যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত তিনদিনের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তিন শতাধিক বসতভিটাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নদী তীরবর্তী মানুষেরা তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও নদীভাঙন রোধে কোনো কাজ শুরু হয়নি আজও।
সরেজমিনে ভাঙন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, জেলার এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ থেকে শাহজাদপুরের কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীতীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন। গত তিনদিনে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল ও হাট পাচিল, একই উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পাকরতোলা ও এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণ গ্রামে শুরু হয়েছে ভাঙন। ইতোমধ্যেই তিন শতাধিক বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিতরা সহায়-সম্বল হারিয়ে বাড়িঘর ভেঙে রাস্তার পাশে বা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিচ্ছে। পরিবারের নারী-শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবযাপন করছেন ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া মানুষেরা।তাদের অভিযোগ, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ থেকে শাহজাদপুরের কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীতীরবর্তী এলাকা বরাবরই অরক্ষিত। প্রতিবছরই এই এলাকাগুলোতে দেখা দেয় নদীভাঙন, নিঃস্ব হয় মানুষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যথারীতি ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে বারবার নদীভাঙন বন্ধে দ্রুত কাজ শুরু হবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও।
নদীভাঙন কবলিত পাচিল গ্রামের কালাম ফকির বলেন, পৈতৃক সূত্রে ১১ বিঘা ফসলি জমি ও তিন বিঘার একটি বসতবাড়ি পেয়েছিলাম। বাড়িতে অন্তত ১৫টি দুধেল গাভী ছিল। গত কয়েক বছর যাবৎ ভাঙনে সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শনিবার আমার শেষ সম্বল ৪০ কাঠার ফসলি জমি আর বসতভিটা একসঙ্গে ভাঙতে আরম্ভ করেছে। ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার ঢালে রেখেছি, নিঃস্ব হয়ে পথে নেমে গেলাম।
তিনি আরো বলেন, তিন বছর আগে আমার জমি যখন ভাঙা শুরু হয় তখন থেকেই শুনছি নদীতে বাঁধ দেয়া হবে, কিন্তু আজও কোনো কাজ শুরু হলো না। অথচ আমার সব শেষ হয়ে গেল।
এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামের ষাটোধ্র্ব বৃদ্ধ আবুল সরকার বলেন, কিছুদিন আগে স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী এসে বলে গেল এই এলাকার আর এক চাপ জমিও নদীতে যেতে দেওয়া হবে না। অতিদ্রুত বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। অথচ গত তিনদিনে তিন শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশ বিঘা জসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। ভাঙন বন্ধ করতে কোনো কাজ শুরুতো দূরের কথা কেউ খোঁজখবর নিতেও আসেনি।
জালালপুরের পাকরতোলা গ্রামের চায়না বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল কৈজুরির পাচিলে। সেখানে ভাঙনে আমাদের বসতভিটা নদীতে চলে যাওয়ায় পাকরতোল এসে এক আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলেছি। এখন এই বাড়িও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। দুবছর আগেও গোয়ালভরা গরু, গোলাভরা ধান ছিল, এখন আমরা নিঃস্ব। সরকার কোনো সহযোগিতা না করলে আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্স এন) শফিকুল ইসলাম জানান, নদীতীর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সাড়ে ছয়শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুতই অনুমোদন হবে। অনুমোদনের পর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে এই এলাকায় আর ভাঙন থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের পরামর্শক্রমে ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে চর কেটে নদীর স্রোত পরিবর্তনের জন্য ২৬ ইঞ্চি একটি ড্রেজার আনা হচ্ছে। ড্রেজারটি পৌঁছালে দ্রুত চর কেটে দেওয়া হবে, এতে ভাঙন থেমে যাবে বলে আশা করছি।