রাঙ্গামাটিতে মৃত্যুর কূপ হিসেবে পরিণত হয়েছে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। প্রতি বছর চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যু হচ্ছে অগণিত প্রসূতি ও নবজাতকের। বিভিন্ন থাকার করার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না অভিযুক্ত রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনর্চাজ ডা.লেলিন তালুকদার ও নার্সেদের বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার সময়ে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসূতির প্রসবের পরবর্তীকালে চিকিৎসার অবহেলায় এক প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। প্রসূতি মা ছিলেন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার ২নং মগবান ইউনিয়নের কামিলাছড়ি সুপ্রিয় চাকমা’র স্ত্রী রেনুকা চাকমা(২৬)।
স্বজনদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে রেনুকা চাকমাকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে প্রসূতির লেলিন তালুকদার প্রসববের দায়িত্ব নিলেও প্রসবের সময়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে চলে যান ডা.লেলিন তালুকদার। পরে হাসপাতালের নার্সরা প্রসূতির প্রসবের কাজ করান। প্রসবের ১০ মিনিটের পরে নবজাতাক মারা যায়। ৩০ মিনিটের পর প্রসবের সীট থেকে প্রসূতিকে নামানোর চেষ্টা করা হলে সীট থেকে ফ্লোরে পরে যান। এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর আঘাত পান। স্বজনদের অভিযোগ, ডা. লেলিন তালুকদার ও নার্সদের চিকিৎসা অবহেলার কারণে রেনুকা চাকমা’র মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. লেলিন তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ যেন শেষ নেই। লেলিন তালুকদারের বিরুদ্ধে অনেকের অভিযোগ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে অভিযোগ করতেও চাই না ভূক্তভোগীরা। এভাবে ভূল চিকিৎসায় স্বজনদের হারাতে চাইনা কেউ। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ স্বজনদের।
এ বিষয়য়ে প্রসূতির আপন বোন সুপা চাকমা ও স্বামী সুপ্রিয় চাকমা জানায়, ডা.লেলিন তালুকদারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রসূতি রেনুকা চাকমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার সকালে ভর্তি করানোর পর তিনি জানিয়েছিলেন, নরমাল ডেলিভারীতে প্রসবের কাজ সম্ভব হবে। এতে চিন্তার কোনো কারন নেই। সে সময় ডা.লেলিন তালুকদারের পরামর্শে দায়িত্বরত নার্স প্রসূতি রেনুকা চাকমাকে একটি স্যালাইন পুষ করে দেন। এমনকি নরমাল ডেলিভারী যদি সম্ভব না হয় সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারী করার জন্য ডাক্তারকে অনুরোধ করা হয়েছিলো। তাতে কোনো লাভ হয়নি। ডাক্তার নিজেই বলে দিলেন, নরমালে ডেলিভারী সম্ভব হবে। প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে হাসপাতাল ত্যাগ করেন অভিযুক্ত ডা. লেলিন তালুকদার। অবস্থার খারাপ দেখে তিনি পালিয়ে যান। তার দায় এড়াতেই তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। প্রসবের কিছুক্ষণ পর নবজাতক মারা যাওয়ার পরে ডা.লেলিন তালুকদার হাসপাতালে এসেই প্রসূতিকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়। এতে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হাসপাতালের নার্সরাও প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়টি জানায়।
অপরদিকে হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের ইনচার্জ ডা.লেলিন তালুকদার। তিনি প্রতিবেদককে জানান, রোগী আমার পূর্ব পরিচিত। প্রসবের কাজ যেহেতু আমি করিনি সেহেতু আমি সবকিছু জানতাম না আসলেই ঘটনা কি ঘটেছে। যখন প্রসূতিকে ভর্তি করানো হয় তখন প্রসূতির অবস্থা ভালো দেখে নরমাল ডেলিভারীর জন্য নার্সদের বলা হয়েছে। হঠাৎ করে কি হয়েছে তা সবি ভাগ্যের বিষয়। ডেলিভারী হওয়ার সময় কেন হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা যেহেতু ভাল এবং আমার ব্যক্তিগত কাজ থাকাতেই হাসপাতাল ত্যাগ করেছিলাম। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ জেনে হাসপাতালে ফিরে এসে দেখি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জানান, বিষয়টি ব্যক্তিগত ভাবে অবগত নই। রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি মূলত পরিবার ও পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে পরিচালিত। তবে যদি রোগীদের সাথে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটে তার তদন্ত করা প্রয়োজন।
বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর