দীর্ঘ ২০ বছর আগে জমিজমা সব নদীগর্ভে চলে যায়। বসতবাড়ি হারিয়ে কেউ রাস্তায় কেউ অন্যের গাছতলায় পরিত্যক্ত ভিটায় কিংবা একেবারে নির্জন কোনো বাগানে ঘর তুলে নিয়েছিলেন আশ্রয়। এরপরও আশা হারাননি তারা। বুক ভরা আশা নিয়ে কাটিয়েছেন দিন।
অবশেষে ২০ বছর পর তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। জেগে ওঠা চরে জমি পেলেন মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার পদ্মাপাড়ের হাজারো মানুষ। শুরু হয়েছে চাষাবাদ।
স্থানীয়রা জানায়, টংগিবাড়ীর হাসাইল, পাঁচগাও ইউনিয়ন এবং লৌহজংয়ের কলমা ইউনিয়নের বিশাল জমি প্রায় ২০ বছর আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙনের পরে বিত্তশালী পরিবারগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লেও গরিব-অসহায় পরিবারগুলোর ঠাঁই হয় বিভিন্ন রাস্তার পাশে ও অন্যের পরিত্যক্ত বাগানের ভিটায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টংগিবাড়ী উপজেলার পাচগাঁও ইউনিয়নের কুকরাদী, গারুরগাও এবং পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের ধাইদা, বন্দেগাঁও, বহর, ডহুরী গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পদ্মার বুক চিরে জেগে উঠেছে তিন কিলোমিটারের বেশি প্রশস্ত ও প্রায় আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিস্তীর্ণ চর।
আর ওই চরে এখন চলছে চাষাবাদ। চরের উঁচু জমিগুলোতে সরিষা আর আলু আবাদ করা হয়েছে আর নিচু জমিগুলোতে চলছে ধান চাষ। উঁচু জমিগুলোতে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। নিচু জমিগুলোতে সরিষা ফুল এখনো ঝড়েনি। মাঠজুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষা ফুল।
ওই চরের সরিষা চাষি কাশেম ব্যাপারী বলেন, নদীতে জমি হারিয়ে ২০ বছর নদীর পাশের একটা গাছ তলায় থেকেছি। দুইটি মেয়ে আমার। বড় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেতে হতো এতদিন । এখন নিজের জমি জেগে উঠেছে। জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আমি এখন অনেক খুশি আর মানুষের কাছে হাত পাততে হবে না।
একই এলাকার গরু পালনকারী আবুল হোসেন বলেন, আগে অনেক দূরে নদীর ওপার গিয়ে গরুর জন্য ঘাস কেটে আনতে হতো। কিন্তু নতুন চর ওঠায় আমরা এখন চর থেকেই ঘাস পাচ্ছি।
ইউপি সদস্য আলি আকবর জানান, চরে জমি জেগে ওঠায় এ এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। তারা এখানে ফসল উৎপাদন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর জেগে ওঠা চরে সরিষা, আলু, মরিচ ভালো হয়েছে।
টংগিবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, টংগিবাড়ীতে এ বছর ৯২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছি।