০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেতার, শিল্পকলা, বিটিভিসহ কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হতো না

ছবি সংগৃহীত

নব্বই পরবর্তী দশকে দেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সাড়া জাগানো কণ্ঠশিল্পী মনির খান। চলচ্চিত্রেও ছিল তার পদচারণা। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে রাজনীতি থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দিলেন নতুন ঘোষণা। সমসাময়িক ইস্যুতে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন।

মনির খান: এমন সময়ে আসলে ভালো থাকার কথা নয়। আমার ধারণা দেশের অধিকাংশ মানুষ এই সময়ে ভালো নেই। তবে দেশ নতুন কিছু পেতে যাচ্ছে। আমরা নতুন করে দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছি, এটি একটি ইতিবাচক দিক। আশা করছি দ্রুত দেশের রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে। নতুন সম্ভাবনায় সূর্য উদিত হবে। আমাদের সবার উৎকণ্ঠা কেটে যাবে।

মনির খান: আমি প্রথম থেকেই আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন উদ্দীপ্ত ও বিস্মিত করেছে আমাকে।

মনির খান: আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেলাম, গৌরব অর্জন করলাম, এটি কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই হয়েছে। তরুণ সমাজই কিন্তু যে কোনো পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে, তার প্রমাণ কিন্তু এই ২০২৪ সালের এই আন্দোলন। গত ৫ আগস্ট যে স্বাধীনতা আমরা পেলাম, এটি নিয়ে কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। অনেক বড় আশা-ভরসা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বুলেট ও গুলির ভয়ে পিছপা না হয়ে, সবকিছু উপেক্ষা করে মানুষকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে। যদি এই ছাত্রদের আগামীর বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে ইতিপূর্বে যা ঘটছে আমাদের দেশে, তারচেয়ে ভালো কিছু হবে। আমি আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ের আলোকে সব সিদ্ধান্ত নেবে।

মনির খান: হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমি গতকাল (৭ আগস্ট) গাজীপুরের মাওনার কারওয়ান বাজারে বিএনপির একটি নতুন অফিস উদ্বোধন করেছি। আমি এখানে আমার বাগানবাড়িতে এসেছিলাম। সেই খবর শুনে এখানকার নেতাকর্মীরা আমাকে দলীয় অফিসটি উদ্বোনের প্রস্তাব দেয়। এখানে প্রধান অতিথি ছিলাম। সদ্য কারামুক্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

মনির খান: বর্তমানে দুষ্কৃতিকারীরা ভাঙচুর, লুটতরাজসহ যেসব ধ্বংসাত্মক কাজ দেশব্যাপী চালাচ্ছে, সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার কথা বলেছি। যারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের এসব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সুস্থ ও সুন্দর চিন্তার আহ্বান জানিয়েছি। সবাইকে নিয়ে সামনে যাওয়ার কথাও জানিয়েছি। ইতিপূর্বে আমাদের মধ্যে যা কিছু ঘটছে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে।

মনির খান: আমি সেসময় অভিমান থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসলে অভিমানটা কোথায় হয়! বাবা-ছেলের সঙ্গে হয়, স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে হয়। বিষয়টি হলো, যেখানে আন্তরিকতা থাকে, সেখানে মান-অভিমান হয়।

মনির খান: আমার অভিমানটা ছিলই মূলত নির্বাচনকেন্দ্রীক। আমি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। সে সময়ে আমাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না দিয়ে ওই আসনে জামায়াতের একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তখন অভিমান যেমন ছিল, পাশাপাশি তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনে যেন অংশ না নিই সেই চাপও ছিল। দলের প্রতি অভিমান ও সরকারের চাপ থেকেই দল থেকে পদত্যাগ করেছি। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর রাজনীতি করব না।

মনির খান: জ্বি, সেই নির্বাচনেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আমি ফোন বন্ধ করে একপ্রকার গা ঢাকা দিয়ে ছিলাম অনেকদিন।

মনির খান: আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম যে বেতারে আমার গান বাজানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে বেতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে আপনি বেতারে যে গানটি শুনেছেন বললেন, এটি নতুন গান নয়। এটি আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ড করা হয়েছিল।

মনির খান: সর্বশেষ আমাকে ২০০৮ সালের পর আর বেতার থেকে ডাকা হয়নি। সে বছরই আমি কাউন্সিলে বিএনপির পদপদবী নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করার পর শুধু বাংলাদেশ বেতারই নয়, শিল্পকলা একাডেমি, বিটিভিসহ কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

মনির খান: আমি সবসময় দেশের উন্নয়নের পক্ষে কথা বলি ও স্বপ্ন দেখি। আমি গতানুগতিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আগামীতেও থাকব না। আমি সবসময় উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখি। আমি রাজনৈতিকভাবে বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। আমি ছাত্রদল থেকে বড় বড় পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন যদি সুযোগ পাই, আবারও দলের হয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করব। ব্যক্তিজীবনে আমার কোনো উচ্চাভিলাষ বা চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি গানের মাধ্যমে যা অর্জন করেছি, তাতেই আমি সন্তুষ্ট।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস

জনপ্রিয়

ঢাকা কলেজের পুকুরে গোসল করতে নেমে মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

বেতার, শিল্পকলা, বিটিভিসহ কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হতো না

প্রকাশিত : ১২:১৬:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪

নব্বই পরবর্তী দশকে দেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সাড়া জাগানো কণ্ঠশিল্পী মনির খান। চলচ্চিত্রেও ছিল তার পদচারণা। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে রাজনীতি থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দিলেন নতুন ঘোষণা। সমসাময়িক ইস্যুতে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন।

মনির খান: এমন সময়ে আসলে ভালো থাকার কথা নয়। আমার ধারণা দেশের অধিকাংশ মানুষ এই সময়ে ভালো নেই। তবে দেশ নতুন কিছু পেতে যাচ্ছে। আমরা নতুন করে দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছি, এটি একটি ইতিবাচক দিক। আশা করছি দ্রুত দেশের রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে। নতুন সম্ভাবনায় সূর্য উদিত হবে। আমাদের সবার উৎকণ্ঠা কেটে যাবে।

মনির খান: আমি প্রথম থেকেই আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন উদ্দীপ্ত ও বিস্মিত করেছে আমাকে।

মনির খান: আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেলাম, গৌরব অর্জন করলাম, এটি কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই হয়েছে। তরুণ সমাজই কিন্তু যে কোনো পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে, তার প্রমাণ কিন্তু এই ২০২৪ সালের এই আন্দোলন। গত ৫ আগস্ট যে স্বাধীনতা আমরা পেলাম, এটি নিয়ে কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। অনেক বড় আশা-ভরসা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বুলেট ও গুলির ভয়ে পিছপা না হয়ে, সবকিছু উপেক্ষা করে মানুষকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে। যদি এই ছাত্রদের আগামীর বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে ইতিপূর্বে যা ঘটছে আমাদের দেশে, তারচেয়ে ভালো কিছু হবে। আমি আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ের আলোকে সব সিদ্ধান্ত নেবে।

মনির খান: হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমি গতকাল (৭ আগস্ট) গাজীপুরের মাওনার কারওয়ান বাজারে বিএনপির একটি নতুন অফিস উদ্বোধন করেছি। আমি এখানে আমার বাগানবাড়িতে এসেছিলাম। সেই খবর শুনে এখানকার নেতাকর্মীরা আমাকে দলীয় অফিসটি উদ্বোনের প্রস্তাব দেয়। এখানে প্রধান অতিথি ছিলাম। সদ্য কারামুক্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

মনির খান: বর্তমানে দুষ্কৃতিকারীরা ভাঙচুর, লুটতরাজসহ যেসব ধ্বংসাত্মক কাজ দেশব্যাপী চালাচ্ছে, সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার কথা বলেছি। যারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের এসব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সুস্থ ও সুন্দর চিন্তার আহ্বান জানিয়েছি। সবাইকে নিয়ে সামনে যাওয়ার কথাও জানিয়েছি। ইতিপূর্বে আমাদের মধ্যে যা কিছু ঘটছে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে।

মনির খান: আমি সেসময় অভিমান থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসলে অভিমানটা কোথায় হয়! বাবা-ছেলের সঙ্গে হয়, স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে হয়। বিষয়টি হলো, যেখানে আন্তরিকতা থাকে, সেখানে মান-অভিমান হয়।

মনির খান: আমার অভিমানটা ছিলই মূলত নির্বাচনকেন্দ্রীক। আমি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। সে সময়ে আমাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না দিয়ে ওই আসনে জামায়াতের একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তখন অভিমান যেমন ছিল, পাশাপাশি তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনে যেন অংশ না নিই সেই চাপও ছিল। দলের প্রতি অভিমান ও সরকারের চাপ থেকেই দল থেকে পদত্যাগ করেছি। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর রাজনীতি করব না।

মনির খান: জ্বি, সেই নির্বাচনেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আমি ফোন বন্ধ করে একপ্রকার গা ঢাকা দিয়ে ছিলাম অনেকদিন।

মনির খান: আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম যে বেতারে আমার গান বাজানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে বেতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে আপনি বেতারে যে গানটি শুনেছেন বললেন, এটি নতুন গান নয়। এটি আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ড করা হয়েছিল।

মনির খান: সর্বশেষ আমাকে ২০০৮ সালের পর আর বেতার থেকে ডাকা হয়নি। সে বছরই আমি কাউন্সিলে বিএনপির পদপদবী নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করার পর শুধু বাংলাদেশ বেতারই নয়, শিল্পকলা একাডেমি, বিটিভিসহ কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

মনির খান: আমি সবসময় দেশের উন্নয়নের পক্ষে কথা বলি ও স্বপ্ন দেখি। আমি গতানুগতিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আগামীতেও থাকব না। আমি সবসময় উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখি। আমি রাজনৈতিকভাবে বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। আমি ছাত্রদল থেকে বড় বড় পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন যদি সুযোগ পাই, আবারও দলের হয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করব। ব্যক্তিজীবনে আমার কোনো উচ্চাভিলাষ বা চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি গানের মাধ্যমে যা অর্জন করেছি, তাতেই আমি সন্তুষ্ট।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস