মেহেরপুরে আলুর বাম্পার ফলনেও হতাশ এলাকার চাষীরা। ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। কখনো উৎপাদন ও বিক্রি খরচ সমান হচ্ছে আবার কখনো বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার লোকসানের মুখে এলাকার কয়েক হাজার চাষী। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে চলতি বছর মেহেরপুরে প্রায় ৬শ ৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১শ ৫০ হেক্টর বেশি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এক বিঘা জমিতে আলুর ফলন হয়েছে প্রায় ১শ থেকে ১শ ২০ মন। কিন্তু দাম না পেয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে চাষিরা। বিঘা প্রতি ৩২ থেকে ৩৬ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। এলাকার ফড়িয়ারা চাষীদের কাছ থেকে আলু কিনছে ৮-৯ টাকা কেজি দরে। আলুর ফলন বেশি হওয়ায় মেহেরপুরের ২টি কোল্ড স্টোরেজ এ জায়গা না পেয়ে লোকসান হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে চাষীদের। এছাড়াও বস্তা প্রতি ২শ ৩০ টাকা খরচে কোল্ড স্টোরেজ এ রাখতে অনেক চাষীই নারাজ।
মেহেরপুরের আশরাফপুর গ্রামের আলুচাষী আহসান আলী জানান, এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে হাজার টাকারও বেশী খরচ করে ৭ বিঘা আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে পরিবহণ খরচ বাদ দিয়ে মণ প্রতি দাম পাচ্ছি মাত্র ৩২০ টাকা। যেখানে বীজ কিনতেই খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করে এখন বিপাকে পড়ে গেছি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের আলু চাষী আশরাফুল আলম রবি বলেন, গত বছর লাভ হওয়ায় এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। কিন্তু ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও কোল্ড স্টোরেজ এ জায়গা পাবো কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত সরবরাহ ও চাষের কারণেই আলুর বাজারদর এতটা কমে গেছে। এদিকে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগও নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। মেহেরপুর বড় বাজারের আড়তদার কাসেম আলী ও আজাদ ভান্ডারের মালিক মিজান জানান, বর্তমানে আলুর পাইকারি দাম ৮-৯ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১-১২ টাকায়। চলতি বছর মেহেরপুরে আলুর আবাদ বেশি হয়েছে। তাই দাম কমে যাচ্ছে।
মেহেরপুরে ৩টি কোল্ড স্টোরেজ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ। তিনি বলেন, মেহেরপুরের মাটি অনেক উর্বর। চলতি বছরে আলুর আবাদ অনেক বেশী হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর বাজারে দাম ভালো থাকায় আলু চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন এলাকার চাষীরা। তবে সংরক্ষনের আরও সুব্যাবস্থা থাকলে অন্য সিজনে লাভজনক দামে আলু বিক্রি করতে পারতো চাষীরা।