০৬:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

ভার্চুয়াল কোর্ট: বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ

করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতির মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চলছে আদালতের কার্যক্রম। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষায় ভার্চুয়াল কোর্টের প্রবর্তন হওয়াকে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আপদকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট গঠন হলেও এটাকে ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকে বলছেন, করোনার বিশেষ পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালত উপযোগী হলেও সব সময়ের জন্য অনলাইনে বিচারকাজ পরিচালনা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পরই করোনাকালীন সময়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন ভার্চুয়াল কোর্ট। গত ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালত, হাইকোর্ট বিভাগের ১৩টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ ও সারাদেশের জজ কোর্টের ভার্চুয়াল আদালতে জরুরি বিষয়ে বিচার চলছে।

ভার্চুয়াল কোর্ট ও তার ভবিষ্যত নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ভার্চুয়াল আদালতে শুরুতে একটু কারিগরি সমস্যা হলেও নিজেদের প্রয়োজনেই তা শিখতে হবে। আমরা সেটা ওভারকাম করার চেষ্টা করছি। এটা অবশ্যই একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

ভার্চুয়াল কোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, করোনার কারণে মানুষ এখন আদালতে যেতে পারছেন না। নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে ভার্চুয়াল আদালতে বিচার চলছে। এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি করে আদালত জামিন দিচ্ছেন। এটা ঠিক আছে। কিন্তু কনটেস্টটেড ম্যাটার, যেখানে সাক্ষী প্রয়োজন রয়েছে, সেসব মামলায় ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি সম্ভব না। তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে ভার্চুয়াল আদালত যে আদেশ দিচ্ছেন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠায় ভার্চুয়াল আদালত চালু পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান সাবেক এই আইনমন্ত্রী।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপদকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল আদালত শুরু হলেও স্বাভাবিক সময়েও এই অধ্যাদেশটি ক্রিমিনাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। যেমন ক্রিমিনাল মামলায় অনেক সাক্ষী না আসার কারণে বা দেশের বাইরে থাকার কারণে বিচারে বিলম্ব হয়। ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে অধ্যাদেশ জারির ফলে এখন ভিডিও কনফারেন্সে বা অনলাইনে এসব ক্ষেত্রে সাক্ষী গ্রহণ করতে পারবেন আদালত। আইনজীবীরা সাময়িকভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হলেও ধীরে ধীরে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরের কাজ ১৯৯৬ সাল থেকেই শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় এসে যাবে সব অফিস। ই-জুডিশিয়ারি করার জন্য একটি প্রকল্পও নেয়া হয়েছিল, তার কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল। ভার্চুয়াল কোর্ট করে আমাদের বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার যে উদ্দেশ্য এবং ডিজিটালি করার যে পরিকল্পনা ছিল, সেটাকে এগিয়ে এনে ভার্চুয়াল কোর্ট আরো আগে তৈরি করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এ পদক্ষেপকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

সারাদেশের অধস্তন আদালত (ভার্চুয়াল আদালত) ৩৯ হাজার ২০২ আসামি জামিন পেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, ১১ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মোট ২৫ কার্যদিবসে সারাদেশের অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানিতে ৭৩ হাজার ১১৬ জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এতে ৩৯ হাজার ২০২ আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়া, ১৮ জুন পর্যন্ত মোট ২৫ কার্যদিবসে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছে ৫৩৬ শিশু। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৭১ শিশুকে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

ভার্চুয়াল কোর্ট: বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ

প্রকাশিত : ০৬:৫৯:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতির মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চলছে আদালতের কার্যক্রম। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষায় ভার্চুয়াল কোর্টের প্রবর্তন হওয়াকে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আপদকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট গঠন হলেও এটাকে ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকে বলছেন, করোনার বিশেষ পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালত উপযোগী হলেও সব সময়ের জন্য অনলাইনে বিচারকাজ পরিচালনা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পরই করোনাকালীন সময়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন ভার্চুয়াল কোর্ট। গত ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালত, হাইকোর্ট বিভাগের ১৩টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ ও সারাদেশের জজ কোর্টের ভার্চুয়াল আদালতে জরুরি বিষয়ে বিচার চলছে।

ভার্চুয়াল কোর্ট ও তার ভবিষ্যত নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ভার্চুয়াল আদালতে শুরুতে একটু কারিগরি সমস্যা হলেও নিজেদের প্রয়োজনেই তা শিখতে হবে। আমরা সেটা ওভারকাম করার চেষ্টা করছি। এটা অবশ্যই একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

ভার্চুয়াল কোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, করোনার কারণে মানুষ এখন আদালতে যেতে পারছেন না। নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে ভার্চুয়াল আদালতে বিচার চলছে। এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি করে আদালত জামিন দিচ্ছেন। এটা ঠিক আছে। কিন্তু কনটেস্টটেড ম্যাটার, যেখানে সাক্ষী প্রয়োজন রয়েছে, সেসব মামলায় ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি সম্ভব না। তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে ভার্চুয়াল আদালত যে আদেশ দিচ্ছেন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠায় ভার্চুয়াল আদালত চালু পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান সাবেক এই আইনমন্ত্রী।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপদকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল আদালত শুরু হলেও স্বাভাবিক সময়েও এই অধ্যাদেশটি ক্রিমিনাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। যেমন ক্রিমিনাল মামলায় অনেক সাক্ষী না আসার কারণে বা দেশের বাইরে থাকার কারণে বিচারে বিলম্ব হয়। ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে অধ্যাদেশ জারির ফলে এখন ভিডিও কনফারেন্সে বা অনলাইনে এসব ক্ষেত্রে সাক্ষী গ্রহণ করতে পারবেন আদালত। আইনজীবীরা সাময়িকভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হলেও ধীরে ধীরে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরের কাজ ১৯৯৬ সাল থেকেই শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় এসে যাবে সব অফিস। ই-জুডিশিয়ারি করার জন্য একটি প্রকল্পও নেয়া হয়েছিল, তার কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল। ভার্চুয়াল কোর্ট করে আমাদের বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার যে উদ্দেশ্য এবং ডিজিটালি করার যে পরিকল্পনা ছিল, সেটাকে এগিয়ে এনে ভার্চুয়াল কোর্ট আরো আগে তৈরি করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এ পদক্ষেপকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

সারাদেশের অধস্তন আদালত (ভার্চুয়াল আদালত) ৩৯ হাজার ২০২ আসামি জামিন পেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, ১১ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মোট ২৫ কার্যদিবসে সারাদেশের অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানিতে ৭৩ হাজার ১১৬ জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এতে ৩৯ হাজার ২০২ আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়া, ১৮ জুন পর্যন্ত মোট ২৫ কার্যদিবসে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছে ৫৩৬ শিশু। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৭১ শিশুকে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ