলে যেতে বলি। এছাড়া প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। প্রতিকার হয়না বিধায় এলাকার মানুষ ক্ষ্যাপেছে।

এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাছিমা আক্তার বলেন, ঘটনাটি আমি জানিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষক অভিযোগ দিলে ব্যাবস্থা নেব।

ভোলা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষে আমরা রিপোর্ট হাতে পেলে ব্যাবস্থা নেব। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষিকার বদলি দাবি করেছেন। আমরা বলেছি অন্যত্র দিয়ে দেব। তারপরেও একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এটাতো আগে থেকে বোঝার সুযোগ ছিলনা।

অভিভাবক ও স্থানীয়রা বলছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। কোন অবস্থাতেই এই ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায়না। স্কুল কমিটির লোকজন কোমলমতি শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এই সব শিশুরা আজকে কি শিখলো। সামাজিক মুল্যেবোধ, দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করা ও ছাত্র শিক্ষকের যে মুল্যেবোধ থাকা দরকার তা স্থানীয় নোংড়া রাজনীতির কাছে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনা আমি শুনিনি। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেব।

বিজনেস বাংলাদেশ/এমএইচটি