০৮:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান হয়নি সিনিয়র নেতাদের, তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক ও লায়ন মো. হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। এর তিন মাস পর ৬ মে মঙ্গলবার আকার বৃদ্ধি করে তা ৫৪ সদস্যে উন্নীত করে কেন্দ্র। তবে এবার কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন পাঁচ সদস্যের একজন। একইভাবে সাবেক আহ্বায়কসহ দক্ষিণ জেলার বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতারও স্থান হয়নি বর্ধিত এ কমিটিতে। এছাড়া স্থান পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। আবার দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে দাবি করছেন, তরুণ–প্রবীণের সমন্বয়ে করা হয়েছে কমিটি। আন্দোলন–সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কমিটি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।

জানা যায়, ৭ মে (মঙ্গলবার) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে আকার বৃদ্ধি করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এতে আহ্বায়ক–সদস্য সচিব ছাড়াও একজন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪৩ জনকে সদস্য করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া লেয়াকত আলী বাদ পড়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। অবশ্য ফেব্রুয়ারি মাসে কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করে লেয়াকত আলী লিখেন, ‘দল আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে। আমাকে দেওয়া জাকাতি পদটি অন্য কাউকে দিয়ে খুশি করুন।’ তবে এর কিছুক্ষণ পরেই পোস্টটি ডিলিট করে লিখেন, ‘দক্ষিণ জেলা কমিটিতে যে লিয়াকত দেখা যাচ্ছে সেটি আমি নই।’ গতকাল পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা শেয়ার করেও তিনি পোস্ট দেন।

স্থান পাননি সিনিয়র নেতারা- ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তারা। গত অনুমোদিত কমিটিতে স্থান হয়নি আবু সুফিয়ানের। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকে স্থান পাননি। এছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েল ও সাবেক সাংসদ সরওয়াল জামাল নিজামেরও স্থান হয়নি। স্থান হয়নি বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী ইছহাক চৌধুরী, ১০ নং আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হামিদুল হক মন্নান ও পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী আবুল কালাম আবুর।

এই বিষয়ে সিনিয়র নেতারা বলেন, রাজপথে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি। নির্যাতন সহ্য করার পরেও গ্রুপিং রাজনীতির ষড়যন্ত্রে কমিটিতে স্থান পাইনি।

নতুন কমিটি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনার ঝড় – ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২৯ নম্বর সদস্য হয়েছেন রাজীব জাফর চৌধুরী। তার সদস্যপদ নিয়েও ফেইসবুকে চলছে নানা সমালোচনা। দাবি করা হচ্ছে, তারা প্রয়াত বাবা জাফর আহমদ চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন শেখ হাসিনা, যা গতকাল অনেকেই শেয়ার করছেন। তাছাড়া জাফর আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালে চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তার স্ত্রী হাসিনা জাফর ২০১৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম–৩১ সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।

এদিকে কমিটির ৪৪ নং সদস্য হেলাল উদ্দীনের সাথে আওয়ামী লীগ নেতার ছবি পোস্ট করে অনেকে সমালোচনা করছেন।

নবগঠিত কমিটির সদস্য ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামে ছিল এ রকম অনেকে ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। আওয়ামী লীগের দোসর ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের চেষ্টা হয়েছে কমিটিতে। এটা দুঃখজনক।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে যাদের পেয়েছি তাদের কেউ এই কমিটিতে স্থান পাইনি। বর্তমান যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছে তারা ৫ আগষ্টের পরে বিএনপি করে বলে মন্তব্য করেছেন এই নেতা। তিনি আরও বলেন, হাইকমান্ড বলেছিলেন— ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীকে নতুন কমিটিতে রাখা হবে। তবে দিনশেষে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। পদ পেতে দলের জন্য যতই ত্যাগ-জনপ্রিয়তা থাকুক না কেন; এখন তা আর দেখা হয় না, কাজে আসছে না। আওয়ামী দোসররা জায়গা হয়; অথচ কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই নেই। ত্যাগী ও যোগ্য নেতা দিয়ে নতুন করে কমিটি করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে স্টাটাস দে তা হুবহু তুলে ধরা হলো, “দয়াকরে —
চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা বিএনপি কমিটির নামে আওয়ামীলীগ কে পূনর্বাসন করবেন না।এগুলি ১৬/১৭-বছর আন্দোলনের ফসল।“

এ বিষয়ে লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামে যারা ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কমিটি হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো প্রোগ্রাম করেছি। রাজিবের বাবা ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে রিজাইন করেন। তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় রাজীব বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। হেলাল মক্কা বিএনপির সাথে জড়িত। সিনিয়র নেতাদের বাদ পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সিনিয়রদের বিষয়ে আমাদের সুপারিশ করার সুযোগ নেই। এটা কেন্দ্রের নিদ্ধান্ত। আমার কাছে রাজনীতি মানেই মানুষের সেবা ও জনগণের পাশে থাকা। আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের দক্ষতা নির্ভর বাংলাদেশ। যেখানে তরুণরা তাদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে রাষ্ট্রকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। এই কমিটিতে তারুণ্যকে গ্রুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে গ্রুরুত্ব দিয়ে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন : গতকাল অনুমোদিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হচ্ছেন আলী আব্বাস। যুগ্ম আহ্বায়করা হচ্ছেন মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, আজিজুল হক চৌধুরী, আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, রেজাউল করিম চৌধুরী নেছার ও সাঈফুদ্দিন সালাম মিঠু।

সদস্যরা হচ্ছেন শেখ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন, ইফতেখার মহসিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ খান, এনামুল হক এনাম, বদরুল খায়ের চৌধুরী, এস এম মামুন মিয়া, আমিনুর রহমান চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, মাস্টার মোহাম্মদ লোকমান, শওকত আলম চৌধুরী, ছলিম উদ্দিন চৌধুরী, হাজী মো. রফিকুল আলম, মাস্টার মোহাম্মদ রফিক, রাজীব জাফর চৌধুরী, সাজ্জাতুর রহমান চৌধুরী, সরওয়ার হোসেন মাসুদ, জাহাঙ্গীর কবির, হাজী মোহাম্মদ ওসমান, জাগির আহমদ, আমিনুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক বেলাল, জসীম উদ্দিন, সালাহ উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, শেফায়েত উল্লাহ, ফজলুল কবির ফজু, মোহাম্মদ শাহীনুর শাহীন, মোহাম্মদ ঈসমাইল, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, জাবেদ মেহেদী হাসান সুজন, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, দিল মোহাম্মদ মঞ্জু, এম মনছুর উদ্দিন, মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, সালেহ জহুর, দেলোয়ার আজীম, শাহাদাত হোসেন সুমন, মোস্তাফিজুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন।

ডিএস./

ট্যাগ :

দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট একদিনে ৩ অভিযান

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান হয়নি সিনিয়র নেতাদের, তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত : ০৩:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক ও লায়ন মো. হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। এর তিন মাস পর ৬ মে মঙ্গলবার আকার বৃদ্ধি করে তা ৫৪ সদস্যে উন্নীত করে কেন্দ্র। তবে এবার কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন পাঁচ সদস্যের একজন। একইভাবে সাবেক আহ্বায়কসহ দক্ষিণ জেলার বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতারও স্থান হয়নি বর্ধিত এ কমিটিতে। এছাড়া স্থান পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। আবার দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে দাবি করছেন, তরুণ–প্রবীণের সমন্বয়ে করা হয়েছে কমিটি। আন্দোলন–সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কমিটি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।

জানা যায়, ৭ মে (মঙ্গলবার) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে আকার বৃদ্ধি করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এতে আহ্বায়ক–সদস্য সচিব ছাড়াও একজন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪৩ জনকে সদস্য করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া লেয়াকত আলী বাদ পড়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। অবশ্য ফেব্রুয়ারি মাসে কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করে লেয়াকত আলী লিখেন, ‘দল আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে। আমাকে দেওয়া জাকাতি পদটি অন্য কাউকে দিয়ে খুশি করুন।’ তবে এর কিছুক্ষণ পরেই পোস্টটি ডিলিট করে লিখেন, ‘দক্ষিণ জেলা কমিটিতে যে লিয়াকত দেখা যাচ্ছে সেটি আমি নই।’ গতকাল পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা শেয়ার করেও তিনি পোস্ট দেন।

স্থান পাননি সিনিয়র নেতারা- ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তারা। গত অনুমোদিত কমিটিতে স্থান হয়নি আবু সুফিয়ানের। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকে স্থান পাননি। এছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েল ও সাবেক সাংসদ সরওয়াল জামাল নিজামেরও স্থান হয়নি। স্থান হয়নি বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী ইছহাক চৌধুরী, ১০ নং আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হামিদুল হক মন্নান ও পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী আবুল কালাম আবুর।

এই বিষয়ে সিনিয়র নেতারা বলেন, রাজপথে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি। নির্যাতন সহ্য করার পরেও গ্রুপিং রাজনীতির ষড়যন্ত্রে কমিটিতে স্থান পাইনি।

নতুন কমিটি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনার ঝড় – ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২৯ নম্বর সদস্য হয়েছেন রাজীব জাফর চৌধুরী। তার সদস্যপদ নিয়েও ফেইসবুকে চলছে নানা সমালোচনা। দাবি করা হচ্ছে, তারা প্রয়াত বাবা জাফর আহমদ চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন শেখ হাসিনা, যা গতকাল অনেকেই শেয়ার করছেন। তাছাড়া জাফর আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালে চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তার স্ত্রী হাসিনা জাফর ২০১৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম–৩১ সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।

এদিকে কমিটির ৪৪ নং সদস্য হেলাল উদ্দীনের সাথে আওয়ামী লীগ নেতার ছবি পোস্ট করে অনেকে সমালোচনা করছেন।

নবগঠিত কমিটির সদস্য ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামে ছিল এ রকম অনেকে ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। আওয়ামী লীগের দোসর ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের চেষ্টা হয়েছে কমিটিতে। এটা দুঃখজনক।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে যাদের পেয়েছি তাদের কেউ এই কমিটিতে স্থান পাইনি। বর্তমান যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছে তারা ৫ আগষ্টের পরে বিএনপি করে বলে মন্তব্য করেছেন এই নেতা। তিনি আরও বলেন, হাইকমান্ড বলেছিলেন— ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীকে নতুন কমিটিতে রাখা হবে। তবে দিনশেষে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। পদ পেতে দলের জন্য যতই ত্যাগ-জনপ্রিয়তা থাকুক না কেন; এখন তা আর দেখা হয় না, কাজে আসছে না। আওয়ামী দোসররা জায়গা হয়; অথচ কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই নেই। ত্যাগী ও যোগ্য নেতা দিয়ে নতুন করে কমিটি করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে স্টাটাস দে তা হুবহু তুলে ধরা হলো, “দয়াকরে —
চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা বিএনপি কমিটির নামে আওয়ামীলীগ কে পূনর্বাসন করবেন না।এগুলি ১৬/১৭-বছর আন্দোলনের ফসল।“

এ বিষয়ে লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামে যারা ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কমিটি হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো প্রোগ্রাম করেছি। রাজিবের বাবা ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে রিজাইন করেন। তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় রাজীব বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। হেলাল মক্কা বিএনপির সাথে জড়িত। সিনিয়র নেতাদের বাদ পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সিনিয়রদের বিষয়ে আমাদের সুপারিশ করার সুযোগ নেই। এটা কেন্দ্রের নিদ্ধান্ত। আমার কাছে রাজনীতি মানেই মানুষের সেবা ও জনগণের পাশে থাকা। আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের দক্ষতা নির্ভর বাংলাদেশ। যেখানে তরুণরা তাদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে রাষ্ট্রকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। এই কমিটিতে তারুণ্যকে গ্রুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে গ্রুরুত্ব দিয়ে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন : গতকাল অনুমোদিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হচ্ছেন আলী আব্বাস। যুগ্ম আহ্বায়করা হচ্ছেন মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, আজিজুল হক চৌধুরী, আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, রেজাউল করিম চৌধুরী নেছার ও সাঈফুদ্দিন সালাম মিঠু।

সদস্যরা হচ্ছেন শেখ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন, ইফতেখার মহসিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ খান, এনামুল হক এনাম, বদরুল খায়ের চৌধুরী, এস এম মামুন মিয়া, আমিনুর রহমান চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, মাস্টার মোহাম্মদ লোকমান, শওকত আলম চৌধুরী, ছলিম উদ্দিন চৌধুরী, হাজী মো. রফিকুল আলম, মাস্টার মোহাম্মদ রফিক, রাজীব জাফর চৌধুরী, সাজ্জাতুর রহমান চৌধুরী, সরওয়ার হোসেন মাসুদ, জাহাঙ্গীর কবির, হাজী মোহাম্মদ ওসমান, জাগির আহমদ, আমিনুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক বেলাল, জসীম উদ্দিন, সালাহ উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, শেফায়েত উল্লাহ, ফজলুল কবির ফজু, মোহাম্মদ শাহীনুর শাহীন, মোহাম্মদ ঈসমাইল, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, জাবেদ মেহেদী হাসান সুজন, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, দিল মোহাম্মদ মঞ্জু, এম মনছুর উদ্দিন, মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, সালেহ জহুর, দেলোয়ার আজীম, শাহাদাত হোসেন সুমন, মোস্তাফিজুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন।

ডিএস./