আম্ফানের পর দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেলেও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ চুইয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে রাখে। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চঘাট থেকে পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার পাউবোর বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। বাঁধটিতে রিং বাঁধ দেওয়া হলেও আজও স্থায়ী সমাধান হয়নি। এলাকাবাসীর আশঙ্কা জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কার কাজ না করলে যে কোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হবে।
স্থানীয় মত্স্য চাষি নাসির জানান, গত বছর আম্ফানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তার ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো সে ক্ষতি তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি লিজ (হারি) নিয়ে ঘের (মত্স্য চাষ) করেন। এবার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তাকে চরম ক্ষতিতে পড়তে হবে।পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের পবনা রিংবাঁধের স্লোভে বসবাসকারী দেবাশীষ সানা বলেন, দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় বাঁধের বেহাল দশা। জোয়ার একটু বেশি হলে বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের জল ভেতরে প্রবেশ করে। বাঁধ সংস্কার করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক জন জানান, বাঁধ মেরামতের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাঁধের সংস্কার কাজ করতে গড়িমসি করছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে আবারও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চঘাট থেকে পবনা ক্লোজার পর্যন্ত বাঁধ খারাপ আছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আশা করি তাড়াতাড়ি সংস্কার কাজ শুরু হবে।
পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, দশালিয়ার সংস্কার কাজটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভের (জাইকা) দায়িত্বে। তারা কাজ করতে দেরি করছে। এ কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সাপোর্টিং কাজ চলছে। আশা করি, জাইকা তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে ফসলহানিসহ সাদা মাছ ও অসংখ্য চিংড়ি ঘের ভেসে যায়।