ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে খুলনার পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে সোলাদানা ও লতা ইউনিয়ন সহ পৌর সদরের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবারো নতুন করে প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েকটি গ্রামের শত শত পরিবার। এর আগে বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে ১০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধ মেরামত ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান গাজী জানান, বুধবার সোলাদানা ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে সোলাদানা বাজার, ৪টি আবাসন সহ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারে হরিখালী এলাকার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার নদীর পানি কয়েক ফুট বেশি বৃদ্ধি পায়। এতে লতা ইউনিয়নের কাঠামারী এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। সিপিপি টিম লিডার ইব্রাহীম সানা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানি উপচে বোয়ালিয়া ব্রিজ সংলগ্ন রাড়–লী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে লবণ পানি প্রবেশ করে। এছাড়া এ ইউনিয়নের মালোপাড়ায় পূর্বের স্থানে নতুনভাবে ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একই ভাবে কপিলমুনি ইউনিয়নের আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন পদ্মপুকুর এলাকার বাঁধ নতুনভাবে ভেঙ্গে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। পৌরসভার শহর রক্ষা বাঁধ উপচে থানার সামনে বঙ্গবন্ধু চত্বর সহ পৌর বাজারের কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়ে। দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৮৬ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৬৬০ হেক্টর চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে ১ কোটি ১৫লক্ষ টাকার মৎস্য ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত এলাকায় ভেঙ্গে পড়েছে পয়োনিস্কাসন ব্যবস্থা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার। সোলাদানা ইউনিয়নের কয়েকটি আবাসন প্রকল্পের কয়েকশ পরিবার বর্তমানে পানির সাথে বসবাস করছে। এখানকার রাস্তা ঘাট, পুকুর জলাশয়, নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দারা মাণবেতর জীবন যাপন করছে। পতন আবাসনের সালমা বেগম জানান, আমাদের জীবন ব্যবস্থা এখন জোয়ার-ভাটার সাথে ওঠা-নামা করছে। সিরাজুল ইসলাম জানান, জোয়ার হলেই ঘরের ভিতর ২ থেকে ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। আমরা সরকারের কাছে কোনো ত্রাণ চাই না, আমাদের দাবী আমাদের বাঁধগুলো টেকসই করা হোক। পাইকগাছা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাড. প্রশান্ত মন্ডল জানান, টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য এ জনপদের মানুষ যুগ যুগ ধরে আকুতি জানিয়ে আসলেও অদ্যাবধি ওয়াপদার বাঁধ রক্ষায় কেউ এগিয়ে না আসায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে এমনিভাবে উপকূলীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে জান-মাল ও সম্পদের। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ তদারকি ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানার ওসি এজাজ শফী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস। তিনি জানান, বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বুধবার অনেক এলাকার বাঁধ মেরামতও করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারে কয়েকটি এলাকা নতুনভাবে প্লাবিত হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়। তবে আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবো।
০১:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ
-
মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা
- প্রকাশিত : ১২:০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১
- 36
ট্যাগ :
জনপ্রিয়