০৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

এ যেন পাথর আর সবুজের সংমিশ্রণ

বিছানাকান্দি নামটা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, দৃষ্টিনন্দন জায়গাটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই বিছানাকান্দিতে আমি প্রথম ভ্রমণ করেছিলাম ২০১২-২০১৩ শিক্ষা বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ২৮/০৫/২০১৫ইং তারিখে। সর্বমোট চারবার গিয়েছি আমি বিছানাকান্দিতে, সর্বশেষ গত০৩/১২/২০১৮ইং তারিখে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে।

সিলেটের বিছানাকান্দিতে ভ্রমনের রাস্তাটা খুব একটা আরামদায়ক ছিলনা, ছিল অনেক প্রতিকূলতা। প্রথমবার বিছানাকান্দিতে পোঁছানোর পর দূরে দৃষ্টিসীমায় ধরা দেয় আবছা পাহাড়, তার গাঁ বেয়ে নামছে জলের ধারা। অনেক উঁচুতে আকাশের কাছাকাছি পাহাড়ের গা ছুঁয়ে সাদা ধোঁয়ার দল ঘোরাঘুরি করছে, যেন কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে পাহাড়ের গভীর থেকে। নাহ্, ধোঁয়া নয়- মেঘ, বুঝতে খুব একটা দেরি হয় না। এই রকম অপরূপ দৃশ্য দেখলে যাতায়াতের সব কষ্টই দূর হয়ে যায়।

বর্ষার সময় বিছানাকান্দিতে চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, এর সাথে দেখা যায় দুর্বার স্রোতের তরঙ্গ , চারপাশে নীরবতা, শুধু ইঞ্জিনচালিতে নৌকার শব্দ। দূরে দেখা মিলছে গাছপালায় ঠাসা উঁচু উঁচু পাহাড়। নুড়ি পাথরের ধাক্কা খেয়ে ঢেউ ওঠে নদীর বুকে। তারমধ্যে চলছে সবার ছবি তোলা। বর্ষায় ট্রলারে হাদারপাড় থেকে বিছানাকান্দিতে যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।
নৌকায় বসে বসে দেখলাম পাহাড় থেকে কীভাবে মেঘ আকাশে গিয়ে ঝরে পড়ে। চমৎকার এসব দৃশ্য অবাক করে তুলেছিল আমায়। অদ্ভুত মাদকতামাখা পানির সুর আচ্ছন্ন করে ফেলে। মায়ায় পড়ে যাই। নৌকা থেকে নামা মাত্রই শিক্ষার্থীরা সবাই শুরু করে ছবি তোলা, সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলার পর শিক্ষার্থীরা সবাই যে যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ফিরে আসার কোনো তাড়া অনুভব করছিলাম না, প্রকৃতির মায়ায় ডুবে গেছিলাম একেবারে। তবু ফিরতে তো হবেই! সন্ধ্যায় আমরা নগরের পথে রওনা দিলাম, পেছনে পড়ে থাকল প্রকৃতির মায়া ও আনন্দের স্মৃতি।

বিছানাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
বিছানাকান্দি যে কোনো সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে বর্ষাকাল (জুন-আগস্ট) বিছানাকান্দি ভ্রমণ করলে প্রকৃতির আসল রূপ দেখা যায়। তবে শীতের সময়ে পানি কম থাকার কারণে পায়ে হেটে যেতে পারলে ভালো হয় এবং সবদিকটা সুন্দর করে দেখা যায়। বর্ষার সময় বিছানাকান্দির নদী থৈ-থৈ করে তীরে সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়, আর শীতের সময়-ময়ূরের পালকের মত পালক মেলে ধরে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
সিলেট থেকে বিছানাকান্দিতে যাওয়ার উপায়ঃ
সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়ে হাদারপাড় নামক জায়গায় যেতে হবে, হাদারপাড় এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছানাকান্দি যেতে হবে। চাইলে একদিনেই রাতারগুল দেখে বিছানাকান্দি ভ্রমণ করা যায়।
বিছানাকান্দি বাংলাদেশের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ, রাস্তাঘাট ভাঙ্গা এবং বর্ষার সময় কর্দমক্ত থাকে। অপরদিকে রাস্তা কাঁচা হওয়ায় শীতের সময় অনেক ধূলা থাকে। বিছানাকন্দিতে নেই পর্যাপ্ত টুরিস্টগাইড, নেই তেমন কোন উন্নতমানের হোটেল। তারপরেও ভ্রমন পিপাসুদের জন্য বিছানাকান্দি একটি অসাধারণ জায়গা।

লেখকঃ বিভাগীয় চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাগ :

এ যেন পাথর আর সবুজের সংমিশ্রণ

প্রকাশিত : ০১:১৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ মে ২০২০

বিছানাকান্দি নামটা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, দৃষ্টিনন্দন জায়গাটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই বিছানাকান্দিতে আমি প্রথম ভ্রমণ করেছিলাম ২০১২-২০১৩ শিক্ষা বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ২৮/০৫/২০১৫ইং তারিখে। সর্বমোট চারবার গিয়েছি আমি বিছানাকান্দিতে, সর্বশেষ গত০৩/১২/২০১৮ইং তারিখে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে।

সিলেটের বিছানাকান্দিতে ভ্রমনের রাস্তাটা খুব একটা আরামদায়ক ছিলনা, ছিল অনেক প্রতিকূলতা। প্রথমবার বিছানাকান্দিতে পোঁছানোর পর দূরে দৃষ্টিসীমায় ধরা দেয় আবছা পাহাড়, তার গাঁ বেয়ে নামছে জলের ধারা। অনেক উঁচুতে আকাশের কাছাকাছি পাহাড়ের গা ছুঁয়ে সাদা ধোঁয়ার দল ঘোরাঘুরি করছে, যেন কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে পাহাড়ের গভীর থেকে। নাহ্, ধোঁয়া নয়- মেঘ, বুঝতে খুব একটা দেরি হয় না। এই রকম অপরূপ দৃশ্য দেখলে যাতায়াতের সব কষ্টই দূর হয়ে যায়।

বর্ষার সময় বিছানাকান্দিতে চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, এর সাথে দেখা যায় দুর্বার স্রোতের তরঙ্গ , চারপাশে নীরবতা, শুধু ইঞ্জিনচালিতে নৌকার শব্দ। দূরে দেখা মিলছে গাছপালায় ঠাসা উঁচু উঁচু পাহাড়। নুড়ি পাথরের ধাক্কা খেয়ে ঢেউ ওঠে নদীর বুকে। তারমধ্যে চলছে সবার ছবি তোলা। বর্ষায় ট্রলারে হাদারপাড় থেকে বিছানাকান্দিতে যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।
নৌকায় বসে বসে দেখলাম পাহাড় থেকে কীভাবে মেঘ আকাশে গিয়ে ঝরে পড়ে। চমৎকার এসব দৃশ্য অবাক করে তুলেছিল আমায়। অদ্ভুত মাদকতামাখা পানির সুর আচ্ছন্ন করে ফেলে। মায়ায় পড়ে যাই। নৌকা থেকে নামা মাত্রই শিক্ষার্থীরা সবাই শুরু করে ছবি তোলা, সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলার পর শিক্ষার্থীরা সবাই যে যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ফিরে আসার কোনো তাড়া অনুভব করছিলাম না, প্রকৃতির মায়ায় ডুবে গেছিলাম একেবারে। তবু ফিরতে তো হবেই! সন্ধ্যায় আমরা নগরের পথে রওনা দিলাম, পেছনে পড়ে থাকল প্রকৃতির মায়া ও আনন্দের স্মৃতি।

বিছানাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
বিছানাকান্দি যে কোনো সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে বর্ষাকাল (জুন-আগস্ট) বিছানাকান্দি ভ্রমণ করলে প্রকৃতির আসল রূপ দেখা যায়। তবে শীতের সময়ে পানি কম থাকার কারণে পায়ে হেটে যেতে পারলে ভালো হয় এবং সবদিকটা সুন্দর করে দেখা যায়। বর্ষার সময় বিছানাকান্দির নদী থৈ-থৈ করে তীরে সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়, আর শীতের সময়-ময়ূরের পালকের মত পালক মেলে ধরে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
সিলেট থেকে বিছানাকান্দিতে যাওয়ার উপায়ঃ
সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়ে হাদারপাড় নামক জায়গায় যেতে হবে, হাদারপাড় এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছানাকান্দি যেতে হবে। চাইলে একদিনেই রাতারগুল দেখে বিছানাকান্দি ভ্রমণ করা যায়।
বিছানাকান্দি বাংলাদেশের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ, রাস্তাঘাট ভাঙ্গা এবং বর্ষার সময় কর্দমক্ত থাকে। অপরদিকে রাস্তা কাঁচা হওয়ায় শীতের সময় অনেক ধূলা থাকে। বিছানাকন্দিতে নেই পর্যাপ্ত টুরিস্টগাইড, নেই তেমন কোন উন্নতমানের হোটেল। তারপরেও ভ্রমন পিপাসুদের জন্য বিছানাকান্দি একটি অসাধারণ জায়গা।

লেখকঃ বিভাগীয় চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।