০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস

গণ-অভ্যুথানে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে

গণ-অভ্যুথানে নিহত সবার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভাষণটি একযোগে প্রচার করছে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র।

তিনি বলেন, আমি আগেও জানিয়েছি, আবারো জানাচ্ছি, গণ-অভ্যুথানে সকল শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহিদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হাল নাগাদ করা হতে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার তার যাত্রা লগ্নে “জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সব শহীদ পরিবার ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সব মানুষ ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

কুমিল্লা-নোয়াখালী সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা এসব এলাকার মানুষকে হতভম্ব করে দিয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এখানে বেশিরভাগ এলাকায় কোনো দিন বন্যা হয়নি। তারা বন্যা মোকাবিলা করায় অভ্যস্ত নন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে একযোগে কাজে নেমে পড়ার ফলে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও ও সাধারণ মানুষ দেশের সব অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সব দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক এবং অফিসাররা দিনের পর দিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, তার কোনো তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সততা, ত্যাগ ও অসীম দেশপ্রেমের জন্য। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপনারা সকলের শেষ ভরসার স্থান। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে আপনারা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিগত জুলাই হতে শুরু হওয়া গণ অভ্যুত্থান, বন্যা, নিরাপত্তা প্রদান, অস্ত্র উদ্ধার সহ সকল কার্যক্রমে আপনারা সফল ভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আসি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বন্যা আমাদের জনজীবনে আরেকটি দিক উন্মোচন করলো। দেশের সকল জায়গায় মানুষের সক্রিয় সহানুভূতির জোয়ার উঠেছিল অবিশ্বাস্য মাত্রায়। ব্যবসায়ী, অর্থবান ব্যক্তিরা যেমন তাদের অর্থ নিয়ে স্ব:তস্ফুর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা জোয়ারের ঢলের মতো যার যার সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। অনেকেই ছুটে গেছে বন্যার্তদের সহযোগিতা করার জন্য। এনজিওরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে গেছে তাদের সহায়তা নিয়ে। তাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এনজিও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি কীভাবে সরকার তাদের কাজের সঙ্গে সরকারের উদ্যোগকে সমন্বিত করতে পারে সেটার কাঠামো তৈরি করে দেওয়ার জন্য। বন্যা এখন চলে গেছে। কিন্তু পুনর্বাসনের কঠিন কাজ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সকলের সহযেগিতায় আমরা পুনর্বাসনের কাজটি সফলভাবে সমাধান করতে চাই।

জনপ্রিয়

আমি কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে নাম লিখতে চাই : নবাগত জেলা প্রশাসক

জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস

গণ-অভ্যুথানে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে

প্রকাশিত : ০৭:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গণ-অভ্যুথানে নিহত সবার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভাষণটি একযোগে প্রচার করছে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র।

তিনি বলেন, আমি আগেও জানিয়েছি, আবারো জানাচ্ছি, গণ-অভ্যুথানে সকল শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহিদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হাল নাগাদ করা হতে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার তার যাত্রা লগ্নে “জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সব শহীদ পরিবার ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সব মানুষ ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

কুমিল্লা-নোয়াখালী সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা এসব এলাকার মানুষকে হতভম্ব করে দিয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এখানে বেশিরভাগ এলাকায় কোনো দিন বন্যা হয়নি। তারা বন্যা মোকাবিলা করায় অভ্যস্ত নন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে একযোগে কাজে নেমে পড়ার ফলে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও ও সাধারণ মানুষ দেশের সব অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সব দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক এবং অফিসাররা দিনের পর দিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, তার কোনো তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সততা, ত্যাগ ও অসীম দেশপ্রেমের জন্য। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপনারা সকলের শেষ ভরসার স্থান। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে আপনারা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিগত জুলাই হতে শুরু হওয়া গণ অভ্যুত্থান, বন্যা, নিরাপত্তা প্রদান, অস্ত্র উদ্ধার সহ সকল কার্যক্রমে আপনারা সফল ভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আসি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বন্যা আমাদের জনজীবনে আরেকটি দিক উন্মোচন করলো। দেশের সকল জায়গায় মানুষের সক্রিয় সহানুভূতির জোয়ার উঠেছিল অবিশ্বাস্য মাত্রায়। ব্যবসায়ী, অর্থবান ব্যক্তিরা যেমন তাদের অর্থ নিয়ে স্ব:তস্ফুর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা জোয়ারের ঢলের মতো যার যার সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। অনেকেই ছুটে গেছে বন্যার্তদের সহযোগিতা করার জন্য। এনজিওরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে গেছে তাদের সহায়তা নিয়ে। তাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এনজিও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি কীভাবে সরকার তাদের কাজের সঙ্গে সরকারের উদ্যোগকে সমন্বিত করতে পারে সেটার কাঠামো তৈরি করে দেওয়ার জন্য। বন্যা এখন চলে গেছে। কিন্তু পুনর্বাসনের কঠিন কাজ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সকলের সহযেগিতায় আমরা পুনর্বাসনের কাজটি সফলভাবে সমাধান করতে চাই।