১১:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশব্যাপী টিকাদান শুরু আজ

  • বাবুল হৃদয়
  • প্রকাশিত : ১২:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 30

মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আজ রোববার সারা দেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। টিকা প্রয়োগের প্রথম দিন ১ হাজার ১৫টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২ হাজার ৪০২টি দল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার সকাল ৯টায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। রোববার সকালে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজে টিকা নিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এরপর সারাদেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
ঢাকায় ৬৫টি স্থানে করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া হবে। সেখানে কাজ করবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০৬টি দল। আর ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকবেন।
টিকার জন্য নিবন্ধন করা না থাকলেও কেন্দ্র থেকে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না। কেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার জন্য কয়েকটি স্থান নির্ধারণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম আলম। তিনি জানান, সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেবেন। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয় ক্লিনিক এবং সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, আইনজীবীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিতে পারবেন। এর বাইরেও সবাই নিজের পছন্দমতো জায়গা থেকে টিকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ডা. নাজমুল।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ওইদিন টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। প্রথম দফায় ৫৬৭ জনকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়। এর ১০ দিন পর কাল থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
যারা টিকা নেবেন তাদের কাছে একদিন আগেই মোবাইল ফোনে এসএমএস পৌঁছে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টম থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। আজ যারা টিকা নিচ্ছেন শনিবারেই তাদের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পৌঁছে গেছে। আবার সোমবার যারা টিকা পাবেন তারা রোববারের মধ্যেই ক্ষুদে বার্তা পেয়ে যাবেন।
সরকারের হাতে বর্তমানে অক্সফোর্ডের ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। এরমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয়কৃত ৫০ লাখ এবং ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ। অক্সফোর্ডের এই ৭০ লাখ টিকা দিয়ে ব্যাপকভিত্তিক টিকা কার্যক্রম শুরু করছে বাংলাদেশ। আরো দুই কোটি টিকা সেরাম থেকে পর্যায়ক্রমে আসবে বাংলাদেশে। এছাড়া কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আরও ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। জুন মাস নাগাদ অক্সফোর্ডের উৎপাদিত এই টিকা বাংলাদেশে চলে আসার কথা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা বন্টনের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের জন্য ওই পরিমান ভ্যাকসিনের কথা বলা হয়েছে। প্রতি ডোজ টিকার জন্য ৩ ডলার দিতে হবে বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কোভ্যাক্স-এর ভ্যাকসিন আসবে এটা নিশ্চিত। তবে আমরা ওই ভ্যাকসিন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওটা ধরে কোনো প্ল্যান করছি না। হাতে পাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে আমাদের ভ্যাকসিন দিচ্ছে তা আমারও তাদের ওয়েবসাইটে দেখেছি।’
প্রথম পর্যায়ে ঠিক কত জনকে টিকা দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৫০ লাখের বেশি মানুষের একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে যার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন। এদের মধ্য থেকে কতজন রেজিস্ট্রেশন করেন তার ওপর ভিত্তি করে অগ্রাধিকার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনে টিকা কেন্দ্র বাড়ানো হবে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ লাখ মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম পর্যায়ে মাসে ১৪ দিন এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। যিনি যে তারিখে টিকা নেবেন তার সাথে মিলিয়ে ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। কুড়িগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জনিয়েছেন, তার জেলায় ৬০ হাজার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার ভ্যাকসিন প্রথম পর্যায়ে দিতে বলা হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার দ্বিতীয় ডোজের জন্য রাখতে বলা হয়েছে।
জনসংখ্যা অনুপাতে দেশের জেলাগুলোতে এই ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্মিকো জেলা সিভিল সার্জনের অফিস পর্যন্ত এই টিকা পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে সেগুলো বিশেষ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত আছে। উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেয়ার সময় আইসব্যাগে করে ভ্যাকসিন ক্যারিয়ারে পাঠানো হবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিস্কৃত যুবদলের দুই নেতা, নিহত জুবায়ের যুবলীগের কর্মী

দেশব্যাপী টিকাদান শুরু আজ

প্রকাশিত : ১২:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আজ রোববার সারা দেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। টিকা প্রয়োগের প্রথম দিন ১ হাজার ১৫টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২ হাজার ৪০২টি দল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার সকাল ৯টায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। রোববার সকালে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজে টিকা নিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এরপর সারাদেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
ঢাকায় ৬৫টি স্থানে করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া হবে। সেখানে কাজ করবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০৬টি দল। আর ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকবেন।
টিকার জন্য নিবন্ধন করা না থাকলেও কেন্দ্র থেকে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না। কেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার জন্য কয়েকটি স্থান নির্ধারণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম আলম। তিনি জানান, সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেবেন। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয় ক্লিনিক এবং সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, আইনজীবীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিতে পারবেন। এর বাইরেও সবাই নিজের পছন্দমতো জায়গা থেকে টিকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ডা. নাজমুল।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ওইদিন টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। প্রথম দফায় ৫৬৭ জনকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়। এর ১০ দিন পর কাল থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
যারা টিকা নেবেন তাদের কাছে একদিন আগেই মোবাইল ফোনে এসএমএস পৌঁছে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টম থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। আজ যারা টিকা নিচ্ছেন শনিবারেই তাদের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পৌঁছে গেছে। আবার সোমবার যারা টিকা পাবেন তারা রোববারের মধ্যেই ক্ষুদে বার্তা পেয়ে যাবেন।
সরকারের হাতে বর্তমানে অক্সফোর্ডের ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। এরমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয়কৃত ৫০ লাখ এবং ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ। অক্সফোর্ডের এই ৭০ লাখ টিকা দিয়ে ব্যাপকভিত্তিক টিকা কার্যক্রম শুরু করছে বাংলাদেশ। আরো দুই কোটি টিকা সেরাম থেকে পর্যায়ক্রমে আসবে বাংলাদেশে। এছাড়া কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আরও ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। জুন মাস নাগাদ অক্সফোর্ডের উৎপাদিত এই টিকা বাংলাদেশে চলে আসার কথা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা বন্টনের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের জন্য ওই পরিমান ভ্যাকসিনের কথা বলা হয়েছে। প্রতি ডোজ টিকার জন্য ৩ ডলার দিতে হবে বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কোভ্যাক্স-এর ভ্যাকসিন আসবে এটা নিশ্চিত। তবে আমরা ওই ভ্যাকসিন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওটা ধরে কোনো প্ল্যান করছি না। হাতে পাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে আমাদের ভ্যাকসিন দিচ্ছে তা আমারও তাদের ওয়েবসাইটে দেখেছি।’
প্রথম পর্যায়ে ঠিক কত জনকে টিকা দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৫০ লাখের বেশি মানুষের একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে যার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন। এদের মধ্য থেকে কতজন রেজিস্ট্রেশন করেন তার ওপর ভিত্তি করে অগ্রাধিকার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনে টিকা কেন্দ্র বাড়ানো হবে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ লাখ মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম পর্যায়ে মাসে ১৪ দিন এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। যিনি যে তারিখে টিকা নেবেন তার সাথে মিলিয়ে ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। কুড়িগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জনিয়েছেন, তার জেলায় ৬০ হাজার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার ভ্যাকসিন প্রথম পর্যায়ে দিতে বলা হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার দ্বিতীয় ডোজের জন্য রাখতে বলা হয়েছে।
জনসংখ্যা অনুপাতে দেশের জেলাগুলোতে এই ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্মিকো জেলা সিভিল সার্জনের অফিস পর্যন্ত এই টিকা পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে সেগুলো বিশেষ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত আছে। উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেয়ার সময় আইসব্যাগে করে ভ্যাকসিন ক্যারিয়ারে পাঠানো হবে।