আগামী ১৪ মে বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন। সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।এ উপলক্ষে নতুন রূপে সেজে উঠছে সবুজে ঘেরা চবি ক্যাম্পাস।
সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
৯ বছর পর পঞ্চম সমাবর্তন। গায়ে কালো গাউন জড়িয়ে আর মাথায় টুপি পরে, হাতে সনদ নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী । জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো সেই প্রাঙ্গণে আবার ফিরে আসছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সমাবর্তন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে জেগে ওঠা এক আবেগঘন পুনর্মিলন। এ যেন স্মৃতির পাতায় ফিরে যাওয়ার এক অনন্য সুযোগ। ১৪ মে (বুধবার) দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান।
চবি ক্যাম্পাস ক্রমেই নতুন রূপ ধারণ করছে। সমাবর্তনকে সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১৯টি উপ-কমিটি। ইতিমধ্যে কনভোকিদের উপহার সামগ্রী নিজ নিজ বিভাগে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে শোভা বর্ধনের কাজ। পুরাতন রাস্তাঘাট সংস্কার করে নতুনভাবে তৈরী করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার এবং বিশেষভাবে ড. মোঃ ইউনুস ভবনে চলছে পরিছন্নতা ও শোভাবর্ধনের কাজ। সর্বত্র লেগেছে সংস্কারের ছোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে আলোর ঝলকানি।
১২ মে (সোমবার) দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার,উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান , উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, ড. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৫ম সমাবর্তন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মোঃ এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী।
সমাবর্তন ঘিরে ১৯টি আলাদা উপ–কমিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি করা হয়েছে দেড় লাখ স্কয়ার ফিটের প্যান্ডেল। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ধারণ করতে পারবে। সনদের কাজও শেষ। প্রতিটি বিভাগে পৌঁছে যাচ্ছে সমাবর্তীদের উপহার সামগ্রী। এ সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য দেওয়া হয়েছে দিকনির্দেশনা।
সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৫৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন। অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ (৪,৯৮৭ জন), এরপর ব্যবসায় প্রশাসন (৪,৫৯৬ জন), সমাজবিজ্ঞান (৪,১৫৮ জন), এবং বিজ্ঞান অনুষদ (২,৭৬৭ জন)।
সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষকও। তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার। এই বিশাল আয়োজনে খরচ হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি এসেছে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে। বাকি অর্থ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও স্পন্সররা। সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে প্রবেশ করতে হবে। দুপুর ১টার পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। এছাড়া যেকোনো ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকে থাকবে পার্কিং ও বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস এবং চলবে ৪টি বিশেষ শাটল ট্রেন। ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস। ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্বরসহ পাঁচটি স্থানে থাকবে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস, জুলাই বিপ্লব, শহীদ আবু সাইদের প্রতিকৃতি এবং ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি। লাল ও সবুজের ব্যবহার এই আয়োজনের আবেগ ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ৫৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র চারটি সমাবর্তন হয়েছে। এবার আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। একই সমাবেশস্থলে এত শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সমাবর্তন বিশ্বের ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম। আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একটা দারুণ সমাবর্তন পেতে যাচ্ছে চবির সাবেক শিক্ষার্থীরা।
ডিএস./