০৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

আত্মহত্যা কোনো মুক্তির পথ নয়

বিশ্বকবি রবী ঠাকুর আকুল হয়ে বলেছিলেন, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।” অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যেতে অনেকেই করেন তাড়াহুড়া, করেন আত্মহত্যা। কিন্তু কেন করেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করার পথ বেছে নেন। এর অর্থ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন।
আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ আসলে কী? একদিনেই কি মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্মহত্যা করবে? মূলত জীবনে কঠিন কঠিন চলার সময় ছোট- ছোট ঘটনাগুলো এক সময় পরিণত হয় মানসিক দুশ্চিন্তায়।
আর সে কঠিন সময়কে পার করতে না পেরেই মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
ব্রিটিশ কবি থমাস শ্যাটারটন আত্মহত্যা করেছিলেন এই বলে যে ‘আমার মতো কোমল হৃদয়ের জন্য এই নির্মম পৃথিবী যোগ্য নয়।’
মানসিক অশান্তি, পারিবারিক বিপর্যয়, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি নানান বিষয় থেকে ঘটছে আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক ঘটনা।
এমন কোন অপরাধের কথা আপনি জানেন কি? যা করলে শাস্তি হয় না, কিন্তু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে শাস্তি হয় ? এই সরল ধাঁধাঁর উত্তর হচ্ছে ‘আত্মহত্যা’। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা মহাপাপ। আইন অনুসারে এটি একটি অপরাধ।
দন্ডবিধির ৩০৯ ধারায় বলা আছে- যদি কোন লোক আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং অনুরুপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করে, তবে উক্ত লোক ১ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ৫ জন আত্মহত্যা তরুণদের মাঝে ৪ জনই আত্নহত্যা করার পূর্বে ইঙ্গিত প্রদান করে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আত্মহত্যাকে মানসিক অসুস্থতা সংক্রান্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যখন একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার বিষয়ে ব্যাপক চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন, তখনই তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
মনোবিদগণ বলেন , যখন ব্যক্তি নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তা জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে কাউকে জানানো। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে কিভাবে আত্মহত্যা করবেন, তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ এর কথা বলেন মনোবিজ্ঞানীগন। স্ক্রিনিংঃ- আত্মহত্যার চূড়ান্ত হারে সাধারণ জনসংখ্যার স্ক্রীনিংয়ের প্রভাবগুলির উপর সামান্য তথ্য রয়েছে। আত্মঘাতী ধারণা এবং আত্মঘাতী অভিপ্রায় থেকে আহতদের মধ্যে যারা জরুরী বিভাগে আসে তাদের স্ক্রীনিং সনাক্ত করার মাধ্যমে সাহায্য করা যায় ।
মানসিক অসুখঃ-মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যেসব চিকিৎসা দেয়া হয় তা আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে পারে। যারা সক্রিয়ভাবে আত্মঘাতী হয় তারা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে মনস্তাত্ত্বিক যত্নে ভর্তি হতে পারে।
মনোবিজ্ঞানী ডায়ান বার্থ বলছেন, যদি বন্ধু, সঙ্গী, আত্মীয়স্বজন কেউ না থাকে অথবা তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে না চান কেউ, তাহলে অন্ততপক্ষে যেন সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন কমিউনিটিগুলির সঙ্গে যুক্ত থাকেন একা মানুষেরা। এতে মানসিক চাপ কমবে অনেকটা।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে যা যা করনীয় :
দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞর শরণাপন্ন হন, যদি কখনো (একবারের জন্য হলেও) আত্মহত্যা করার চিন্তা করে থাকেন।
ডাক্তারের সাথে মন খুলে কথা বলুন, পরামর্শ নেয়া। পরিবারের কেউ কিংবা কোন বন্ধু-বান্ধবী আত্মহত্যার কথা শেয়ার করলে বা হুমকি দিলে তা কখনোই হালকা ভাবে নিবেন না। যত তারাতারি সম্ভব তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন।
দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং তার সাথে কথা বলা। ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলতে আগ্রহী হওয়া এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো আরো শক্তিশালী করে তোলা। যে যেভাবে পারেন নিজেকে ভালো রাখেন। অন্য মানুষ কি বলে সেটা কানে নিবেন না।
ডিপ্রেশন খুব খারাপ। এর সাথে লড়াই করুন এবং যারা ডিপ্রেশন বুঝেন না তারা দয়া করে নিজের মুখ বন্ধ রাখেন।
মনে রাখবেন আপনার একটা জাজমেন্ট, আপনার একটা নেগেটিভ কমেন্ট, আপনার একটা পাত্তা না দেওয়ার ভাব একজন মানুষকে আত্মহত্যা করার দিকে উৎসাহিত করতে পারে।
ইতিবাচক ও বন্ধুসুলভ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে তরুণ প্রজন্মের এই আত্নহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব!
লেখক- হোসনে সাদিয়া নিতু, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

আত্মহত্যা কোনো মুক্তির পথ নয়

প্রকাশিত : ১২:৪৭:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুন ২০২০
বিশ্বকবি রবী ঠাকুর আকুল হয়ে বলেছিলেন, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।” অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যেতে অনেকেই করেন তাড়াহুড়া, করেন আত্মহত্যা। কিন্তু কেন করেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করার পথ বেছে নেন। এর অর্থ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন।
আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ আসলে কী? একদিনেই কি মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্মহত্যা করবে? মূলত জীবনে কঠিন কঠিন চলার সময় ছোট- ছোট ঘটনাগুলো এক সময় পরিণত হয় মানসিক দুশ্চিন্তায়।
আর সে কঠিন সময়কে পার করতে না পেরেই মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
ব্রিটিশ কবি থমাস শ্যাটারটন আত্মহত্যা করেছিলেন এই বলে যে ‘আমার মতো কোমল হৃদয়ের জন্য এই নির্মম পৃথিবী যোগ্য নয়।’
মানসিক অশান্তি, পারিবারিক বিপর্যয়, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি নানান বিষয় থেকে ঘটছে আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক ঘটনা।
এমন কোন অপরাধের কথা আপনি জানেন কি? যা করলে শাস্তি হয় না, কিন্তু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে শাস্তি হয় ? এই সরল ধাঁধাঁর উত্তর হচ্ছে ‘আত্মহত্যা’। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা মহাপাপ। আইন অনুসারে এটি একটি অপরাধ।
দন্ডবিধির ৩০৯ ধারায় বলা আছে- যদি কোন লোক আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং অনুরুপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করে, তবে উক্ত লোক ১ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ৫ জন আত্মহত্যা তরুণদের মাঝে ৪ জনই আত্নহত্যা করার পূর্বে ইঙ্গিত প্রদান করে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আত্মহত্যাকে মানসিক অসুস্থতা সংক্রান্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যখন একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার বিষয়ে ব্যাপক চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন, তখনই তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
মনোবিদগণ বলেন , যখন ব্যক্তি নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তা জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে কাউকে জানানো। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে কিভাবে আত্মহত্যা করবেন, তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ এর কথা বলেন মনোবিজ্ঞানীগন। স্ক্রিনিংঃ- আত্মহত্যার চূড়ান্ত হারে সাধারণ জনসংখ্যার স্ক্রীনিংয়ের প্রভাবগুলির উপর সামান্য তথ্য রয়েছে। আত্মঘাতী ধারণা এবং আত্মঘাতী অভিপ্রায় থেকে আহতদের মধ্যে যারা জরুরী বিভাগে আসে তাদের স্ক্রীনিং সনাক্ত করার মাধ্যমে সাহায্য করা যায় ।
মানসিক অসুখঃ-মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যেসব চিকিৎসা দেয়া হয় তা আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে পারে। যারা সক্রিয়ভাবে আত্মঘাতী হয় তারা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে মনস্তাত্ত্বিক যত্নে ভর্তি হতে পারে।
মনোবিজ্ঞানী ডায়ান বার্থ বলছেন, যদি বন্ধু, সঙ্গী, আত্মীয়স্বজন কেউ না থাকে অথবা তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে না চান কেউ, তাহলে অন্ততপক্ষে যেন সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন কমিউনিটিগুলির সঙ্গে যুক্ত থাকেন একা মানুষেরা। এতে মানসিক চাপ কমবে অনেকটা।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে যা যা করনীয় :
দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞর শরণাপন্ন হন, যদি কখনো (একবারের জন্য হলেও) আত্মহত্যা করার চিন্তা করে থাকেন।
ডাক্তারের সাথে মন খুলে কথা বলুন, পরামর্শ নেয়া। পরিবারের কেউ কিংবা কোন বন্ধু-বান্ধবী আত্মহত্যার কথা শেয়ার করলে বা হুমকি দিলে তা কখনোই হালকা ভাবে নিবেন না। যত তারাতারি সম্ভব তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন।
দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং তার সাথে কথা বলা। ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলতে আগ্রহী হওয়া এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো আরো শক্তিশালী করে তোলা। যে যেভাবে পারেন নিজেকে ভালো রাখেন। অন্য মানুষ কি বলে সেটা কানে নিবেন না।
ডিপ্রেশন খুব খারাপ। এর সাথে লড়াই করুন এবং যারা ডিপ্রেশন বুঝেন না তারা দয়া করে নিজের মুখ বন্ধ রাখেন।
মনে রাখবেন আপনার একটা জাজমেন্ট, আপনার একটা নেগেটিভ কমেন্ট, আপনার একটা পাত্তা না দেওয়ার ভাব একজন মানুষকে আত্মহত্যা করার দিকে উৎসাহিত করতে পারে।
ইতিবাচক ও বন্ধুসুলভ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে তরুণ প্রজন্মের এই আত্নহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব!
লেখক- হোসনে সাদিয়া নিতু, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক