২০১৬ সালে অনলাইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর কারণে ১৮টি দেশের নির্বাচন প্রভাবিত হয়েছে, এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফ্রিডম হাউস অনলাইনের আলোচনাগুলো কীভাবে সরকার, বট আর অর্থ নিয়ে মতামত সৃষ্টিকারীদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে তা নিয়ে সন্ধান চালিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৩০টি সরকার ভিন্নমত পোষণকারীদের কণ্ঠরোধ করতে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়- ব্যবহারকারীদের ভুয়া সংবাদ চিনতে শেখানো আর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নেটওয়ার্কে নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মত বদলে দেওয়ার এই চর্চা ঠেকানো যেতে পারে। ৬৫টি দেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় ৮৭ শতাংশ এর আওতায় পড়েছে বলে বিবিসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বার্ষিক এই গবেষণার সপ্তম বছরে প্রতিষ্ঠানটি বলে, নাগরিকরা কী বলছেন, করেছেন আর কী অনলাইনের শেয়ারে করেছেন তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নেওয়ায় ইন্টারনেটে স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে। অনলাইনে মতামত প্রভাবিত করতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আনুষ্ঠানিক বার্তাগুলোকে বারবার ছড়িয়ে দেয় এমন স্বয়ংক্রিয় বট ব্যবহার, অর্থ পরিশোধ করে মতামতদানকারী রাখা যারা সরকারের পক্ষে মত দিয়ে আলোচনা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়, ভুয়া সংবাদ সাইট যেগুলো ভুল দিকে পরিচালিত করার মতো খবর ছাপায়, সমালোচকদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে এমন বিদ্রুপাত্মক পোস্ট করা। সামাজিক মাধ্যমের পরিবেশ বদলে দেওয়া দমনমূলক সরকারগুলোর একটি মূল কৌশল হয়ে উঠেছে বলেও গবেষণায় বলা হয়। ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট’ নামের এই গবেষণা প্রকল্পের প্রধান সাঞ্জা কেলি বলেন, “এই মত বদলে দেওয়া বিষয়টি শনাক্ত করাই শুধু কঠিন নয়, এটি ওয়েবসাইট ব্লকিংয়ের মতো অন্য যে কোনো সেন্সরশিপ ঠেকানোর চেয়েও বেশি কঠিন। এর কারণ হচ্ছে এটি বিক্ষিপ্ত আর এটা করার জন্য মানুষ আর বটকে নিয়োগ দেওয়া হয়।” ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ধারা চীন আর রাশিয়া শুরু করলেও এই কৌশল এখন ‘বৈশ্বিক’ হয়ে গেছে বলে মত দেন কেলি। সেই সঙ্গে তুরস্ক, ফিলিপিন্স, সিরিয়া আর ইথিওপিয়াসহ আরও অনেক দেশ এখন বিস্তৃত পরিসরে এই কৌশল ব্যবহার করছে। কেলি বলেন, “গণতন্ত্র আর নাগরিক প্রচারণার উপর এই কৌশল ব্যবহার দ্রুত ছড়াতে থাকার প্রভাব বিধ্বংসী।” ফ্রিডম হাউস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের সময় বিতর্কগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অনেকটা সুস্পষ্ট ছিল। ওই ১৮টি দেশে গবেষণায় গবেষকরা এমনটাই লক্ষ্য করেছেন। এতে আরও বলা হয়, বিশেষত রাশিয়া ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করতে উল্লেখযোগ্য চেষ্টা চালায়। গবেষণায় জান যায়, বিশ্বে মোট নেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরও কম মানুষ এমন দেশগুলোতে বাস করেন, যেখানে নেট ব্যবহারকে স্বাধীন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই স্বাধীন নেট ব্যবহার বলতে অনলাইনের যেতে কোনো উল্লেখযোগ্য বাধা না থাকা, কী শেয়ার করা যাবে বা দেখা যাবে তা নিয়ে খুবই কম সীমাবদ্ধতা থাকা, নজরদারির পরিমাণ সীমিত থাকাকে বোঝানো হয়েছে। কীভাবে এই নেট স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে? তা নিয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গবেষণায়। এগুলো হচ্ছে- ভুয়া সংবাদ কীভাবে শনাক্ত করতে হয় তা মানুষকে দেখাতে বড় ধরনের কার্যক্রম চালানো, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলো নিয়ে কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখা আর অ্যালগরিদম আরও উন্নত করতে সামাজিক মাধ্যমগুলোকে চাপ দেওয়া।
১১:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
ভুয়া তথ্যে ‘প্রভাবিত’ ১৮ দেশের নির্বাচন
-
ডেস্ক রিপোর্ট - প্রকাশিত : ১২:৪১:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭
- 237
ট্যাগ :
জনপ্রিয়
























