০৯:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আন্দোলনকারীদের উপর ওয়াসা কর্মচারীদের হামলা

ফজলুল্লাহ‘র পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন

ঘোষিত ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামেও চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহ পদত্যাগ না করায় লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ।

কর্মসূচির অংশ হিসাবে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ওয়াসা ভবন ঘেরাও করা হয়। শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচিতে ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহর লেলিয়ে দেয়া কর্মচারীরা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। ওয়াসার আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো ২০/৩০ একটি দল এসে আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় অংশ নেন। এসময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির বেদম প্রহর করে। আন্দোলনকারী ৬জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছে সচেতন নাগরিক সমাজ।

দুপুরে সাড়ে ১১টার দিকে পূর্বঘোষিত ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে সমবেত হই আমরা। শান্তিপূর্ণভাবে ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান করি। সেখান থেকে ওয়াসা এমডি কক্ষে গিয়ে কথা বলার চেষ্ঠা করি। এমডির রুমে প্রবেশের সাথে সাথে ফজলুল্লাহ উচ্চ স্বরে বলে উঠেন, “আপনারা বিএনপির নোয়াখালীর ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সাথে কথা বলেন। ওনাদের টাকা দিয়েছি। ওনারা আমাকে আরো পাঁচ বছর থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন”। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি সুর পাল্টিয়ে বিশৃঙ্খলার ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেন।

আন্দোলনে অংশ নেয়া কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম আছে। তিনি প্রত্যেকটা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। নিজের পরিবারের ২০জনকে অবৈধভাবে ওয়াসাতে চাকরি দিয়েছেন। নিজের ভাগিনের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ করছেন। সৈরশাসক সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশের টাকা পাচার করেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কর্মচারীদের লেলিয়ে দিয়ে হামলা করেছেন। আবার নিজের মুখেই বিএনপির নেতাকে ম্যানেজ করার কথা বলছেন। আমরা তার পদত্যাগ ও শাস্তি দাবি করছি। আমাদের আন্দোলন লাগাতার চলবে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগর বলেন, ওয়াসা এমডির নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনেক নিউজ হয়েছে। ওনার পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বর্তমান অন্তবর্তিকালীন সরকার ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। দ্রুত আমরা সেটা দেখতে পাবো।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া এম এ হানিফ নোমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসায় যে অনিয়ম চলছে তার বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি। এমডির অনিয়মে বিরুদ্ধে কথা বলায় তিনি তার সমর্থক নামে কিছু সন্ত্রাসীদের আমাদের উপর লেলিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক গ্লোগান দিয়ে এমডি অফিসের সামনে আমাদের ওপর হামলা করেছে তারা। সে জালিম হাসিনা সরকারের দোসর। আগের স্টাইলে তিনি ওয়াসা দখল করে রাখতে চাইছেন।

১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

জনপ্রিয়

ময়মনসিংহে শেখ হাসিনা, কাদেরের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা

আন্দোলনকারীদের উপর ওয়াসা কর্মচারীদের হামলা

ফজলুল্লাহ‘র পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন

প্রকাশিত : ০৭:৪১:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঘোষিত ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামেও চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহ পদত্যাগ না করায় লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ।

কর্মসূচির অংশ হিসাবে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ওয়াসা ভবন ঘেরাও করা হয়। শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচিতে ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহর লেলিয়ে দেয়া কর্মচারীরা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। ওয়াসার আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো ২০/৩০ একটি দল এসে আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় অংশ নেন। এসময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির বেদম প্রহর করে। আন্দোলনকারী ৬জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছে সচেতন নাগরিক সমাজ।

দুপুরে সাড়ে ১১টার দিকে পূর্বঘোষিত ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে সমবেত হই আমরা। শান্তিপূর্ণভাবে ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান করি। সেখান থেকে ওয়াসা এমডি কক্ষে গিয়ে কথা বলার চেষ্ঠা করি। এমডির রুমে প্রবেশের সাথে সাথে ফজলুল্লাহ উচ্চ স্বরে বলে উঠেন, “আপনারা বিএনপির নোয়াখালীর ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সাথে কথা বলেন। ওনাদের টাকা দিয়েছি। ওনারা আমাকে আরো পাঁচ বছর থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন”। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি সুর পাল্টিয়ে বিশৃঙ্খলার ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেন।

আন্দোলনে অংশ নেয়া কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম আছে। তিনি প্রত্যেকটা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। নিজের পরিবারের ২০জনকে অবৈধভাবে ওয়াসাতে চাকরি দিয়েছেন। নিজের ভাগিনের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ করছেন। সৈরশাসক সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশের টাকা পাচার করেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কর্মচারীদের লেলিয়ে দিয়ে হামলা করেছেন। আবার নিজের মুখেই বিএনপির নেতাকে ম্যানেজ করার কথা বলছেন। আমরা তার পদত্যাগ ও শাস্তি দাবি করছি। আমাদের আন্দোলন লাগাতার চলবে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগর বলেন, ওয়াসা এমডির নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনেক নিউজ হয়েছে। ওনার পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বর্তমান অন্তবর্তিকালীন সরকার ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। দ্রুত আমরা সেটা দেখতে পাবো।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া এম এ হানিফ নোমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসায় যে অনিয়ম চলছে তার বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি। এমডির অনিয়মে বিরুদ্ধে কথা বলায় তিনি তার সমর্থক নামে কিছু সন্ত্রাসীদের আমাদের উপর লেলিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক গ্লোগান দিয়ে এমডি অফিসের সামনে আমাদের ওপর হামলা করেছে তারা। সে জালিম হাসিনা সরকারের দোসর। আগের স্টাইলে তিনি ওয়াসা দখল করে রাখতে চাইছেন।

১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।