ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
২৭ নভেম্বর সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পদত্যাগের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
নানা ঋণ কেলেঙ্কারি, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে বেশ অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপের মুখে চিল ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটিতে উচ্চপর্যায়ের এ পরিবর্তনের কথা জানা গেল। ইতোমধ্যে নতুন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে এবং সব কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
সোমবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত রোববার রাতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকে কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব সিদ্ধান্তের পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পাঠানো হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফারমার্স ব্যাংকে বেশ কিছুদিন ধরে তারল্য ঘাটতি বিরাজ করায় এবং আর্থিক সূচকসমূহের অবনতি ঘটায় জনগণের মধ্যে দ্বিধা/সংকোচ তৈরি হয়।
লক্ষ করা যাচ্ছে, বেশ কিছু আমানতকারী ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করার ফলে ব্যাংকটির সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসার পর প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রকমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। তাঁদের পদত্যাগপত্র পর্ষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে।
সব কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। ব্যাংকটির এমডির বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুনর্গঠিত পর্ষদ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।’
পুনর্গঠিত কমিটিগুলো ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকটির উপর তারা ‘নজরদারি অব্যাহত’ রাখবে।
নানা অনিয়ম সামনে চলে আসার পর ব্যাংকটিতে কড়া নজরদারিতে আনতে পর্যবেক্ষক বসিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ পরে আদালতে আটকে যায়। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ফারমার্স ব্যাংককে দেশের আর্থিক খাতের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ফারমার্স ব্যাংক সাধারণ আমানতকারী এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে উচ্চসুদে অর্থ নিয়ে চলছে এবং দায় পরিশোধের সক্ষমতাও ব্যাংকটির নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ও। দায় পরিশোধের সক্ষমতাও নেই ব্যাংকটির। এর ফলে ব্যাংকটি সমগ্র আর্থিক খাতে ‘সিস্টেমেটিক রিস্ক’ সৃষ্টি করছে।
২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আটটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। তখন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংকটিও অনুমোদন পায়। এসবগুলো ব্যাংকটি রাজলৈনতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে বলে তখন স্বীকার করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।


























