০৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

করোনায় থেমে নেই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে কর্মরত বিদেশি কর্মীরা নিজ নিজ দেশে গিয়ে ফিরে না আসায় আরো বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে। যদিও তাদের ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্প থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

চীন, জাপান, ইতালি ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিক বাংলাদেশের ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থিত চীন দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী, এদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজারই চীনের নাগরিক। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত সাড়ে তিনশ’ চীনা নাগরিক তাদের চৈনিক নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ছুটি কাটাতে জানুয়ারিতে দেশে গিয়ে আর ফিরতে পারেনি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কয়েক মাস ধরে প্রকল্পের বাইরে রয়েছেন তারা। নববর্ষ শেষে তাদের যোগ দেয়ার কথা থাকলেও কয়েকজন ছাড়া তেমন কেউই ফিরতে পারেননি।

এদিকে চীনের কর্মীদের কারণে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চলতি মাসে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের কথা থাকলেও তারা সঞ্চালন শুরু করতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে তিনশ’র বেশি বিদেশি কর্মী ছুটিতে দেশে গিয়ে ফিরতে পারেনি। যে কয়েকজন ফিরেছেন তাদের নানা ধরনের প্রসিডিউরের মধ্য দিয়ে ফিরতে হয়েছে। কর্মী না থাকায় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই বিদুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যদি এরকম চলতে থাকে, তাহলে বর্তমানে যেটুকু উৎপাদন কার্যক্রম চলছে তাও ধরে রাখা কঠিন হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকা অবস্থায় মেশিন সংশ্লিষ্ট ছোট ছোট যে যন্ত্রাংশ দরকার হয়, তা চীন থেকে আসে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করলেও পরিচালনার জন্য চীনা প্রকৌশলীদের প্রয়োজন হবে।

খোরশেদ আলম জানান, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত চীনের যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যেসব প্রসিডিউর বর্তমানে মেইনটেন করতে হয় তা শেষ করে আসতে সময় লাগবে। ফলে চলতি মাসে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল তা পেছাতে হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমাদের বিদ্যুতের সরবরাহ চাহিদার থেকে অনেক বেশি রয়েছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চালু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে যদি চালু না করা যায়, তাতেও অসুবিধা নেই। এ নিয়ে আমাদের তাড়া নেই। কারণ এতে খরচ বাড়ার ব্যাপার নেই। বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়েই তো কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের সরকার মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্প দুইটি ইউনিটে ভাগ করে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে। সেখান থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। দ্বিতীয় ইউনিট চলতি মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও পদ্মা সেতু, পদ্মা রেললাইন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার (রামু) রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল এবং ঢাকা বাইপাস রোড উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের নাগরিকেরা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পগুলোতে চীনের কয়েক হাজার কর্মী বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন। এসব প্রকল্পের সঙ্গে বেশকয়েকটি চীনা সংস্থা জড়িত। সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীনে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে পদ্মাবহুমুখী সেতুর কাজ চলমান থাকলেও বাকি প্রকল্পগুলোতে কর্মী না থাকায় কাজে গতি নেই।

বিজনেস বাংলাদেশ/এসএম

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

করোনায় থেমে নেই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

প্রকাশিত : ০৮:২৮:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে কর্মরত বিদেশি কর্মীরা নিজ নিজ দেশে গিয়ে ফিরে না আসায় আরো বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে। যদিও তাদের ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্প থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

চীন, জাপান, ইতালি ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিক বাংলাদেশের ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থিত চীন দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী, এদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজারই চীনের নাগরিক। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত সাড়ে তিনশ’ চীনা নাগরিক তাদের চৈনিক নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ছুটি কাটাতে জানুয়ারিতে দেশে গিয়ে আর ফিরতে পারেনি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কয়েক মাস ধরে প্রকল্পের বাইরে রয়েছেন তারা। নববর্ষ শেষে তাদের যোগ দেয়ার কথা থাকলেও কয়েকজন ছাড়া তেমন কেউই ফিরতে পারেননি।

এদিকে চীনের কর্মীদের কারণে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চলতি মাসে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের কথা থাকলেও তারা সঞ্চালন শুরু করতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে তিনশ’র বেশি বিদেশি কর্মী ছুটিতে দেশে গিয়ে ফিরতে পারেনি। যে কয়েকজন ফিরেছেন তাদের নানা ধরনের প্রসিডিউরের মধ্য দিয়ে ফিরতে হয়েছে। কর্মী না থাকায় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই বিদুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যদি এরকম চলতে থাকে, তাহলে বর্তমানে যেটুকু উৎপাদন কার্যক্রম চলছে তাও ধরে রাখা কঠিন হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকা অবস্থায় মেশিন সংশ্লিষ্ট ছোট ছোট যে যন্ত্রাংশ দরকার হয়, তা চীন থেকে আসে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করলেও পরিচালনার জন্য চীনা প্রকৌশলীদের প্রয়োজন হবে।

খোরশেদ আলম জানান, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত চীনের যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যেসব প্রসিডিউর বর্তমানে মেইনটেন করতে হয় তা শেষ করে আসতে সময় লাগবে। ফলে চলতি মাসে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল তা পেছাতে হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমাদের বিদ্যুতের সরবরাহ চাহিদার থেকে অনেক বেশি রয়েছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চালু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে যদি চালু না করা যায়, তাতেও অসুবিধা নেই। এ নিয়ে আমাদের তাড়া নেই। কারণ এতে খরচ বাড়ার ব্যাপার নেই। বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়েই তো কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের সরকার মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্প দুইটি ইউনিটে ভাগ করে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে। সেখান থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। দ্বিতীয় ইউনিট চলতি মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও পদ্মা সেতু, পদ্মা রেললাইন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার (রামু) রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল এবং ঢাকা বাইপাস রোড উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের নাগরিকেরা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পগুলোতে চীনের কয়েক হাজার কর্মী বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন। এসব প্রকল্পের সঙ্গে বেশকয়েকটি চীনা সংস্থা জড়িত। সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীনে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে পদ্মাবহুমুখী সেতুর কাজ চলমান থাকলেও বাকি প্রকল্পগুলোতে কর্মী না থাকায় কাজে গতি নেই।

বিজনেস বাংলাদেশ/এসএম