পৃথিবীতে কিছু বন রয়েছে যেগুলি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই নয়, রহস্য, পৌরাণিক কাহিনী এবং অজানা ঘটনার জন্যও বিখ্যাত। আজ সেইসব রহস্য ঘেরা এমন একটি বন এবং তার ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
অকিগাহারা বন (Aokigahara Forest), জাপানে অবস্থিত। যাকে সুইসাইড ফরেস্ট হিসেবেও বলা হয়ে থাকে। ফুজি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই বনটি আত্মহত্যার জন্য কুখ্যাত। ঘন জঙ্গল এবং নিস্তব্ধতা একে অতিপ্রাকৃত অনুভূতির উৎস বানিয়েছে। আত্মহত্যা কারীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অকিগাহারা বন (Aokigahara Forest), জাপানের অন্যতম রহস্যময় এবং প্রাকৃতিকভাবে চমৎকার এক বন, কিন্তু এটি মূলত তার অন্ধকার ইতিহাস এবং ভৌতিক কাহিনীর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ফুজি পর্বতের উত্তর-পশ্চিম পাদদেশে, হোনশু দ্বীপে অবস্থিত। প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই বন। স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায়
(Aokigahara Jukai) “সবুজ গাছের সমুদ্র। এই বনে ঘন গাছপালা, অগভীর শিলা-গুহা ও জমাট লাভার স্তরে তৈরি। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্টি হওয়া জমিতে জন্ম নেওয়া বলে এখানে ভূতাত্ত্বিকভাবে চৌম্বকতা অনেক বেশি৷ এজন্য অনেক সময় কম্পাস এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস ঠিকভাবে কাজ করে না।
সুইসাইড ফরেস্ট নামে পরিচিত পাওয়া এই বনে প্রতিবছর বহু মানুষ আত্মহত্যা করতে আসে। জাপানে আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে বেশি এবং এই বন আত্মহত্যার স্থান হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। বনের নিঃস্তব্ধতা, অন্ধকার পরিবেশ এবং গাছের মধ্যে একঘেয়ে গঠন একধরনের বিষণ্ণতা তৈরি করে বলে মনে করা হয়। জাপানি সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন সাইনবোর্ড দিয়েছে যাতে লেখা থাকে আপনার জীবন মূল্যবান। দয়া করে পরিবার ও বন্ধুদের কথা ভাবুন। জাপানি সংস্কৃতিতে “ইউরেই” নামে পরিচিত আত্মারা এখানে ঘোরাফেরা করে বলে বিশ্বাস করা হয়, যারা শান্তি পায়নি। পুরনো কাহিনীতে বলা হয়, অতীতে অভাবের সময় পরিবার থেকে দুর্বল বা বৃদ্ধ সদস্যদের এই বনে রেখে যাওয়া হতো, যাকে বলে উবাসুতে (Ubasute)। বনটি পর্যটন আকর্ষণ হিসেবেও জনপ্রিয়। গাইডসহ ভ্রমণকারীরা ল্যাভা গুহা, আইস কেভ (Ice Cave) ইত্যাদি দেখতে যায়।
সরকার এখন বনটিকে আত্মহত্যামুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কম্পাস বা জিপিএস এখানে ঠিকভাবে কাজ করে না বলে বলা হয়। মানুষের আত্মহত্যা প্রবণতার জন্য বনটিকে অনেকেই অভিশপ্ত মনে করেন।
ডিএস./