০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

শেষের পথে মৌসুম, সাগরে ইলিশের আকাল

গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন মাছের বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে মাছধরা নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় অবসরই কেটেছিল ইলিশ ধরা জেলেদের। নিষেধাজ্ঞার পর কয়েক দিন গভীর সমুদ্রে ইলিশের দেখা মিললেও গত ১০-১২ দিন ধরে সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না রূপালী ইলিশ। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া থাকায় ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না জেলেরা।

পাথরঘাটা মৎস্য কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নিষিদ্ধ সময়ের পর ২৪ জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরে ৯৬০.৮৪৩ টন ইলিশের উৎপাদন হয়। এতে সরকার ৭২ লাখ ৯১ হাজার ৫২৬ টাকা রাজস্ব পায়। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ৪৯৪.২২৫ টন ইলিশের উৎপাদন হয়। সরকার রাজস্ব পায় ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৪০ টাকা; যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

প্রতিদিন জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়ে ঘাটে ফিরছে দু-একটি ইলিশ নিয়ে। কেউবা আবার ফিরছেন শূন্যহাতে। আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার। এনজিওর ঋণ আর মহাজনের দাদনের ভাবনায় যেন জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। তাছাড়া বিনিয়োগ করে এখন লোকসান গুনছে আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে জেলেদের ঋণ ও দাদন দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। জেলেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন।

কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই নদীতে যাচ্ছেন না। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেরা। বর্তমানে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

দেশের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের শত শত ট্রলার। আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়তদাররা। দু-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণ কেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনাবেচা নেই।

জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েক দিন বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়লেও এখন সাগরে ইলিশ মিলছে না। কয়েক দিন পরপর অবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জেলেরা গভীর সমুদ্রেও যেতে পারছেন না।

পাথরঘাটা মৎস্য কর্পোরেশনের মার্কেটিং অফিসার আহম্মদ উল্লাহ বলেন, এ বছর ইলিশের উৎপাদন গত বছর থেকে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারছে না। যে কারণে মনে হয় তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিছুদিন প্রচুর ইলিশ ছিল, এখন একটু কম। তবে নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। আবহাওয়া ভালো হলেই ইলিশের দেখা মিলবে।

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, আমাদের এই উপকূলীয় অঞ্চলে এ বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস একটু বেশি। যার কারণে জেলেরা সাগরে কম যেতে পেরেছেন। সেই হিসাবে মাছের আধিক্য আছে এখনও। প্রথমদিকে হয়তো জেলেরা মাছ পাননি, পরবর্তীতে কিন্তু ঠিকই তারা প্রচুর পরিমাণে মাছ পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের জেলেরা আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করার কারণেও কোন স্থানে মাছ আছে তা নির্ধারণ করতে না পারায় বেশি মাছ শিকার করতে পারছেন না। যারা নির্ধারণ করতে পারছে তারা মাছ শিকার করতে পারছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছুটা মাছ কমছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

জনপ্রিয়

দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, নগদ অর্থ লুট, আহত ৩

শেষের পথে মৌসুম, সাগরে ইলিশের আকাল

প্রকাশিত : ০৯:১৬:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন মাছের বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে মাছধরা নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় অবসরই কেটেছিল ইলিশ ধরা জেলেদের। নিষেধাজ্ঞার পর কয়েক দিন গভীর সমুদ্রে ইলিশের দেখা মিললেও গত ১০-১২ দিন ধরে সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না রূপালী ইলিশ। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া থাকায় ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না জেলেরা।

পাথরঘাটা মৎস্য কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নিষিদ্ধ সময়ের পর ২৪ জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরে ৯৬০.৮৪৩ টন ইলিশের উৎপাদন হয়। এতে সরকার ৭২ লাখ ৯১ হাজার ৫২৬ টাকা রাজস্ব পায়। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ৪৯৪.২২৫ টন ইলিশের উৎপাদন হয়। সরকার রাজস্ব পায় ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৪০ টাকা; যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

প্রতিদিন জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়ে ঘাটে ফিরছে দু-একটি ইলিশ নিয়ে। কেউবা আবার ফিরছেন শূন্যহাতে। আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার। এনজিওর ঋণ আর মহাজনের দাদনের ভাবনায় যেন জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। তাছাড়া বিনিয়োগ করে এখন লোকসান গুনছে আড়তদার ও দাদন ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে জেলেদের ঋণ ও দাদন দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। জেলেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন।

কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই নদীতে যাচ্ছেন না। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেরা। বর্তমানে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

দেশের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের শত শত ট্রলার। আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়তদাররা। দু-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণ কেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনাবেচা নেই।

জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েক দিন বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়লেও এখন সাগরে ইলিশ মিলছে না। কয়েক দিন পরপর অবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জেলেরা গভীর সমুদ্রেও যেতে পারছেন না।

পাথরঘাটা মৎস্য কর্পোরেশনের মার্কেটিং অফিসার আহম্মদ উল্লাহ বলেন, এ বছর ইলিশের উৎপাদন গত বছর থেকে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারছে না। যে কারণে মনে হয় তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিছুদিন প্রচুর ইলিশ ছিল, এখন একটু কম। তবে নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। আবহাওয়া ভালো হলেই ইলিশের দেখা মিলবে।

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, আমাদের এই উপকূলীয় অঞ্চলে এ বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস একটু বেশি। যার কারণে জেলেরা সাগরে কম যেতে পেরেছেন। সেই হিসাবে মাছের আধিক্য আছে এখনও। প্রথমদিকে হয়তো জেলেরা মাছ পাননি, পরবর্তীতে কিন্তু ঠিকই তারা প্রচুর পরিমাণে মাছ পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের জেলেরা আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করার কারণেও কোন স্থানে মাছ আছে তা নির্ধারণ করতে না পারায় বেশি মাছ শিকার করতে পারছেন না। যারা নির্ধারণ করতে পারছে তারা মাছ শিকার করতে পারছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছুটা মাছ কমছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত