১২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বন্দিতে ঠাসা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগার

বন্দিতে ঠাসা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগার। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতার পর থেকে গত ১৫ দিনে প্রতিটি কারাগারে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে।

কারাগার সুত্রে জানায়, গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল চার হাজার ৪১৬ জন। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) কারাগারটিতে বন্দি বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ জন। ২ হাজার ২৪৯ জনের ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছে দ্বিগুণেরও বেশি। অতিরিক্ত বন্দি থাকায় বন্দিদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে।

চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) প্রিজন এর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে বর্তমানে আটক বন্দির সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬৮। অথচ এসব কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা আছে ৭ হাজার ৭৭৮। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছে ৫ হাজার ৪০০ জন। ১ হাজার ৭৪২ জনের ধারণক্ষমতার কুমিল্লা কারাগারে ২ হাজার ৩১৭ জন। ৮৩০ জন ধারণক্ষমতার কক্সবাজার কারাগারে বন্দি আছে ৩ হাজার ৪৬৩ জন। ৭৮০ জন ধারণক্ষমতার ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া কারাগারে ১ হাজার ২৮৭ জন। ৫০০ জনের ধারণক্ষমতার নোয়াখালী কারাগারে ৮১০ জন। ৪৭৫ জন ধারণক্ষমতার চাঁদপুর কারাগারে ৭৮৬ জন। ৫৬৪ জন ধারণক্ষমতার ফেনী কারাগারে ৫১১ জন। ২৯৫ জন ধারণক্ষমতার লক্ষ্মীপুর কারাগারে ৬৩৬ জন। ১৪৮ জন ধারণক্ষমতার রাঙ্গামাটি কারাগারে ২৫৮ জন। ১১৪ জন ধারণক্ষমতার বান্দরবান কারাগারে ৩০৪ জন এবং ৮১ জন ধারণক্ষমতার খাগড়াছড়ি কারাগারে ১৯৬ জন বন্দি রয়েছে।

চট্টগ্রামে গত ১৬ জুলাই মুরাদপুর এবং ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় জন নিহত এবং আড়াই শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নগরী ও জেলায় ৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। এরমধ্যে নগরীর থানাগুলোতে ২২টি এবং জেলার থানাগুলোতে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত ৯৬৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি-পিআর) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে নগরীর থানাগুলোতে গত ১৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত মোট ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৫৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আবু তৈয়ব বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জেলার থানাগুলোতে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) টিপু সুলতান বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি কারাগারে বন্দি বেড়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি বেড়েছে এক হাজারের মতো।’

তিনি বলেন, ‘বন্দি বাড়লেও কারাগারে রাখতে এখনও সমস্যা হচ্ছে না। যদিও জেল কোড অনুযায়ী প্রতি জন বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ রাখার নিয়ম রয়েছে। বন্দি বেশি হওয়ার কারণে একই জায়গায় বেশি বন্দি রাখতে হচ্ছে। তবে খাবারে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। বন্দি অনুযায়ী খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আধুনিক সমাজে কারাগার মানেই শাস্তির জায়গা নয়, কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। কারাগারে যেহেতু বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি সেক্ষেত্রে বন্দিদের অসুবিধা হবে এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ একজন বন্দি আগে যতটুকু বিছানার মধ্যে থাকতে পারতো বর্তমানে আরও কয়েকজনকে নিয়ে একই স্থানে থাকতে হচ্ছে। এতে করে বন্দিদের কারাগারে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে আটক সব বন্দিই কিন্তু অপরাধীন নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত একজন বন্দির অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হবে না ততক্ষণ তাকে অপরাধী বলা যাবে না। তাই প্রতিটি বন্দিকে ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বর্তমানে যেহেতু মানুষ বেড়েছে, দুর্নীতিও বেড়েছে। সু-শাসনের ঘাটতি হয়েছে। সেক্ষেত্রে কারাগারে বন্দির সংখ্যাও বাড়বে। তাই রাষ্ট্রের এ বিষয়ে আগাম পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল।’

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

বন্দিতে ঠাসা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগার

প্রকাশিত : ১১:৪৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

বন্দিতে ঠাসা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগার। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতার পর থেকে গত ১৫ দিনে প্রতিটি কারাগারে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে।

কারাগার সুত্রে জানায়, গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল চার হাজার ৪১৬ জন। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) কারাগারটিতে বন্দি বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ জন। ২ হাজার ২৪৯ জনের ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছে দ্বিগুণেরও বেশি। অতিরিক্ত বন্দি থাকায় বন্দিদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে।

চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) প্রিজন এর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে বর্তমানে আটক বন্দির সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬৮। অথচ এসব কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা আছে ৭ হাজার ৭৭৮। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছে ৫ হাজার ৪০০ জন। ১ হাজার ৭৪২ জনের ধারণক্ষমতার কুমিল্লা কারাগারে ২ হাজার ৩১৭ জন। ৮৩০ জন ধারণক্ষমতার কক্সবাজার কারাগারে বন্দি আছে ৩ হাজার ৪৬৩ জন। ৭৮০ জন ধারণক্ষমতার ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া কারাগারে ১ হাজার ২৮৭ জন। ৫০০ জনের ধারণক্ষমতার নোয়াখালী কারাগারে ৮১০ জন। ৪৭৫ জন ধারণক্ষমতার চাঁদপুর কারাগারে ৭৮৬ জন। ৫৬৪ জন ধারণক্ষমতার ফেনী কারাগারে ৫১১ জন। ২৯৫ জন ধারণক্ষমতার লক্ষ্মীপুর কারাগারে ৬৩৬ জন। ১৪৮ জন ধারণক্ষমতার রাঙ্গামাটি কারাগারে ২৫৮ জন। ১১৪ জন ধারণক্ষমতার বান্দরবান কারাগারে ৩০৪ জন এবং ৮১ জন ধারণক্ষমতার খাগড়াছড়ি কারাগারে ১৯৬ জন বন্দি রয়েছে।

চট্টগ্রামে গত ১৬ জুলাই মুরাদপুর এবং ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় জন নিহত এবং আড়াই শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নগরী ও জেলায় ৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। এরমধ্যে নগরীর থানাগুলোতে ২২টি এবং জেলার থানাগুলোতে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত ৯৬৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি-পিআর) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে নগরীর থানাগুলোতে গত ১৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত মোট ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৫৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আবু তৈয়ব বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জেলার থানাগুলোতে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) টিপু সুলতান বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি কারাগারে বন্দি বেড়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি বেড়েছে এক হাজারের মতো।’

তিনি বলেন, ‘বন্দি বাড়লেও কারাগারে রাখতে এখনও সমস্যা হচ্ছে না। যদিও জেল কোড অনুযায়ী প্রতি জন বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ রাখার নিয়ম রয়েছে। বন্দি বেশি হওয়ার কারণে একই জায়গায় বেশি বন্দি রাখতে হচ্ছে। তবে খাবারে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। বন্দি অনুযায়ী খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আধুনিক সমাজে কারাগার মানেই শাস্তির জায়গা নয়, কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। কারাগারে যেহেতু বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি সেক্ষেত্রে বন্দিদের অসুবিধা হবে এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ একজন বন্দি আগে যতটুকু বিছানার মধ্যে থাকতে পারতো বর্তমানে আরও কয়েকজনকে নিয়ে একই স্থানে থাকতে হচ্ছে। এতে করে বন্দিদের কারাগারে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে আটক সব বন্দিই কিন্তু অপরাধীন নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত একজন বন্দির অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হবে না ততক্ষণ তাকে অপরাধী বলা যাবে না। তাই প্রতিটি বন্দিকে ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বর্তমানে যেহেতু মানুষ বেড়েছে, দুর্নীতিও বেড়েছে। সু-শাসনের ঘাটতি হয়েছে। সেক্ষেত্রে কারাগারে বন্দির সংখ্যাও বাড়বে। তাই রাষ্ট্রের এ বিষয়ে আগাম পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল।’

বিজনেস বাংলাদেশ/একে