করোনা মহামারির এই সময়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি সরকার মানুষের জীবিকা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, গৃহায়ণ এবং কোভিড-১৯ টিকার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (০২ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন তিনি। প্রাণঘাতী করোনা মহামারির কারণে চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য উন্নয়ন কাজের চেয়ে সরকার খাদ্য, গৃহায়ণ এবং ভ্যাকসিনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ যেন খাদ্য, বাসস্থান এবং চিকিৎসায় কোনো কষ্ট না পায়। জনগণ যাতে সহজভাবে জীবন-জীবিকা চালিয়ে যেতে পারে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত টিকা দিতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন আমরা কিনেছি, সামনে আরও নিতে হবে। ১৭ কোটির মতো আমাদের মানুষ। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত টিকা দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন। এ জন্য আমাদের টাকা রাখতে হবে। আরও ভ্যাকসিন কিনতে হবে। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট-বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে—একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি। বাজেট-বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। প্রকল্প পরিচালকদের এলাকায় থাকার নির্দেশনা: সরকারের হাতে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে একই ব্যক্তিকে যেন একাধিক প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব না দেওয়া হয়, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈনিতক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী। এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাজের গতি বাড়াতে প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে। সেই সঙ্গে একাধিক প্রকল্পে একজন পরিচালক নিয়োগ করা যাবে না। একটি প্রকল্পে একজন প্রকল্প পরিচালক থাকবেন। তাকে অন্য কোনো প্রকল্পে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সচিব জয়নুল বারী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতেও তাগাদা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্পের নির্ধারিত যে সময়, সেই সময়ের মধ্যেই প্রকল্প অবশ্যই শেষ করতে হবে। এছাড়া যেহেতু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাই প্রকল্পের গতি বাড়াতেই হবে। দেশে করোনাভাইরাস ( কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার এখন গত কয়েকমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। প্রায় সব কার্যক্রমই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেদিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান সচিব। সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, কোনোভাবেই খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে দেওযা যাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যেন সংকট তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বেশি থাকার সময় গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই সংকটের মধ্যে পড়েছিল। আমরা সে তুলনায় ভালো করেছি। এই অবস্থান ধরে রাখতে হবে। এর আগে, মঙ্গলবার এনইসি বৈঠকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তার অংশ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি এই অর্থবছরের মূল এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ হাজার টাকা। সংশোধিত এডিপিতে সরকারি বরাদ্দের অংশে কোনো পরিবর্তন না এলেও বৈদেশিক অংশের ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন: চলতি অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তবে মূল এডিপি থেকে বৈদেশিক অংশের ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ হাজার টাকা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা সচিব ফজলুল বারী। এনইসি সম্মেলন কক্ষে এসময় উপস্থিত ছিলেন বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায় বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন সেক্টর। এই খাতে ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ সেক্টরে ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধির জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা ও ধর্ম সেক্টরে মোট ২৪ হাজার ৫৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ সেক্টরে বরাদ্দ ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়নের ও অধিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ২৮৯ কোটি ৭০ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য পুষ্টি জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা; বিজ্ঞান, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সেক্টরে ১১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; কৃষি সেক্টরে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা; পানিসম্পদ সেক্টরে ৬ হাজার ৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং শিল্প সেক্টরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা সচিব বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থ বছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৫টি। এর মধ্যে নতুন অনুমোদিত ১৭২টি প্রকল্প এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি হতে বাদ পড়া ২৮টি প্রকল্প। এছাড়াও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ১০১টি প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে আলাদা তালিকা হিসাবে বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে ৪৮৯টি প্রকল্প বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তভুক্ত করা হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত ১৩০টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ ১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ২ হাজার কোটি টাকা: চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা (১ হাজার ৯৩০ কোটি ৪০ লাখ টাকা)। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ আছে ৩৩ হাজার ৩২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সেখান থেকে কাঁটছাট করে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৩৯১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
০৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
খাদ্যও টিকায় গুরুত্ব
-
নিজস্ব প্রতিবেদক :
- প্রকাশিত : ১২:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১
- 38
ট্যাগ :
জনপ্রিয়