তার কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকাই সিনেমা। ক্যারিয়ারের বয়স বিশ ছাড়িয়েছে। আর গত বারো বছর ধরে একলাই চালাচ্ছেন ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। শাকিবই ইন্ডাস্ট্রির সবেধন নীলমণি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন এক ময়দানে যার রথ গতি বাড়িয়ে চলছেন ক্রমশ। ঢাকাই সিনেমার সুপার হিরো শাকিব খানের ক্যারিয়ার ও জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে এই ফিচার।

১ প্রথম ছবি
প্রথমে চুক্তিবদ্ধ হোন আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’ ছবিতে। মুক্তি পাওয়ার সুবাদে শাকিব খানের প্রথম ছবি হিসেবে ধরা হয় সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’কে। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সুবিধা করে উঠতে পারেনি।
২ প্রথম গুঞ্জন
‘দুজন দুজনার’ ছবি করার সময় পপির সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন ওঠে। ইন্ডাস্ট্রিতে এসে মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেন শাকিব খান।
৩ প্রথম হিট
ক্যারিয়ারে প্রথম হিটের স্বাদ পান দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘বিষে ভরা নাগিন’র কারণে। ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মুনমুন। মুনমুনের সঙ্গেও শাকিব খানের এটাই প্রথম কাজ।
৪ প্রথম যৌথ প্রযোজনা
এফ আই মানিক পরিচালিত ‘সবার উপরে তুমি’ মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত কোনো ছবিতে অভিনয় এই প্রথম। শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন স্বস্তিকা মুখার্জি।
৫ গান গাওয়া
২০১১ সালে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘মনের জ্বালা’ ছবিতে প্রথম মাইক্রোফোনের পেছনে দাঁড়ান শাকিব খান। ‘আমি চোখ তুলে লাকালে সূর্য লুকায়’ গানটির সুরকার ছিলেন আলী আকরাম শুভ।
৬ প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
২০১০ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাকিব খান। ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ তাকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান এনে দেয়।
৭ প্রযোজনা
২০১৪ সালে হুট করেই প্রযোজকের খাতায় শাকিব খানের নাম। এসকে ফিল্মসের ব্যানারে তিনি তৈরি করেন ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’। বদিউল আলম খোকন পরিচালনা করেন এই ছবি।

৮ শাবনূরের সঙ্গে ‘গোলামে’ শুরু
‘গোলাম’ শাবনূরের সঙ্গে শাকিব খানের প্রথম ছবি। এটি হিট হওয়ার পর গড়ে ওঠে দারুণ এক জুটি। যে জুটির অধিকাংশ ছবিই সফল। জুটির সর্বশেষ ছবি ‘বলবো কথা বাসরঘরে’ প্রায় নয় বছর আগের প্রডাকশন।
৯ অসুস্থতা
২০০৮ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শাকিব খান। চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছিল থাইল্যান্ড অবধি। তখন থেকেই তার অসুস্থতা চিন্তার কারণ হয়েছে নির্মাতাদের।
১০ শিল্পী সমিতির সভাপতি
২০১২ সালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াই করেন শাকিব খান। জয়লাভও করেন। পরপর দুবার সমিতির নেতৃত্ব দেন। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরাসরি নির্বাচন করেননি। একটি প্যানেলকে সমর্থন দিয়ে মাঠ গরম করেছেন।
১১ একমাত্র সিক্যুয়েল
শাকিব খানের ক্যারিয়ারের একমাত্র সিক্যুয়েল ছবি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’। ২০১৩ সালে একটি এবং ২০১৬ সালে আরেকটি ছবি তৈরি হয় ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’র নামে। দুটোতেই নায়িকা ছিলেন জয়া আহসান।
১২ সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি
মাসের পর মাস সিনেমা হলে একটানা তার অভিনীত যে ছবি চলেছে তার নাম ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। শাকিব-সাহারা জুটির ম্যাজিক ফুরোতে সময় লেগেছে অনেক। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এ ছবিটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট। মুক্তি পায় ২০০৮ সালের জুন মাসে।
১৩ দেবদাস
তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি হতে পারত চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’। সাদাকালো ছবি বানানোর দুই যুগ পর রঙিন ছবিটিও পরিচালনা করেন চাষী। কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত ছবিটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারে কোনো কিছুই যোগ করতে পারেনি। অথচ ‘দেবদাস’ চরিত্রে এই উপমহাদেশে এর আগে যিনিই কাজ করেছেন তার জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় হিসেবেই রয়ে গেছে।

১৪ নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ খেলা
২০১০ সালে শিডিউল ফাঁসানোয় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন শাকিব খান ও তার সহশিল্পী অপু বিশ্বাস। সেই নিষোধাজ্ঞা যদিও খুব অল্প সময়ের মধ্যে উঠিয়ে নেয়া হয়। বছর তিনেক আগে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের রাতে শাকিব খানের ওপর হামলা করা হয়। তিনিও নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন তেজগাঁও থানায়। আর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যেও ছিল তার সরব অংশগ্রহণ।
১৫ প্রথম সাহিত্যনির্ভর কাজ
শাকিব খানের প্রথম সাহিত্যভিত্তিক কাজ ‘সুভা’। রবীন্দ্রনাথের গল্প থেকে এ ছবি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পূর্ণিমা।
১৬ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি
সোহেল আরমান পরিচালিত ‘এই তো প্রেম’ও শাকিব খানের ক্যারিয়ারের একটি আক্ষেপ। বারবার শুটিং বিলম্বিত হয়ে কয়েক বছরের সাধনার পর ২০১৫ সালে মুক্তি পায় ‘এই তো প্রেম’। মুক্তিযুদ্ধের ওপরে নির্মিত ছবিটি দর্শকমহলে কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।
১৭ ডিপজলের সঙ্গে বিরোধ
২০০৬ সালে চাচ্চু, কোটি টাকার কাবিন, দাদিমা এবং পিতার আসন ব্যবসা সফল হলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়কে পরিণত হোন শাকিব খান। এই ছবিগুলোর প্রযোজক ছিলেন ডিপজল। একটি মামলায় কারাবন্দি হন। জেল থেকে ফিরে এসে আর কখনো শাকিব খানের ছায়া মাড়াননি।
১৮ শাবনূর-পপির সঙ্গে ভাঙন
ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে এই নায়িকাদের সঙ্গে জুটি গড়েই ক্যারিয়ার পোক্ত করেছিলেন শাকিব খান। কিন্তু যখন এই নায়কের বাজার রমরমা, তখন তাদের সঙ্গে আর জুটিবদ্ধ হতে দেখা যায়নি তাকে। শাবনূর-পপির সঙ্গে দূরত্ব আলোচনার খোরাক হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির।
১৯ জাজের সঙ্গে বিরোধ
২০১১ সালে শাকিব খান ওয়াদা মোতাবেক ছবির শুটিং করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্মকর্তারা নায়ককে অস্ত্র ধরেন এফডিসিতে। এই ঘটনায় শুটিং ডাবিং বন্ধের কর্মসূচি দেন তখন শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান ও চলচ্চিত্র নেতারা। কিছুদিন পর বিরোধ মিটে গেলে ওই ব্যানার থেকে ‘ভালোবাসা আজকাল’ ছবিটি করেন শাকিব খান।

২০ বিয়ের পিঁড়িতে
তখন তারা দর্শকনন্দিত জুটি। সিনেমায় চূড়ান্ত ব্যস্ততা। ওই অবস্থায় একরকম পরিবারের অমতেই ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খান সংগোপনে বিয়ে করেন অপু বিশ্বাসকে। কাছের কয়েকজন ছাড়া কেউ ছিলেন না এই বিয়েতে। যে বিয়ের কথা প্রকাশ হয় প্রায় দশ বছর পর।
২১ সবচেয়ে বাজে দিন
অবন্তী বিশ্বাস অপু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে অপু ইসলাম খান নাম নিয়ে শাকিব খানকে বিয়ে করেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় শাকিব-অপুর সন্তান আব্রাম খান জয়ের জন্ম হয়। এই তথ্যগুলো বোমার মতোই দেশজুড়ে ফাটে। আরো কিছু অভিযোগে শাকিব খানকে জর্জরিত করে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভে আসেন অপু বিশ্বাস। ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল দিনটিকে জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন বলে মন্তব্য করেছিলেন শাকিব খান।
২২ আজো সরব আজিজ রেজা
নৃত্যপরিচালক আজিজ রেজার ছোট ভাই পরিচয়েই ইন্ডাস্ট্রিকে ঢোকেন শাকিব খান অর্থাৎ মাসুদ রানা। তারই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শাকিব খান ইন্ডাস্ট্রিতে বেড়ে উঠেছেন। সেই আজিজ রেজা গত কয়েক বছর ধরে শাকিব খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেই যাচ্ছেন। প্রধান অভিযোগই হচ্ছে- শাকিব খান তাকে ভুলে গেছেন!

২৩ : ৭০ ছবিতে অপুর বিপরীতে
২০১৬ সালে ‘চাচ্চু’ ছবিতে প্রথম অভিনয়। তারপর ব্যস্ততার তুঙ্গে পৌঁছে যান শাকিব-অপু। একসঙ্গে ৭০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাও মাত্র ১১ বছরে। যার মধ্যে হিট, সুপারহিট, ফ্লপ সব রকমের ছবিই রয়েছে। গত দেড় যুগের মধ্যে সবচেয়ে সফল এই জুটির বিচ্ছেদে একটি অধ্যায়ের অবসান হলো। ভেঙে যাওয়ার পর শাকিব-অপুর দুটি ছবি রয়ে গেছে অসমাপ্ত। ছবিগুলোর ভাগ্যে কী ঘটবে তা কেউ জানেন না।
২৪ সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক
২০০৮ সালে ৩৫ লাখ পারিশ্রমিক নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে নতুন রেকর্ডের জন্ম দেন শাকিব খান। কিছুদিন আগে একটি ছবিতে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও শোনা গেছে। এই পরিমাণ অঙ্কের পারিশ্রমিক আজ অবধি কেউ নিতে পারেননি।
২৫ একদিনে চার ছবি মুক্তি
২০০৮ সাল থেকে রেকর্ড গড়তে শুরু করেন শাকিব খান। ঈদের দিন তার অভিনীত চারটি ছবি মুক্তি পায়। বেশ কয়েকটি ঈদে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রায় হাজার সিনেমা হলে ঈদে তার ছবি চলে।
২৬ ভারতে প্রবেশ
২০১৬ সালে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শিকারী’ খুলে দেয় তার জন্য এক নতুন দুয়ার। দেশে সব শ্রেণির দর্শককে মুগ্ধ করেই ফুরিয়ে যাননি। এ ছবির সাফল্যে টালিগঞ্জের নির্মাতাদের কাছেও চাহিদা তৈরি করেন শাকিব খান।

২৭ বিবাহ বিচ্ছেদ
গোপন বিয়ের ও সন্তানের খবর প্রকাশের পর থেকেই শাকিব-অপু দ্ব›দ্ব আসে প্রকাশ্যে। চলতে থাকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। মিডিয়ায় তুলকালাম। শাকিব খানের বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনের খবরে ওঠে ঝড়। বিচ্ছেদ ঠেকাতে অপুর কাকুতি মিনতিও আলোচনার বাইরে থাকে না । অনেক নাটকীয়তার শাকিব-অপুর দশ বছরের গোপন সংসারের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।