ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিকদের সংগঠন ‘জীবন-জীবিকা বাঁচাও’-এর ডাকা ধর্মঘটে আজ সোমবার সকাল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার দায়িত্বরত রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, পেট্রাপোলে শ্রমিকদের কর্মবিরতি থাকায় সোমবার সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় দুই বন্দরে পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে।
পেট্রাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শশাঙ্ক শেখর বলেন, ‘সোমবার পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছে, সরকারি আধিকারীকদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কখন আমদানি রপ্তানি চালু হবে।’বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের বনগাঁ পেট্রাপোল অঞ্চলে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বাঁচাও কমিটির আন্দোলনের কারণে সোমবার সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ায় ওপারে বন্দরের সব কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। তবে বেনাপোল বন্দর খোলা রয়েছে। শুল্ক বিভাগের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম,পণ্য খালাস এবং আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার চলছে।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দু’বন্দরেই পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় কয়েক শত পণ্য বোঝাই ট্রাক পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে।’
এসব পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, খাদ্যদ্রব্য এবং পচনশীল পণ্যও রয়েছে। দ্রব্য বাণিজ্য সচল না হলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের কবলে পড়বেন বলে মনে করেন তিনি।
বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল শুল্কভবন ও বন্দরের কাজকর্ম এবং আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্য চালান খালাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই কাজ করছে। আমরা পূর্ণ পরিসরে অফিস খোলা রেখেছি। পেট্রাপোলে পণ্যচালান পাঠানো শুরু করলে আমরা ও বন্দর তা গ্রহণের জন্য সবসময়ই প্রস্তুত আছি।
বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশ কিছু শর্ত মেনে আমদানি-রপ্তানি করা হচ্ছে। এসব শর্ত মেনে চলতে গিয়ে সাধারণ কুলি ও বন্দর শ্রমিকদের রুটি রুজির উপর হাত পড়েছে।
পেট্রাপোল স্থলবন্দরে কর্মরত এসব কর্মজীবীরাই গঠন করেছেন ‘পেট্রাপোল জীবন-জীবিকা বাঁচাও কমিটি’। এসব কর্মজীবীরা আগের মতো কর্মস্থল ফিরে পেতে এই আন্দোলন করছেন।
পেট্রাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পেট্রাপোল ‘জীবন-জীবিকা বাঁচাও’ কমিটি প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে পূর্বের মতো হ্যান্ডেলিং কুলি এবং পরিবহন কুলিদের কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। ট্রাকচালক ও সহকারীদের পায়ে হেঁটে পেট্রাপোল ও বেনাপোলের মধ্যে যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া মুদ্রা বিনিময়কারী, পরিবহন, ক্লিয়ারিং ও ফরওয়াডিং এজেন্ট, ট্রাকচালক ও সহকারীদের ওপর বিএসএফ ও অন্যান্য এজেন্সির নিরাপত্তার নামে অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।’
বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আসা রপ্তানি পণ্যের ট্রাক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালির ব্যবস্থা করতে হবে এবং আধুনিকতার অজুহাতে শ্রমিকদের কর্মহীন করা চলবে না। এসব দাবি নিয়ে ভারতীয় প্রশাসন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা সমগ্র পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিকদের স্বার্থে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান।