কুষ্টিয়া জেলায় মেস ভাড়া পরিশোধ করতে শিক্ষার্থীকে হুমকি দিয়েছেন মেস ম্যানেজার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে এ হুমকি দেয়া হয়। হুমকি দেয়ার কথোপকথন এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
যথাসময়ে ভাড়া পরিশোধ না করলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন কুষ্টিয়ার পেয়ারাতলার সপ্নীল ছাত্রাবাস-২ এর ম্যানেজার মেসবাবুর রহমান রিয়াদ।
ওই মেসের আবাসিক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, শনিবার মেস ম্যানেজার রিয়াদ যথাসময়ে ভাড়া পরিশোধ না করায় (+8801835116568) এই নাম্বার থেকে কল দিয়ে হুমকি দেন।
মেস ম্যানেজার শিক্ষার্থীকে বলেন, ১০ তারিখে মধ্যে মে মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তখন শিক্ষার্থী বলেন, আমি আপনাকে মে মাসের ভাড়াটা যখন পারবো তখন দিয়ে দিবো।
১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধে অস্বীকার জানালে মেস ম্যানেজার রিয়াদ দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
কথোপকথনটি তুলে ধরা হলোঃ
রিয়াদঃ তোমার কি মেসে আসা লাগবেনা?
ছাত্রঃ অবশ্যই যাবো যখন সব খুলবে, আমি কি সব বিক্রি করে আসছি নাকি?
রিয়াদঃআসলে তোমার সমস্যা হবে।
ছাত্রঃ কি সমস্যা হবে?
রিয়াদঃআমি তোমাকে দেখে নেবো। বেশি পাকামো করোনা।
ছাত্রঃ কি সমস্যা হবে বলেন তো? আমি পরছিনা জন্যই এখন দিচ্ছি না।
রিয়াদঃ বেশি বাল পাকনামো করোনা কিন্তু মেসে আসলে খবর করে দেবো।
ছাত্রঃ কি করবেন সেটা বলেন আমাকে?
রিয়াদঃ বেশি বড় নেতা হয়ে গেছো? নেতাগিরি ছুটায় দেবো।
ছাত্রঃ আপনি যে ভাষায় কথা বলছেন এটf কোন অফিসিয়াল ভাষা না।
রিয়াদঃ ১০ তারিখের মধ্যে যেন টাকাটা পে করা হয়।
ছাত্রঃ আপনার ভাষাটা মোটেও অফিসিয়াল না আপনার ভাষাটা ঠিক করতে হবে। বুঝতে পারছেন? আপনি জেলা প্রশাসকের নোটিশ দেখেননি? আপনি এভাবো ফোর্স করতে পারেননা।
রিয়াদঃ ওই বালের ভয় আমাকে দেখাবানা। আমরা ওগুলো মানিনা। তুমি ডিসি এসিকে বলো এই এই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে মেস ভাড়া চাচ্ছে।
ছাত্রঃ ও তাই?
রিয়াদঃ তুমি ভয় দেখাচ্ছো আমাকে?
ছাত্রঃ আপনি আমাকে সন্ত্রাসীর মতো টাকার জন্য ফোর্স করছেন।
রিয়াদঃ তুমি আমার নাম্বার দিয়ে বলো ভাড়া চাচ্ছি?
ছাত্রঃ আচ্ছা আমি সুযোগ মতো আপনার টাকা দিয়ে দিবো।আমার কাছে টাকা না থাকলে আপনি জোর করে নিতে পারবেন?
রিয়াদঃ তুমি মেসে থাকলে আমি যেভাবেই হোক আদায় করে নিতাম তুমি আমাকে ভালো মতো চেননা।
ছাত্রঃ ওখানে থাকলে তো আপনাকে বলাই লাগতো না।
এছাড়াও রিয়াদ শিক্ষার্থীকে বলেন, তোমার সাথে ঝগড়া করবোনা। আমার ভাড়া ঠিক মতো দিয়ে দিবা। নাহলে কিন্তু সমস্যা হবে।
করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গত ১৮ মার্চ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে সকল শিক্ষার্থী নিজ বাড়িতে চলে এসেছে।
এখন মেসে না থেকেও ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। মার্চ, এপ্রিল মাসের ভাড়া পরিশোধ করলেও মে মাসের ভাড়া পরিশোধ না করায় এ হুমকি দেয়া হয়। কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে এখনও জানা যায়নি।
বন্ধ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া বা ক্যাম্পাসের আশেপাশে মেসে থেকে টিউশনি করে টাকা রোজগার করতেন তা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ভাড়া পরিশোধ করতে বিপাকে পড়েছেন।
গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক বরাবর মেস ভাড়া মওকুফের দাবিতে খোলা চিঠি দেন।
তা ১ মে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী ৬ মে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন এর কাছে মেস ভাড়া মওকুফের আহ্বান জানান।
ডিসি অফিস কুষ্টিয়া ফেসবুক পেইজ থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার মেস ভাড়া কমানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মালিকগণকে আহবান জানানো হয়েছে এবং এ পর্যন্ত অনেক ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে৷
এ বিষয়ে গত ৭ মে ২০২০ তারিখে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক জরুরি সভায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন মেস ভাড়া ও কর্মহীন হয়ে পড়া স্বল্প আয়ের ভাড়াটিয়াদের বাসা/দোকান ভাড়া মওকুফ/কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেন৷
সভায় উপস্থিত সকল সদস্যবৃন্দের সম্মতিক্রমে মেস মালিক ও বাসা/দোকান মালিকগণের প্রতি নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ আন্তরিকভাবে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, এক মাসের সম্পুর্ণ ভাড়া না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি যদি চলমান থাকে তাহলে সকল মেস মালিকদেরকে তাদের নির্ধারিত ভাড়ার ৫০% কম আদায়ের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে কোনো রকম জটিলতা সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
যে কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে মালিক ও ভাড়াটিয়াগণকে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন, কুষ্টিয়ার হট-লাইন নম্বরগুলো (বিশেষ করে করোনা কন্ট্রোল নম্বরঃ: +880 1723-320964)-তে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক


























