১০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

এখনও উত্তাপ গরুর মাংসের বাজারে, মাছ-মুরগিতে স্বস্তি

পবিত্র ঈদুল আজহার আমেজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। তবে মুরগি ও মাছের দাম তুলনামূলক কমে আসায় মাছ-মুরগিতেই স্বস্তি খুঁজছেন কম আয়ের মানুষেরা।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে গরুর আমদানি কম থাকায় বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, ফলে মাংসও কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা চাইলেই সারাবছর এই দামে মুরগির মাংস বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু যখনই চাহিদা বেড়ে যায়, দামও অটোমেটিক বেড়ে যায়।

শুক্রবার (২৮ জুন) রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও ৭৫০ টাকার মধ্যেই ছিল। এছাড়াও প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এদিকে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের তুলনায় মাছের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি মিলছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়াও পাঙাশ ১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কার্প মাছ ২৬০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা, মলা মাছ ২৮০, কই ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে পাবদা মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে পাবদা মাছ ছিল ৩৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের ঘরে কোরবানির মাংস থাকায় ঈদের পর মুরগির চাহিদা কিছুটা কম। এ কারণে আগের সপ্তাহের চেয়ে দামও কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে গরুর পরিমাণ কম থাকায় বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরাতন মাংস ও হাড়-চর্বি একটু বাড়িয়ে দিলে আমরাও ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারব, কিন্তু এতে করে মানুষকে ঠকানো হবে।

গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে কোরবানির জন্য প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। যে কারণে ঈদের পরপর এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি দামে। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে।

তিনি বলেন, গরুর মাংস মোটামুটি ৮০০ টাকার মধ্যেই আটকে গেছে। আর কমবে বলে মনে হয় না। এই দামে বিক্রি করতে পারলে আমাদেরও কিছু লাভ থাকে। এর কমে বিক্রি করলে কিছু থাকে না। তবে আমরা যদি একটু দুই নাম্বারি করি, তাহলেই আবার কমে বিক্রি করতে পারবো। আমরা তো চর্বিটা আলাদা করে রেখে দেই, সেটা যদি মাংসের সাথে মিশিয়ে দিয়ে দেই, তাহলেই দাম কমে আসবে।

মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, কোরবানির ঈদের সময় বাজারে মুরগির চাহিদা খুবই কম থাকে। যেকারণে দামটাও তুলনামূলক কম। তবে কিছু মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারেননি, আবার অনেকে ছুটি না পাওয়ার কারণে, কাজের কারণে ঢাকায় ঈদ করেছে। তাদের বাসায় আবার মুরগির চাহিদা আছে।

বাড্ডা পাঁচতলা বাজার থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন মনিরুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, গরুর মাংস কিনতে গিয়ে গিয়ে মুরগির মাংস নিয়েছি। গত সপ্তাহেও দেখলাম ৭৫০ টাকা কেজি, আজকে ৮০০ টাকার নিচে দেবেই না। আমিও রাগ করে চলে এসে মুরগি নিয়েছি। ঈদের পর এই সময়টাতে গরুর মাংসের দাম কম থাকার কথা, কিন্তু দেখছি উল্টো।

বাজার করতে আসা মো. রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে মুরগি ও মাছের দাম কিছুটা কম। তবে গরুর মাংসটা আগের মতোই বাড়তির দিকে। একটা সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস খাওয়া হতো। এখন আর আগের মতো প্রতি সপ্তাহেই গরুর মাংস কেনা যায় না। কিনতে গেলেও বারবার হিসেব করতে হয়। তবে মুরগির দাম কম থাকাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির জায়গা।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

জনপ্রিয়

ফরিদপুর চর অঞ্চল ও কৃষকদের মাঝে জেলা প্রসাশকের গামবুট বিতরণ

এখনও উত্তাপ গরুর মাংসের বাজারে, মাছ-মুরগিতে স্বস্তি

প্রকাশিত : ০২:৩৫:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

পবিত্র ঈদুল আজহার আমেজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। তবে মুরগি ও মাছের দাম তুলনামূলক কমে আসায় মাছ-মুরগিতেই স্বস্তি খুঁজছেন কম আয়ের মানুষেরা।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে গরুর আমদানি কম থাকায় বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, ফলে মাংসও কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা চাইলেই সারাবছর এই দামে মুরগির মাংস বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু যখনই চাহিদা বেড়ে যায়, দামও অটোমেটিক বেড়ে যায়।

শুক্রবার (২৮ জুন) রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও ৭৫০ টাকার মধ্যেই ছিল। এছাড়াও প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এদিকে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের তুলনায় মাছের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি মিলছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়াও পাঙাশ ১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কার্প মাছ ২৬০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা, মলা মাছ ২৮০, কই ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে পাবদা মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে পাবদা মাছ ছিল ৩৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের ঘরে কোরবানির মাংস থাকায় ঈদের পর মুরগির চাহিদা কিছুটা কম। এ কারণে আগের সপ্তাহের চেয়ে দামও কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে গরুর পরিমাণ কম থাকায় বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরাতন মাংস ও হাড়-চর্বি একটু বাড়িয়ে দিলে আমরাও ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারব, কিন্তু এতে করে মানুষকে ঠকানো হবে।

গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে কোরবানির জন্য প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। যে কারণে ঈদের পরপর এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি দামে। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে।

তিনি বলেন, গরুর মাংস মোটামুটি ৮০০ টাকার মধ্যেই আটকে গেছে। আর কমবে বলে মনে হয় না। এই দামে বিক্রি করতে পারলে আমাদেরও কিছু লাভ থাকে। এর কমে বিক্রি করলে কিছু থাকে না। তবে আমরা যদি একটু দুই নাম্বারি করি, তাহলেই আবার কমে বিক্রি করতে পারবো। আমরা তো চর্বিটা আলাদা করে রেখে দেই, সেটা যদি মাংসের সাথে মিশিয়ে দিয়ে দেই, তাহলেই দাম কমে আসবে।

মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, কোরবানির ঈদের সময় বাজারে মুরগির চাহিদা খুবই কম থাকে। যেকারণে দামটাও তুলনামূলক কম। তবে কিছু মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারেননি, আবার অনেকে ছুটি না পাওয়ার কারণে, কাজের কারণে ঢাকায় ঈদ করেছে। তাদের বাসায় আবার মুরগির চাহিদা আছে।

বাড্ডা পাঁচতলা বাজার থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন মনিরুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, গরুর মাংস কিনতে গিয়ে গিয়ে মুরগির মাংস নিয়েছি। গত সপ্তাহেও দেখলাম ৭৫০ টাকা কেজি, আজকে ৮০০ টাকার নিচে দেবেই না। আমিও রাগ করে চলে এসে মুরগি নিয়েছি। ঈদের পর এই সময়টাতে গরুর মাংসের দাম কম থাকার কথা, কিন্তু দেখছি উল্টো।

বাজার করতে আসা মো. রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে মুরগি ও মাছের দাম কিছুটা কম। তবে গরুর মাংসটা আগের মতোই বাড়তির দিকে। একটা সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস খাওয়া হতো। এখন আর আগের মতো প্রতি সপ্তাহেই গরুর মাংস কেনা যায় না। কিনতে গেলেও বারবার হিসেব করতে হয়। তবে মুরগির দাম কম থাকাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির জায়গা।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে