০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

টাঙ্গাইলে বন্যার পানি প্রতিনয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে

ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে টাঙ্গাইলে প্রায় সব কয়টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে বৃস্পতিবার সকালে যমুনা নদীর পানি বিপসসীমার ৯১ সে.মি, ধলেশ্বরী নদীর পানি ১১২ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর পানি ৬৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভূঞাপুর উপজেলার তারাই গ্রামের রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে কুতুবপুর, পলিশা, বেতুয়া, বাহাদীপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক। অপরদিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বিন্যাফৈর হতে চরপাড়া যাওয়ার রাস্তার ভেঙ্গে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

আর এই পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী প্রায় ১১১টি গ্রাম প্লাাবিত হয়েছে। আর এতে প্রায় ১৭ হাজার ৮শ’ পরিবার পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

এছাড়া এসব গ্রামের রাস্তা এবং ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন কয়েকশ’ পরিবার। খাদ্য, পানির সংকট, গো-খাদ্য সংকট এবং অন্যদিকে বাসস্থানে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে গরু-ছাগল ও পরিবার পরিজন নিয়ে উচু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানিয়েছে, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আর এতে জেলার ৫টি উপজেলার আংশিক ২২ ইউনিয়নের প্রায় ১০৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং টাঙ্গাইল সদর। এই উপজেলার নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চচলের মানুষ ভাঙন কবলে এবং পানিবন্দি অবস্থার মধ্যে পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবারের বন্যায় জেলার ১৯১২ হেক্টর ফসলি জমি এবং সবজি পানির তলে রয়েছে । বন্যার কারণে জেলায় বোনা আমন ১১৭৫ হেক্টর জমি, রোপা আমন (বীজতলা) ৩৩ হেক্টও, আউশ ৬০৮ হেক্টর এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি ৯৬ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেলে আরো ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে ফলেনের ক্ষতি হতে পারে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, বন্যার কারণে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় এবং সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯টি এবং প্রায় ৫৮টি প্রাইমারি বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে ভূঞাপুরে বানের পানিতে ডুবে জিহাদ (১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু জিহাদ ওই গ্রামের বিদ্যুৎ মিঞার ছেলে।

বিদ্যুৎ মিয়া জানান, উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বিদ্যুৎ মিঞার ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তিনি ও তার স্ত্রী জিনিসপত্র অন্যত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের অজান্তে এক বছরের শিশু জিহাদ পানিতে ডুবে যায়। পরে বিকালে জিহাদের লাশ ঘরের এক কোনে ভেসে উঠে।

ভাঙন ও বন্যার কারণে দিশেহারা এসব মানুষ মানববেতর জীবন যাপন করছেন। জায়গাসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে, কেউবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আনছের আলী বলেন, অকাল বন্যা ও বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘরে পানি উঠার কারনে স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এতে পানি ও খাবার সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মনির বলেন, গাবসারা ইউনিয়ন পুরোটাই চরাঞ্চল। বন্যার কারণে পুরো ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি তলিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোশারফ হোসেন খান বলেন, বন্যার ফলে জেলার নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলায় ২২ ইউনিয়নের প্রায় ১১১ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর এতে করে রাস্তা এবং ফসলি জমি পানি নিচে রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে আমাদের ত্রাণ সামগ্রী অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার ১২টি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রসহ সব কয়টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইলে ২৩ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বিপসসীমার ৯১ সে.মি, ধলেশ্বরী নদীর পানি ১১২ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর পানি ৬৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলে নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা নদীগুলোতে আরো পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ-/ ইএম

ট্যাগ :

মেঘনা  উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক  নয়ন ও শহীদুলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

টাঙ্গাইলে বন্যার পানি প্রতিনয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে

প্রকাশিত : ০২:৫৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯

ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে টাঙ্গাইলে প্রায় সব কয়টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে বৃস্পতিবার সকালে যমুনা নদীর পানি বিপসসীমার ৯১ সে.মি, ধলেশ্বরী নদীর পানি ১১২ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর পানি ৬৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভূঞাপুর উপজেলার তারাই গ্রামের রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে কুতুবপুর, পলিশা, বেতুয়া, বাহাদীপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক। অপরদিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বিন্যাফৈর হতে চরপাড়া যাওয়ার রাস্তার ভেঙ্গে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

আর এই পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী প্রায় ১১১টি গ্রাম প্লাাবিত হয়েছে। আর এতে প্রায় ১৭ হাজার ৮শ’ পরিবার পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

এছাড়া এসব গ্রামের রাস্তা এবং ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন কয়েকশ’ পরিবার। খাদ্য, পানির সংকট, গো-খাদ্য সংকট এবং অন্যদিকে বাসস্থানে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে গরু-ছাগল ও পরিবার পরিজন নিয়ে উচু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানিয়েছে, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আর এতে জেলার ৫টি উপজেলার আংশিক ২২ ইউনিয়নের প্রায় ১০৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং টাঙ্গাইল সদর। এই উপজেলার নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চচলের মানুষ ভাঙন কবলে এবং পানিবন্দি অবস্থার মধ্যে পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবারের বন্যায় জেলার ১৯১২ হেক্টর ফসলি জমি এবং সবজি পানির তলে রয়েছে । বন্যার কারণে জেলায় বোনা আমন ১১৭৫ হেক্টর জমি, রোপা আমন (বীজতলা) ৩৩ হেক্টও, আউশ ৬০৮ হেক্টর এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি ৯৬ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেলে আরো ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে ফলেনের ক্ষতি হতে পারে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, বন্যার কারণে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় এবং সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯টি এবং প্রায় ৫৮টি প্রাইমারি বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে ভূঞাপুরে বানের পানিতে ডুবে জিহাদ (১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু জিহাদ ওই গ্রামের বিদ্যুৎ মিঞার ছেলে।

বিদ্যুৎ মিয়া জানান, উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বিদ্যুৎ মিঞার ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তিনি ও তার স্ত্রী জিনিসপত্র অন্যত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের অজান্তে এক বছরের শিশু জিহাদ পানিতে ডুবে যায়। পরে বিকালে জিহাদের লাশ ঘরের এক কোনে ভেসে উঠে।

ভাঙন ও বন্যার কারণে দিশেহারা এসব মানুষ মানববেতর জীবন যাপন করছেন। জায়গাসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে, কেউবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আনছের আলী বলেন, অকাল বন্যা ও বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘরে পানি উঠার কারনে স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এতে পানি ও খাবার সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মনির বলেন, গাবসারা ইউনিয়ন পুরোটাই চরাঞ্চল। বন্যার কারণে পুরো ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি তলিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোশারফ হোসেন খান বলেন, বন্যার ফলে জেলার নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলায় ২২ ইউনিয়নের প্রায় ১১১ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর এতে করে রাস্তা এবং ফসলি জমি পানি নিচে রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে আমাদের ত্রাণ সামগ্রী অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার ১২টি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রসহ সব কয়টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইলে ২৩ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বিপসসীমার ৯১ সে.মি, ধলেশ্বরী নদীর পানি ১১২ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর পানি ৬৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলে নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা নদীগুলোতে আরো পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ-/ ইএম