০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধু হাত দিয়েই দেশে কৃষির অগ্রযাত্রা শুরু

১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চাকরির ক্ষেত্রে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর অবদান ও অনুপ্রেরণাকে চির অটুট রাখতে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে কৃষিবিদ দিবস। কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে দেশের কৃষি শিক্ষা ও কৃষি খাত নিয়ে কথা বলেছেন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোঃ আসাদুজ্জামান আজাদ।

প্রশ্নঃ কেমন আছেন?

উত্তরঃ হ্যাঁ, মোটামুটি ভালো আছি।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদার ফলে  দেশের কৃষি সেক্টরে কীরকম প্রভাব পড়তো?

উত্তরঃ এটা নিয়ে বলতে গেলে অনেক আগে থেকে আসতে হবে। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশরা কখনোই চায়নি আমরা কৃষিতে এগিয়ে যাই। এ উদ্দেশ্যেই তাঁরা ধান চাষের মতো আবাদি জমিতেও নীল, পাট, চা  চাষ করাতো। শিল্পমূল্য আছে যে সব ফসলের শুধু সেগুলো চাষের জন্য কৃষকদের চাপ দিতো। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে দিতো না বা কম দিতো যেনো মানুষ গরিব থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে কোন কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এদেশে কৃষির অগ্রগতি শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়েই প্রথম শুরু হয়। তার প্রথম বাজেটের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিলো কৃষির উন্নয়নে। তিনিই প্রথম অনুধাবন করেছেন কৃষিবিদদের মর্যাদার উন্নতি ছাড়া দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব না। বর্তমানে কৃষিতে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি, এর পিছনে কৃষিবিদদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এবং বঙ্গবন্ধু সেদিন কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা না দিলে কেউ কৃষিতে আগ্রহী হতো না। তাঁর দূরদৃষ্টির ফলেই কৃষিতে এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা কৃষির প্রতি আগ্রহী হয়েছে।

প্রশ্নঃ কৃষিখাতে ইতিমধ্যে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এই খাতকে আরো এগিয়ে নিতে আর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

উত্তরঃ কৃষির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সকল ক্ষেত্রে আমরা যে স্বয়ম্বর হয়েছি তা কিন্তু নয়। এখনো বেশকিছু ফসল আমাদের আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে প্রচুর পরিমানে গম আমদানি করতে হয়। দেশে শীতকাল ছোট  হয়ে যাওয়ায় গমের ফলন কমে গেছে কিন্তু ফাস্টফুডের কারণে গমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে হাইব্রিড সবজির, ভুট্টার বীজ বাইরে থেকে এনে চাষ করা হচ্ছে। আগামি দিনের কৃষির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং দিনে দিনে আবাদি জমির পরিমান কমে যাওয়া। কৃষি জমির যাচ্ছেতাই ব্যবহর বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞানের বিষয়সমূহ শিক্ষায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা  করতে হবে।

প্রশ্নঃ কৃষি গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা যথেষ্ট কিনা? কেআইবির পক্ষ থেকে গবেষণায় কী ভুমিকা রাখতে পারে?

উত্তরঃ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে বরাদ্দ পায় তা যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। ইউজিসির বরাদ্দ দিয়ে চাহিদার ৩০—৪০% সম্পন্ন করা যায়। এই সল্প বাজেটে উন্নততর গবেষণা করা খুব কঠিন। তবে আমাদের গবেষকরা এর বাইরেও বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড নিয়ে আসেন। কাজেই আমরা শুধু ইউসিজির উপর নির্ভরশীল নই। আমাদের গবেষকরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ফান্ড নিয়ে আসেন। কেআইবির এই মুহুর্তে বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমাদের কি করনীয় এবং সেটা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কি পরিবর্তন আনা দরকার তা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এছাড়াও আমাদের দেশে নিজস্ব কোন কীটনাশক  কারখানা নেই। ফলে কৃষকদেরকে অল্প মূল্যে কীটনাশক দিতে পারছিনা। এই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এসব নিয়ে সরকারের উচিত ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসে কিভাবে দেশেই এই শিল্প তৈরি করা যায় সে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এসব বিষয়ে কেআইবি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

প্রশ্নঃ বিগত কয়েকবছরে দেশে বেশ কিছু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষি গবেষণাকে আরো বেগবান করতে গবেষণায় বরাদ্দ বেশি জরুরি নাকি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বেশি জরুরি?

উত্তরঃ প্রথমত সরকারের একটা কর্মপরিকল্পনা থাকে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাবে। সরকার কৃষি বিষয়ক শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছে বলেই নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমুহুর্তে বাজেট সবার জন্যই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। হয়তো একটা সময় সক্ষমতা হবে এবং সরকার পর্যাপ্ত বাজেট দিতে পারবে। এছাড়াও বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে আগামী দিনে প্রচুর দক্ষ গ্রাজুয়েট দরকার হবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনার মান বৃদ্ধি না করলে চাপে পড়ে যাবে এবং প্রয়োজনীয় বাজেট পাবেনা। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনার মান বৃদ্ধি করার একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে অবশ্যই গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বেশি জোর দিতে হবে।

প্রশ্নঃ বর্তমানে মেধাবী কৃষিবিদদের মাঝে দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর কারণ কি বলে মনে করছেন? 

উত্তরঃ এর কারন মূলত গ্রাজুয়েট এর তুলনায় প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্র নেই। এছাড়াও বাইরের দেশে অনেক বেশি প্রণোদনা দেয়, ভালো বেতন দেয়। কাজেই এটা বন্ধ করা কঠিন হবে। তাছাড়া বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, চাইলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের চাকরির যোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কৃষিপণ্য উৎপাদনের যতখানি সুযোগ—সম্ভাবনা রয়েছে তার সবটুকু কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে কিনা? সম্ভব না হলে কারণ কি?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেক ফসল আছে। আমরা চাইলেই সব ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব না। আমাদের অনেক কিছুরই উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। দেশে একদিকে জমির পরিমাণ কমছে অপরদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে যা একটি  নেতিবাচক দিক। আসলে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেরই  একে অপরের সাথে আদান—প্রদানের একটা সম্পর্ক থাকে। তার মানে তাদের প্রত্যেকেরই নির্ভরশীলতা আছে। সর্বোপরি সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হওয়া একটা কঠিন ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে তা কারও পক্ষে সম্ভব না।

প্রশ্নঃ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে সরকার কী পরিকল্পনা নিতে পারে? সেটি বাস্তবায়নে কৃষবিদরা কিভাবে অবদান রাখতে পারে?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেকেই আছে যারা কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে আগ্রহী। এক্ষেত্রে সরকারকে তাদের অনূকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে হবে। দেশেই যদি তৈরি করা যায় তাহলে রপ্তানির খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য পাওয়া যাবে, যা দেশের জন্যেই লাভজনক।

প্রশ্নঃ কৃষিবিদ দিবসে সরকারের নিকট থেকে কৃষিবিদদের প্রত্যাশা কি কি?

উত্তরঃ কৃষিবিদ হিসেবে সরকারের কাছে চাওয়া হলো, গবেষণা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যথাযথ মূল্যায়ন। বরাদ্দ বলতে শুধু অর্থ নয়, আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পদ সৃষ্টি, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং সঠিক সময়ে পদোন্নতি। পদোন্নতি না পেলে স্বভাবতই গবেষকরা গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারেন না।

প্রশ্নঃ বর্তমানে কৃষিপণ্যের দাম বেশি হওয়ার পেছনে যেসব কারণ আছে, যেমন সিন্ডিকেট, যথাসময়ে ফসল বাজারে না আসা, এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে কেআইবি থেকে কোনো ভুমিকা নেওয়া যেতে পারে কি না?

উত্তরঃ আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা  কেআইবির কাজ নয়। সরকারের নিজস্ব মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট আছে। তাদের কাজই বাজার মনিটরিং করা এবং কোন ত্রুটি বিচ্যুতি আছে কিনা তা নির্ণয় করে সমাধান করা। আমরা চাই বাজার মনিটরিং আরও শক্তিশালী হোক এবং ভোক্তাগণ ন্যায্য মূল্যে কৃষি পণ্য পাক।

প্রশ্ন: কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নিশিপ দেওয়ার একটা কথা চলছিল, এর অগ্রগতি কতদূর? 

উত্তরঃ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে যে একটা ইন্টার্নিশিপ রাখতে হবে, এটা বাইরের দেশে আছে। আমরাও বলছি ইন্টার্নশিপ রাখতে হবে। এর জন্য যদি সরকার একটা নীতিমালা এবং বাজেট বরাদ্দ দেয় তাহলে আমরা এটা করব। কারণ বাজেট ছাড়া ইন্টার্নশিপ করা যাবে না। এতগুলো ছেলেকে মাঠে নিয়ে যাওয়া, তাদের থাকা—খাওয়া এসবের খরচ আছে। সরকার এসবের জন্য একটা বরাদ্দ দিলে এটা আমরা চালু করতে পারব।

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

বঙ্গবন্ধু হাত দিয়েই দেশে কৃষির অগ্রযাত্রা শুরু

প্রকাশিত : ০৮:২৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চাকরির ক্ষেত্রে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর অবদান ও অনুপ্রেরণাকে চির অটুট রাখতে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে কৃষিবিদ দিবস। কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে দেশের কৃষি শিক্ষা ও কৃষি খাত নিয়ে কথা বলেছেন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোঃ আসাদুজ্জামান আজাদ।

প্রশ্নঃ কেমন আছেন?

উত্তরঃ হ্যাঁ, মোটামুটি ভালো আছি।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদার ফলে  দেশের কৃষি সেক্টরে কীরকম প্রভাব পড়তো?

উত্তরঃ এটা নিয়ে বলতে গেলে অনেক আগে থেকে আসতে হবে। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশরা কখনোই চায়নি আমরা কৃষিতে এগিয়ে যাই। এ উদ্দেশ্যেই তাঁরা ধান চাষের মতো আবাদি জমিতেও নীল, পাট, চা  চাষ করাতো। শিল্পমূল্য আছে যে সব ফসলের শুধু সেগুলো চাষের জন্য কৃষকদের চাপ দিতো। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে দিতো না বা কম দিতো যেনো মানুষ গরিব থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে কোন কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এদেশে কৃষির অগ্রগতি শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়েই প্রথম শুরু হয়। তার প্রথম বাজেটের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিলো কৃষির উন্নয়নে। তিনিই প্রথম অনুধাবন করেছেন কৃষিবিদদের মর্যাদার উন্নতি ছাড়া দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব না। বর্তমানে কৃষিতে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি, এর পিছনে কৃষিবিদদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এবং বঙ্গবন্ধু সেদিন কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা না দিলে কেউ কৃষিতে আগ্রহী হতো না। তাঁর দূরদৃষ্টির ফলেই কৃষিতে এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা কৃষির প্রতি আগ্রহী হয়েছে।

প্রশ্নঃ কৃষিখাতে ইতিমধ্যে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এই খাতকে আরো এগিয়ে নিতে আর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

উত্তরঃ কৃষির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সকল ক্ষেত্রে আমরা যে স্বয়ম্বর হয়েছি তা কিন্তু নয়। এখনো বেশকিছু ফসল আমাদের আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে প্রচুর পরিমানে গম আমদানি করতে হয়। দেশে শীতকাল ছোট  হয়ে যাওয়ায় গমের ফলন কমে গেছে কিন্তু ফাস্টফুডের কারণে গমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে হাইব্রিড সবজির, ভুট্টার বীজ বাইরে থেকে এনে চাষ করা হচ্ছে। আগামি দিনের কৃষির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং দিনে দিনে আবাদি জমির পরিমান কমে যাওয়া। কৃষি জমির যাচ্ছেতাই ব্যবহর বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞানের বিষয়সমূহ শিক্ষায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা  করতে হবে।

প্রশ্নঃ কৃষি গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা যথেষ্ট কিনা? কেআইবির পক্ষ থেকে গবেষণায় কী ভুমিকা রাখতে পারে?

উত্তরঃ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে বরাদ্দ পায় তা যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। ইউজিসির বরাদ্দ দিয়ে চাহিদার ৩০—৪০% সম্পন্ন করা যায়। এই সল্প বাজেটে উন্নততর গবেষণা করা খুব কঠিন। তবে আমাদের গবেষকরা এর বাইরেও বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড নিয়ে আসেন। কাজেই আমরা শুধু ইউসিজির উপর নির্ভরশীল নই। আমাদের গবেষকরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ফান্ড নিয়ে আসেন। কেআইবির এই মুহুর্তে বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমাদের কি করনীয় এবং সেটা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কি পরিবর্তন আনা দরকার তা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এছাড়াও আমাদের দেশে নিজস্ব কোন কীটনাশক  কারখানা নেই। ফলে কৃষকদেরকে অল্প মূল্যে কীটনাশক দিতে পারছিনা। এই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এসব নিয়ে সরকারের উচিত ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসে কিভাবে দেশেই এই শিল্প তৈরি করা যায় সে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এসব বিষয়ে কেআইবি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

প্রশ্নঃ বিগত কয়েকবছরে দেশে বেশ কিছু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষি গবেষণাকে আরো বেগবান করতে গবেষণায় বরাদ্দ বেশি জরুরি নাকি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বেশি জরুরি?

উত্তরঃ প্রথমত সরকারের একটা কর্মপরিকল্পনা থাকে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাবে। সরকার কৃষি বিষয়ক শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছে বলেই নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমুহুর্তে বাজেট সবার জন্যই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। হয়তো একটা সময় সক্ষমতা হবে এবং সরকার পর্যাপ্ত বাজেট দিতে পারবে। এছাড়াও বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে আগামী দিনে প্রচুর দক্ষ গ্রাজুয়েট দরকার হবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনার মান বৃদ্ধি না করলে চাপে পড়ে যাবে এবং প্রয়োজনীয় বাজেট পাবেনা। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনার মান বৃদ্ধি করার একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে অবশ্যই গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বেশি জোর দিতে হবে।

প্রশ্নঃ বর্তমানে মেধাবী কৃষিবিদদের মাঝে দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর কারণ কি বলে মনে করছেন? 

উত্তরঃ এর কারন মূলত গ্রাজুয়েট এর তুলনায় প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্র নেই। এছাড়াও বাইরের দেশে অনেক বেশি প্রণোদনা দেয়, ভালো বেতন দেয়। কাজেই এটা বন্ধ করা কঠিন হবে। তাছাড়া বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, চাইলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের চাকরির যোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কৃষিপণ্য উৎপাদনের যতখানি সুযোগ—সম্ভাবনা রয়েছে তার সবটুকু কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে কিনা? সম্ভব না হলে কারণ কি?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেক ফসল আছে। আমরা চাইলেই সব ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব না। আমাদের অনেক কিছুরই উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। দেশে একদিকে জমির পরিমাণ কমছে অপরদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে যা একটি  নেতিবাচক দিক। আসলে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেরই  একে অপরের সাথে আদান—প্রদানের একটা সম্পর্ক থাকে। তার মানে তাদের প্রত্যেকেরই নির্ভরশীলতা আছে। সর্বোপরি সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হওয়া একটা কঠিন ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে তা কারও পক্ষে সম্ভব না।

প্রশ্নঃ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে সরকার কী পরিকল্পনা নিতে পারে? সেটি বাস্তবায়নে কৃষবিদরা কিভাবে অবদান রাখতে পারে?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেকেই আছে যারা কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে আগ্রহী। এক্ষেত্রে সরকারকে তাদের অনূকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে হবে। দেশেই যদি তৈরি করা যায় তাহলে রপ্তানির খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য পাওয়া যাবে, যা দেশের জন্যেই লাভজনক।

প্রশ্নঃ কৃষিবিদ দিবসে সরকারের নিকট থেকে কৃষিবিদদের প্রত্যাশা কি কি?

উত্তরঃ কৃষিবিদ হিসেবে সরকারের কাছে চাওয়া হলো, গবেষণা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যথাযথ মূল্যায়ন। বরাদ্দ বলতে শুধু অর্থ নয়, আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পদ সৃষ্টি, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং সঠিক সময়ে পদোন্নতি। পদোন্নতি না পেলে স্বভাবতই গবেষকরা গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারেন না।

প্রশ্নঃ বর্তমানে কৃষিপণ্যের দাম বেশি হওয়ার পেছনে যেসব কারণ আছে, যেমন সিন্ডিকেট, যথাসময়ে ফসল বাজারে না আসা, এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে কেআইবি থেকে কোনো ভুমিকা নেওয়া যেতে পারে কি না?

উত্তরঃ আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা  কেআইবির কাজ নয়। সরকারের নিজস্ব মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট আছে। তাদের কাজই বাজার মনিটরিং করা এবং কোন ত্রুটি বিচ্যুতি আছে কিনা তা নির্ণয় করে সমাধান করা। আমরা চাই বাজার মনিটরিং আরও শক্তিশালী হোক এবং ভোক্তাগণ ন্যায্য মূল্যে কৃষি পণ্য পাক।

প্রশ্ন: কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নিশিপ দেওয়ার একটা কথা চলছিল, এর অগ্রগতি কতদূর? 

উত্তরঃ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে যে একটা ইন্টার্নিশিপ রাখতে হবে, এটা বাইরের দেশে আছে। আমরাও বলছি ইন্টার্নশিপ রাখতে হবে। এর জন্য যদি সরকার একটা নীতিমালা এবং বাজেট বরাদ্দ দেয় তাহলে আমরা এটা করব। কারণ বাজেট ছাড়া ইন্টার্নশিপ করা যাবে না। এতগুলো ছেলেকে মাঠে নিয়ে যাওয়া, তাদের থাকা—খাওয়া এসবের খরচ আছে। সরকার এসবের জন্য একটা বরাদ্দ দিলে এটা আমরা চালু করতে পারব।